‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
![]() |
অপরিচিতা |
অপরিচিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজ আমার বয়স সাতাশ মাত্র। এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যের হিসাবে বড়, না গুণের হিসাবে। তবু ইহার একটু বিশেষ মূল্য আছে। ইহা সেই ফুলের মতো যাহার বুকের উপরে ভ্রমর আসিয়া বসিয়াছিল, এবং সেই পদক্ষেপের ইতিহাস তাহার জীবনের মাঝখানে ফলের মতো গুটি ধরিয়া উঠিয়াছে।
সেই ইতিহাসটুকু আকারে ছোটো, তাহাকে ছোটো করিয়াই লিখিব। ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাঁহারা ইহার রস বুঝিবেন।
কলেজে যতগুলো পরীক্ষা পাস করিবার সব আমি চুকাইয়াছি। ছেলেবেলায় আমার সুন্দর চেহারা লইয়া পণ্ডিতমশায় আমাকে শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সহিত তুলনা করিয়া, বিদ্রূপ করিবার সুযোগ পাইয়াছিলেন। ইহাতে তখন বড়ো লজ্জা পাইতাম; কিন্তু বয়স হইয়া এ কথা ভাবিয়াছি, যদি জন্মান্তর থাকে তবে আমার মুখে সুরূপ এবং পণ্ডিতমশায়দের মুখে বিদ্রূপ আবার যেন অমনি করিয়াই প্রকাশ পায়।
আমার পিতা এক কালে গরিব ছিলেন। ওকালতি করিয়া তিনি প্রচুর টাকা রোজগার করিয়াছেন, ভোগ করিবার সময় নিমেষমাত্রও পান নাই। মৃত্যুতে তিনি যে হাঁফ ছাড়িলেন সেই তাঁর প্রথম অবকাশ।
আমার তখন বয়স অল্প। মার হাতেই আমি মানুষ। মা গরিবের ঘরের মেয়ে; তাই, আমরা যে ধনী এ কথা তিনিও ভোলেন না, আমাকে ভুলিতে দেন না। শিশুকালে আমি কোলে কোলেই মানুষ-বোধ করি, সেইজন্য শেষ পর্যন্ত আমার পুরাপুরি বয়সই হইল না। আজও আমাকে দেখিলে মনে হইবে, আমি অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোটো ভাইটি।
আমার আসল অভিভাবক আমার মামা। তিনি আমার চেয়ে বড়োজোর বছর ছয়েক বড়। কিন্তু ফল্গুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুষিয়া লইয়াছেন। তাঁহাকে না খুঁড়িয়া এখানকার এক গণ্ডুষও রস পাইবার জো নাই। এই কারণে কোনো-কিছুর জন্যই আমাকে কোনো ভাবনা ভাবিতেই হয় না।
কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন, আমি সৎপাত্র। তামাকটুকু পর্যন্ত খাই না। ভালোমানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই, তাই আমি নিতান্ত ভালোমানুষ। মাতার আদেশ মানিয়া চলিবার ক্ষমতা আমার আছে- বস্তুত, না মানিবার ক্ষমতা আমার নাই। অন্তঃপুরের শাসনে চলিবার মতো করিয়াই আমি প্রস্তুত হইয়াছি, যদি কোনো কন্যা স্বয়ম্বরা হন তবে এই সুলক্ষণটি স্মরণ রাখিবেন।
অনেক বড়ো ঘর হইতে আমার সম্বন্ধ আসিয়াছিল। কিন্তু মামা, যিনি পৃথিবীতে আমার ভাগ্যদেবতার প্রধান এজেন্ট, বিবাহ সম্বন্ধে তাঁর একটা বিশেষ মত ছিল। ধনীর কন্যা তাঁর পছন্দ নয়। আমাদের ঘরে যে মেয়ে আসিবে সে মাথা হেঁট করিয়া আসিবে, এই তিনি চান। অথচ টাকার প্রতি আসক্তি তাঁর অস্থিমজ্জায় জড়িত। তিনি এমন বেহাই চান যাহার টাকা নাই অথচ যে টাকা দিতে কসুর করিবে না। যাহোক শোষণ করা চলিবে অথচ বাড়িতে আসিলে গুড়গুড়ির পরিবর্তে বাঁধা হুঁকায় তামাক দিলে যাহার নালিশ খাটিবে না।
আমার বন্ধু হরিশ কানপুরে কাজ করে। সে ছুটিতে কলিকাতায় আসিয়া আমার মন উতলা করিয়া দিল। সে বলিল, “ওহে, মেয়ে যদি বল একটি খাসা মেয়ে আছে।”
কিছুদিন পূর্বেই এমএ পাস করিয়াছি। সামনে যত দূর পর্যন্ত দৃষ্টি চলে ছুটি ধূ ধূ করিতেছে; পরীক্ষা নাই, উমেদরি নাই, চাকরি নাই; নিজের বিষয় দেখিবার চিন্তাও নাই, শিক্ষাও নাই, ইচ্ছাও নাই থাকিবার মধ্যেও ভিতরে আছেন মা এবং বাহিরে আছেন মামা।
এই অবকাশের মরুভূমির মধ্যে আমার হৃদয় তখন বিশ্বব্যাপী নারীরূপের মরীচিকা দেখিতেছিল-আকাশে তাহার দৃষ্টি, বাতাসে তাহার নিঃশ্বাস, তরুমর্মরে তাহার গোপন কথা।
এমন সময় হরিশ আসিয়া বলিল, “মেয়ে যদি বল, তবে-”। আমার শরীর-মন বসন্তবাতাসে বকুলবনের নবপল্লবরাশির মতো কাঁপিতে কাঁপিতে আলোছায়া বুনিতে লাগিল। হরিশ মানুষটা ছিল রসিক, রস দিয়া বর্ণনা করিবার শক্তি তাহার ছিল, আর আমার মন ছিল তৃষার্ত।
আমি হরিশকে বলিলাম, “একবার মামার কাছে কথাটা পাড়িয়া দেখো।”
হরিশ আসর জমাইতে অদ্বিতীয়। তাই সর্বত্রই তাহার খাতির। মামাও তাহাকে পাইলে ছাড়িতে চান না। কথাটা তাঁর বৈঠকে উঠিল। মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাঁহার কাছে গুরুতর। বাপের অবস্থা তিনি যেমনটি চান তেমনি। এক কালে ইহাদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। এখন তাহা শূন্য বলিলেই হয়, অথচ তলায় সামান্য কিছু বাকি আছে। দেশে বংশমর্যাদা রাখিয়া চলা সহজ নয় বলিয়া ইনি পশ্চিমে গিয়া বাস করিতেছেন। সেখানে গরিব গৃহস্থের মতোই থাকেন। একটি মেয়ে ছাড়া তাঁর আর নাই। সুতরাং তাহারই পশ্চাতে লক্ষ্মীর ঘটটি একেবারে উপুড় করিয়া দিতে দ্বিধা হইবে না।
এসব ভালো কথা। কিন্তু, মেয়ের বয়স যে পনেরো, তাই শুনিয়া মামার মন ভার হইল। বংশে তো কোনো দোষ নাই? না, দোষ নাই- বাপ কোথাও তাঁর মেয়ের যোগ্য বর খুঁজিয়া পান না। একে তো বরের হাট মহার্ঘ, তাহার পরে ধনুক-ভাঙা পণ, কাজেই বাপ কেবলই সবুর করিতেছেন- কিন্তু মেয়ের বয়স সবুর করিতেছে না।
যাই হোক, হরিশের সরস রসনার গুণ আছে। মামার মন নরম হইল। বিবাহের ভূমিকা-অংশটা নির্বিঘ্নে সমাধা হইয়া গেল। কলিকাতার বাহিরে বাকি যে পৃথিবীটা আছে সমস্তটাকেই মামা আন্ডামান দ্বীপের অন্তর্গত বলিয়া জানেন। জীবনে একবার বিশেষ কাজে তিনি কোন্নগর পর্যন্ত গিয়েছিলেন। মামা যদি মনু হইতেন তবে তিনি হাবড়ার পুল পার হওয়াটাকে তাঁহার সংহিতায় একেবারে নিষেধ করিয়া দিতেন। মনের মধ্যে ইচ্ছা ছিল, নিজের চোখে মেয়ে দেখিয়া আসিব। সাহস করিয়া প্রস্তাব করিতে পারিলাম না।
কন্যাকে আশীর্বাদ করিবার জন্য যাহাকে পাঠানো হইল সে আমাদের বিনুদাদা, আমার পিসতুতো ভাই। তাহার মতো রুচি এবং দক্ষতার 'পরে আমি ষোলো-আনা নির্ভর করিতে পারি। বিনুদা ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, “মন্দ নয় হে! খাঁটি সোনা বটে!”
বিনুদাদার ভাষাটা অত্যন্ত আঁট। যেখানে আমরা বলি ‘চমৎকার’ সেখানে তিনি বলেন ‘চলনসই’। অতএব বুঝিলাম, আমার ভাগ্যে প্রজাপতির সঙ্গে পঞ্চশরের কোনো বিরোধ নাই।
২
বলা বাহুল্য, বিবাহ-উপলক্ষে কন্যাপক্ষকেই কলিকাতায় আসিতে হইল। কন্যার পিতা শম্ভুনাথবাবু হরিশকে কত বিশ্বাস করেন তাহার প্রমাণ এই যে, বিবাহের তিন দিন পূর্বে তিনি আমাকে প্রথম চক্ষে দেখেন এবং আশীর্বাদ করিয়া যান। বয়স তাঁর চল্লিশের কিছু এপারে বা ওপারে। চুল কাঁচা, গোঁফে পাক ধরিতে আরম্ভ করিয়াছে মাত্র। সুপুরুষ বটে। ভিড়ের মধ্যে দেখিলে সকলের আগে তাঁর উপরে চোখ পড়িবার মতো চেহারা।
আশা করি আমাকে দেখিয়া তিনি খুশি হইয়াছিলেন। বোঝা শক্ত, কেননা তিনি বড়ই চুপচাপ। যে দুটি-একটি কথা বলেন যেন তাহাতে পুরা জোর দিয়া বলেন না। মামার মুখ তখন অনর্গল ছুটিতেছিল- ধনে মানে আমাদের স্থান যে শহরের কারও চেয়ে কম নয়, সেইটেকেই তিনি নানা প্রসঙ্গে প্রচার করিতেছিলেন। শম্ভুনাথবাবু এ কথায় একেবারে যোগই দিলেন না- কোনো ফাঁকে একটা হুঁ বা হ্যাঁ কিছুই শোনা গেল না। আমি হইলে দমিয়া যাইতাম, কিন্তু মামাকে দমানো শক্ত। তিনি শম্ভুনাথবাবুর চুপচাপ ভাব দেখিয়া ভাবিলেন, লোকটা নিতান্ত নির্জীব, একেবারে কোনো তেজ নাই। বেহাই-সম্প্রদায়ের আর যাই থাক, তেজ থাকাটা দোষের, অতএব মামা মনে মনে খুশি হইলেন। শম্ভুনাথবাবু যখন উঠিলেন তখন মামা সংক্ষেপে উপর হইতেই তাঁকে বিদায় করিলেন, গাড়িতে তুলিয়া দিতে গেলেন না।
পণ সম্বন্ধে দুই পক্ষে পাকাপাকি কথা ঠিক হইয়া গিয়াছিল। মামা নিজেকে অসামান্য চতুর বলিয়াই অভিমান করিয়া থাকেন। কথাবার্তায় কোথাও তিনি কিছু ফাঁক রাখেন নাই। টাকার অঙ্ক তো স্থির ছিলই, তারপরে গহনা কত ভরির এবং সোনা কত দরের হইবে সেও একেবারে বাঁধাবাঁধি হইয়া গিয়াছিল। আমি নিজে এসমস্ত কথার মধ্যে ছিলাম না; জানিতাম না দেনা-পাওনা কী স্থির হইল। মনে জানিতাম, এই স্থূল অংশটাও বিবাহের একটা প্রধান অংশ, এবং সে অংশের ভার যার উপরে তিনি এক কড়াও ঠকিবেন না। বস্তুত, আশ্চর্য পাকা লোক বলিয়া মামা আমাদের সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রী। যেখানে আমাদের কোনো সম্বন্ধ আছে সেখানে সর্বত্রই তিনি বুদ্ধির লড়াইয়ে জিতিবেন, এ একেবারে ধরা কথা, এই জন্য আমাদের অভাব না থাকিলেও এবং অন্য পক্ষের অভাব কঠিন হইলেও জিতিব, আমাদের সংসারের এই জেদ-ইহাতে যে বাঁচুক আর যে মরুক।
গায়ে-হলুদ অসম্ভব রকম ধুম করিয়া গেল। বাহক এত গেল যে তাহার আদম-শুমারি করিতে হইলে কেরানি রাখিতে হয়। তাহাদিগকে বিদায় করিতে অপর পক্ষকে যে নাকাল হইতে হইবে, সেই কথা স্মরণ করিয়া মামার সঙ্গে মা একযোগে বিস্তর হাসিলেন।
ব্যান্ড, বাঁশি, শখের কন্সর্ট প্রভৃতি যেখানে যতপ্রকার উচ্চ শব্দ আছে সমস্ত একসঙ্গে মিশাইয়া বর্বর কোলাহলের মত্ত হস্তী দ্বারা সংগীত সরস্বতীর পদ্মবন দলিত বিদলিত করিয়া আমি তো বিবাহ-বাড়িতে গিয়া উঠিলাম। আংটিতে হারেতে জরি-জহরতে আমার শরীর যেন গহনার দোকান নিলামে চড়িয়াছে বলিয়া বোধ হইল। তাঁহাদের ভাবী জামাইয়ের মূল্য কত সেটা যেন কতক পরিমাণে সর্বাঙ্গে স্পষ্ট করিয়া লিখিয়া ভাবী শ্বশুরের সঙ্গে মোকাবিলা করিতে চলিয়াছিলাম।
মামা বিবাহ-বাড়িতে ঢুকিয়া খুশি হইলেন না। একে তো উঠানটাতে বরযাত্রীদের জায়গা সংকুলান হওয়াই শক্ত, তাহার পরে সমস্ত আয়োজন নিতান্ত মধ্যম রকমের। ইহার পরে শম্ভুনাথবাবুর ব্যবহারটাও নেহাত ঠাণ্ডা। তাঁর বিনয়টা অজস্র নয়। মুখে তো কথাই নাই কোমরে চাদর বাঁধা, গলা ভাঙা, টাক-পড়া, মিশ-কালো এবং বিপুল-শরীর তাঁর একটি উকিল-বন্ধু যদি নিয়ত হাত জোড় করিয়া মাথা হেলাইয়া, নম্রতার স্মিতহাস্যে ও গদগদ বচনে কন্সর্ট পাটির করতাল-বাজিয়ে হইতে শুরু করিয়া বরকর্তাদের প্রত্যেককে বার বার প্রচুররূপে অভিষিক্ত করিয়া না দিতেন তবে গোড়াতেই এটা এস্পার-ওস্পার হইত।
আমি সভায় বসিবার কিছুক্ষণ পরেই মামা শম্ভুনাথবাবুকে পাশের ঘরে ডাকিয়া লইয়া গেলেন। কী কথা হইল জানি না, কিছুক্ষণ পরেই শম্ভুনাথবাবু আমাকে আসিয়া বলিলেন, “বাবাজি, একবার এই দিকে আসতে হচ্ছে।”
ব্যাপারখানা এই। -সকলের না হউক, কিন্তু কোনো কোনো মানুষের জীবনের একটা কিছু লক্ষ্য থাকে। মামার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, তিনি কোনোমতেই কারও কাছে ঠকিবেন না। তাঁর ভয় তাঁর বেহাই তাঁকে গহনায় ফাঁকি দিতে পারেন-বিবাহকার্য শেষ হইয়া গেলে সে ফাঁকির আর প্রতিকার চলিবে না। বাড়িভাড়া সওগাদ লোক-বিদায় প্রভৃতি সম্বন্ধে যেরকম টানাটানির পরিচয় পাওয়া গেছে তাহাতে মামা ঠিক করিয়াছিলেন- দেওয়া-থোওয়া সম্বন্ধে এ লোকটির শুধু মুখের কথার উপর ভর করা চলিবে না। সেইজন্য বাড়ির সেকরাকে সুদ্ধ সঙ্গে আনিয়াছিলেন। পাশের ঘরে গিয়া দেখিলাম, মামা এক তক্তপোশে এবং সেকরা তাহার দাঁড়িপাল্লা কষ্টিপাথর প্রভৃতি লইয়া মেঝেয় বসিয়া আছে।
শম্ভুনাথবাবু আমাকে বলিলেন, “তোমার মামা বলিতেছেন বিবাহের কাজ শুরু হইবার আগেই তিনি কনের সমস্ত গহনা যাচাই করিয়া দেখিবেন, ইহাতে তুমি কী বল।”
আমি মাথা হেঁট করিয়া চুপ করিয়া রহিলাম।
মামা বলিলেন, “ও আবার কী বলিবে। আমি যা বলিব তাই হইবে।”
শম্ভুনাথবাবু আমার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সেই কথা তবে ঠিক? উনি যা বলিবেন তাই হইবে? এ সম্বন্ধে তোমার কিছুই বলিবার নাই?”
আমি একটু ঘাড়-নাড়ার ইঙ্গিতে জানাইলাম, এসব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার।
“আচ্ছা তবে বোসো, মেয়ের গা হইতে সমস্ত গহনা খুলিয়া আনিতেছি।” এই বলিয়া তিনি উঠিলেন।
মামা বলিলেন, “অনুপম এখানে কী করিবে। ও সভায় গিয়া বসুক।”
শম্ভুনাথ বলিলেন, “না, সভায় নয়, এখানেই বসিতে হইবে।”
কিছুক্ষণ পরে তিনি একখানা গামছায় বাঁধা গহনা আনিয়া তক্তপোশের উপর মেলিয়া ধরিলেন। সমস্তই তাঁহার পিতামহীদের আমলের গহনা- হাল ফ্যাশনের সূক্ষ্ম কাজ নয়- যেমন মোটা তেমনি ভারী। সেকরা গহনা হাতে তুলিয়া লইয়া বলিল, “এ আর দেখিব কী। ইহাতে খাদ নাই-এমন সোনা এখনকার দিনে ব্যবহারই হয় না।”
এই বলিয়া সে মকরমুখা মোটা একখানা বালায় একটু চাপ দিয়া দেখাইল তাহা বাঁকিয়া যায়। মামা তখনই নোটবইয়ে গহনাগুলির ফর্দ টুকিয়া লইলেন, পাছে যাহা দেখানো হইল তাহার কোনোটা কম পড়ে।
হিসাব করিয়া দেখিলেন, গহনা যে পরিমাণ দিবার কথা এগুলি সংখ্যায়, দরে এবং ভারে তার অনেক বেশি। গহনাগুলির মধ্যে একজোড়া এয়ারিং ছিল। শম্ভুনাথ সেইটে সেকরার হাতে দিয়া বলিলেন, “এইটে একবার পরখ করিয়া দেখো।”
সেকরা কহিল, “ইহা বিলাতি মাল, ইহাতে সোনার ভাগ সামান্যই আছে।”
শম্ভুবাবু এয়ারিং জোড়া মামার হাতে দিয়া বলিলেন, “এটা আপনারাই রাখিয়া দিন।”
মামা সেটা হাতে লইয়া দেখিলেন, এই এয়ারিং দিয়াই কন্যাকে তাঁহারা আশীর্বাদ করিয়াছিলেন। মামার মুখ লাল হইয়া উঠিল। দরিদ্র তাঁহাকে ঠকাইতে চাহিবে কিন্তু তিনি ঠকিবেন না এই আনন্দ-সম্ভোগ হইতে বঞ্চিত হইলেন এবং তাহার উপরেও কিছু উপরি-পাওনা জুটিল। অত্যন্ত মুখ ভার করিয়া বলিলেন, "অনুপম, যাও, তুমি সভায় গিয়ে বোসো গে।"
শম্ভুনাথবাবু বলিলেন, “না, এখন সভায় বসিতে হইবে না। চলুন, আগে আপনাদের খাওয়াইয়া দিই।”
মামা বলিলেন, “সে কী কথা। লগ্ন-”
শম্ভুনাথবাবু বলিলেন, "সেজন্য কিছু ভাবিবেন না-এখন উঠুন।”
লোকটি নেহাত ভালোমানুষ-ধরনের, কিন্তু ভিতরে বেশ একটু জোর আছে বলিয়া বোধ হইল। মামাকে উঠিতে হইল। বরযাত্রীদেরও আহার হইয়া গেল। আয়োজনের আড়ম্বর ছিল না। কিন্তু রান্না ভালো এবং সমস্ত বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলিয়া সকলেরই তৃপ্তি হইল।
বরযাত্রীদের খাওয়া শেষ হইলে শম্ভুনাথবাবু আমাকে খাইতে বলিলেন। মামা বলিলেন, “সে কী কথা। বিবাহের পূর্বে বর খাইবে কেমন করিয়া।”
এ সম্বন্ধে মামার কোনো মতপ্রকাশকে তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “তুমি কী বল। বসিয়া যাইতে দোষ কিছু আছে?”
মূর্তিমতী মাতৃ-আজ্ঞা-স্বরূপে মামা উপস্থিত, তাঁর বিরুদ্ধে চলা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি আহারে বসিতে পারিলাম না।
তখন শম্ভুনাথবাবু মামাকে বলিলেন, “আপনাদিগকে অনেক কষ্ট দিয়াছি। আমরা ধনী নই, আপনাদের যোগ্য আয়োজন করিতে পারি নাই, ক্ষমা করিবেন। রাত হইয়া গেছে, আর আপনাদের কষ্ট বাড়াইতে ইচ্ছা করি না। এখন তবে -”
মামা বলিলেন, “তা, সভায় চলুন, আমরা তো প্রস্তুত আছি।”
শম্ভুনাথ বলিলেন, “তবে আপনাদের গাড়ি বলিয়া দিই?”
মামা আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “ঠাট্টা করিতেছেন নাকি।”
শম্ভুনাথ কহিলেন, “ঠাট্টা তো আপনিই করিয়া সারিয়াছেন। ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।”
মামা দুই চোখ এত বড়ো করিয়া মেলিয়া অবাক হইয়া রহিলেন।
শম্ভুনাথ কহিলেন, “আমার কন্যার গহনা আমি চুরি করিব এ কথা যারা মনে করে তাদের হাতে আমি কন্যা দিতে পারি না।”
আমাকে একটি কথা বলাও তিনি আবশ্যক বোধ করিলেন না। কারণ, প্রমাণ হইয়া গেছে, আমি কেহই নই। তারপরে যা হইল সে আমি বলিতে ইচ্ছা করি না। ঝাড়লণ্ঠন ভাঙিয়া-চুরিয়া, জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করিয়া, বরযাত্রের দল দক্ষযজ্ঞের পালা সারিয়া বাহির হইয়া গেল।
বাড়ি ফিরিবার সময় ব্যান্ড রসনচৌকি ও কন্সর্ট একসঙ্গে বাজিল না এবং অভ্রের ঝাড়গুলো আকাশের তারার উপর আপনাদের কর্তব্যের বরাত দিয়া কোথায় যে মহানির্বাণ লাভ করিল সন্ধান পাওয়া গেল না।
৩
বাড়ির সকলে তো রাগিয়া আগুন। কন্যার পিতার এত গুমর! কলি যে চারপোয়া হইয়া আসিল! সকলে বলিল, “দেখি, মেয়ের বিয়ে দেন কেমন করিয়া।” কিন্তু মেয়ের বিয়ে হইবে না এ ভয় যার মনে নাই তার শাস্তির উপায় কি।
মস্ত বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহের আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে। এত বড়ো সৎপাত্রের কপালে এত বড়ো কলঙ্কের দাগ কোন নষ্ট গ্রহ এত আলো জ্বালাইয়া, বাজনা বাজাইয়া, সমারোহ করিয়া আঁকিয়া দিল? বরযাত্রীরা এই বলিয়া কপাল চাপড়াইতে লাগিল যে, “বিবাহ হইল না অথচ আমাদের ফাঁকি দিয়া খাওয়াইয়া দিল- পাকযন্ত্রটাকে সমস্ত অন্নসুদ্ধ সেখানে টান মারিয়া ফেলিয়া দিয়া আসিতে পারিলে তবে আফসোস মিটিত।”
বিবাহের চুক্তিভঙ্গ ও মানহানির দাবিতে নালিশ করিব বলিয়া মামা অত্যন্ত গোল করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। হিতৈষীরা বুঝাইয়া দিল, তাহা হইলে তামাশার যেটুকু বাকি আছে তাহা পুরা হইবে।
বলা বাহুল্য, আমিও খুব রাগিয়াছিলাম। কোনো গতিকে শম্ভুনাথ বিষম জব্দ হইয়া আমাদের পায়ে ধরিয়া আসিয়া পড়েন, গোঁফের রেখায় তা দিতে দিতে এইটেই কেবল কামনা করিতে লাগিলাম।
কিন্তু, এই আক্রোশের কালো রঙের স্রোতের পাশাপাশি আর একটা স্রোত বহিতেছিল যেটার রঙ একেবারেই কালো নয়। সমস্ত মন যে সেই অপরিচিতার পানে ছুটিয়া গিয়াছিল- এখনো যে তাহাকে কিছুতেই টানিয়া ফিরাইতে পারি না। দেয়ালটুকুর আড়ালে রহিয়া গেল গো। কপালে তার চন্দন আঁকা, গায়ে তার লাল শাড়ি, মুখে তার লজ্জার রক্তিমা, হৃদয়ের ভিতরে কী যে তা কেমন করিয়া বলিব। আমার কল্পলোকের কল্পলতাটি বসন্তের সমস্ত ফুলের ভার আমাকে নিবেদন করিয়া দিবার জন্য নত হইয়া পড়িয়াছিল। হাওয়া আসে, গন্ধ পাই,পাতার শব্দ শুনি- কেবল আর একটিমাত্র পা ফেলার অপেক্ষা-এমন সময়ে সেই এক পদক্ষেপের দূরত্বটুকু এক মুহূর্তে অসীম হইয়া উঠিল!
এতদিন যে প্রতি সন্ধ্যায় আমি বিনুদাদার বাড়িতে গিয়া তাঁহাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছিলাম! বিনুদার বর্ণনার ভাষা অত্যন্ত সংকীর্ণ বলিয়াই তাঁর প্রত্যেক কথাটি স্ফুলিঙ্গের মতো আমার মনের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়া দিয়াছিল। বুঝিয়াছিলাম মেয়েটির রূপ বড়ো আশ্চর্য; কিন্তু না দেখিলাম তাহাকে চোখে, না দেখিলাম তাহার ছবি, সমস্তই অস্পষ্ট হইয়া রহিল। বাহিরে তো সে ধরা দিলই না, তাহাকে মনেও আনিতে পারিলাম না-এইজন্য মন সেদিনকার সেই বিবাহসভার দেয়ালটার বাহিরে ভূতের মতো দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বেড়াইতে লাগিল।
হরিশের কাছে শুনিয়াছি, মেয়েটিকে আমার ফটোগ্রাফ দেখানো হইয়াছিল। পছন্দ করিয়াছে বৈকি। না করিবার তো কোনো কারণ নাই। আমার মন বলে, সে ছবি তার কোনো একটি বাক্সের মধ্যে লুকানো আছে। একলা ঘরে দরজা বন্ধ করিয়া এক-একদিন নিরালা দুপুরবেলায় সে কি সেটি খুলিয়া দেখে না? যখন ঝুঁকিয়া পড়িয়া দেখে তখন ছবিটির উপরে কি তার মুখের দুই ধার দিয়া এলোচুল আসিয়া পড়ে না? হঠাৎ বাহিরে কারও পায়ের শব্দ পাইলে সে কি তাড়াতাড়ি তার সুগন্ধ আঁচলের মধ্যে ছবিটিকে লুকাইয়া ফেলে না?
দিন যায়। একটা বৎসর গেল। মামা তো লজ্জায় বিবাহসম্বন্ধের কথা তুলিতেই পারেন না। মার ইচ্ছা ছিল, আমার অপমানের কথা যখন সমাজের লোকে ভুলিয়া যাইবে তখন বিবাহের চেষ্টা দেখিবেন।
এদিকে আমি শুনিলাম সে মেয়ের নাকি ভালো পাত্র জুটিয়াছিল, কিন্তু সে পণ করিয়াছে বিবাহ করিবে না। শুনিয়া আমার মন পুলকের আবেশে ভরিয়া গেল। আমি কল্পনায় দেখিতে লাগিলাম, সে ভালো করিয়া খায় না; সন্ধ্যা হইয়া আসে, সে চুল বাঁধিতে ভুলিয়া যায়। তার বাপ তার মুখের পানে চান আর ভাবেন, “আমার মেয়ে দিনে দিনে এমন হইয়া যাইতেছে কেন।” হঠাৎ কোনোদিন তার ঘরে আসিয়া দেখেন, মেয়ের দুই চক্ষু জলে ভরা। জিজ্ঞাসা করেন, “মা, তোর কী হইয়াছে বল আমাকে।” মেয়ে তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছিয়া বলে, “কই কিছুই তো হয় নি বাবা।” বাপের এক মেয়ে যে-বড়ো আদরের মেয়ে। যখন অনাবৃষ্টির দিনে ফুলের কুঁড়িটির মতো মেয়ে একেবারে বিমর্ষ হইয়া পড়িয়াছে তখন বাপের প্রাণে আর সহিল না। তখন অভিমান ভাসাইয়া দিয়া তিনি উপর ছুটিয়া আসিলেন আমাদের দ্বারে। তার পরে? তার পরে মনের মধ্যে সেই যে কালো রঙের ধারাটা বহিতেছে সে যেন কালো সাপের মতো রূপ ধরিয়া ফোঁস করিয়া উঠিল। সে বলিল, “বেশ তো, আর একবার বিবাহের আসর সাজানো হোক, আলো জ্বলুক, দেশ-বিদেশের লোকের নিমন্ত্রণ হোক, তার পরে তুমি বরের টোপর পায়ে দলিয়া দলবল লইয়া সভা ছাড়িয়া চলিয়া এসো।” কিন্তু, যে ধারাটি চোখের জলের মতো শুভ্র সে রাজহংসের রূপ ধরিয়া বলিল, “যেমন করিয়া আমি একদিন দময়ন্তীর পুষ্পবনে গিয়াছিলাম, তেমনি করিয়া আমাকে একবার উড়িয়া যাইতে দাও-আমি বিরহিণীর কানে কানে একবার সুখের খবরটা দিয়া আসি গে।” তার পরে? তার পরে দুঃখের রাত পোহাইল, নববর্ষার জল পড়িল, ম্লান ফুলটি মুখ তুলিল-এবারে সেই দেয়ালটার বাহিরে রহিল সমস্ত পৃথিবীর আর সবাই আর ভিতরে প্রবেশ করিল একটিমাত্র মানুষ। তার পরে? তার পরে আমার কথাটি ফুরালো।
৪
কিন্তু, কথা এমন করিয়া ফুরাইল না। যেখানে আসিয়া তাহা অফুরান হইয়াছে সেখানকার বিবরণ একটুখানি বলিয়া আমার এ লেখা শেষ করিয়া দিই।
মাকে লইয়া তীর্থে চলিয়াছিলাম। আমার উপরেই ভার ছিল। কারণ মামা এবারেও হাবড়ার পুল পার হন নাই। রেলগাড়িতে ঘুমাইতেছিলাম। ঝাঁকানি খাইতে খাইতে মাথার মধ্যে নানাপ্রকার এলোমেলো স্বপ্নের ঝুমঝুমি বাজিতেছিল। হঠাৎ একটা কোন স্টেশনে জাগিয়া উঠিলাম। আলোতে অন্ধকার মেশা সেও এক স্বপ্ন। কেবল আকাশের তারাগুলি চিরপরিচিত- আর সবই অজানা অস্পষ্ট; স্টেশনের দীপ-কয়টা খাড়া হইয়া দাঁড়াইয়া আলো ধরিয়া এই পৃথিবীটা যে কত অচেনা এবং যাহা চারিদিকে তাহা যে কতই বহু দূরে তাহাই দেখাইয়া দিতেছে। গাড়ির মধ্যে মা ঘুমাইতেছেন; আলোর নিচে সবুজ পর্দা টানা; তোরঙ্গ বাক্স জিনিসপত্র সমস্তই কে কার ঘাড়ে এলোমেলো হইয়া রহিয়াছে, তাহারা যেন স্বপ্নলোকের উলট-পালট আসবাব, সবুজ প্রদোষের মিটমিটে আলোতে থাকা এবং না-থাকার মাঝখানে কেমন একরকম হইয়া পড়িয়া আছি।
এমন সময়ে সেই অদ্ভুত পৃথিবীর অদ্ভুত রাত্রে কে বলিয়া উঠিল, “শিগগির চলে আয় এই গাড়িতে জায়গা আছে।” মনে হইল, যেন গান শুনিলাম। বাঙালি মেয়ের গলায় বাংলা কথা যে কী মধুর তাহা এমনি করিয়া অসময়ে অজায়গায় আচমকা শুনিলে তবে সম্পূর্ণ বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু, এই গলাটিকে কেবলমাত্র মেয়ের গলা বলিয়া একটি শ্রেণিভুক্ত করিয়া দেওয়া চলে না, এ কেবল একটি মানুষের গলা; শুনিলেই মন বলিয়া ওঠে, “এমন তো আর শুনি নাই।”
চিরকাল গলার স্বর আমার কাছে বড়ো সত্য। রূপ জিনিসটি বড়ো কম নয়, কিন্তু মানুষের মধ্যে যাহা অন্তরতম এবং অনির্বচনীয়, আমার মনে হয় কন্ঠস্বর যেন তারই চেহারা। আমি তাড়াতাড়ি গাড়ির জানালা খুলিয়া বাহিরে মুখ বাড়াইয়া দিলাম, কিছুই দেখিলাম না। প্লাটফর্মের অন্ধকারে দাঁড়াইয়া গার্ড তাহার একচক্ষু লণ্ঠন নাড়িয়া দিল, গাড়ি চলিল; আমি জানলার কাছে বসিয়া রহিলাম। আমার চোখের সামনে কোনো মূর্তি ছিল না, কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে আমি একটি হৃদয়ের রূপ দেখিতে লাগিলাম। সে যেন এই তারাময়ী রাত্রির মতো, আবৃত করিয়া ধরে কিন্তু তাহাকে ধরিতে পারা যায় না। ওগো সুর, অচেনা কন্ঠের সুর, এক নিমেষে তুমি যে আমার চিরপরিচয়ের আসনটির উপরে আসিয়া বসিয়াছ। কী আশ্চর্য পরিপূর্ণ তুমি- চঞ্চল কালের ক্ষুব্ধ হৃদয়ের উপরে ফুলটির মতো ফুটিয়াছ, অথচ তার ঢেউ লাগিয়া একটি পাপড়িও টলে নাই, অপরিমেয় কোমলতায় এতটুকু দাগ পড়ে নাই।
গাড়ি লোহার মৃদঙ্গে তাল দিতে দিতে চলিল; আমি মনের মধ্যে গান শুনিতে শুনিতে চলিলাম। তাহার একটিমাত্র ধুয়া- “গাড়িতে জায়গা আছে।” আছে কি, জায়গা আছে কি। জায়গা যে পাওয়া যায় না, কেউ যে কাকেও চেনে না। অথচ সেই না-চেনাটুকু যে কুয়াশামাত্র, সে যে মায়া, সেটা ছিন্ন হইলেই যে চেনার আর অন্ত নাই। ওগো সুধাময় সুর, যে হৃদয়ের অপরূপ রূপ তুমি, সে কি আমার চিরকালের চেনা নয়। জায়গা আছে আছে-শীঘ্র আসিতে ডাকিয়াছ, শীঘ্রই আসিয়াছি, এক নিমেষও দেরি করি নাই।
রাত্রে ভালো করিয়া ঘুম হইল না। প্রায় প্রতি স্টেশনে একবার করিয়া মুখ বাড়াইয়া দেখিলাম, ভয় হইতে লাগিল যাহাকে দেখা হইল না সে পাছে রাত্রে নামিয়া যায়।
পরদিন সকালে একটা বড়ো স্টেশনে গাড়ি বদল করিতে হইবে। আমাদের ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট-মনে আশা ছিল, ভিড় হইবে না। নামিয়া দেখি, প্লাটফর্মে সাহেবেদের আর্দালি-দল আসবাবপত্র লইয়া গাড়ির জন্য অপেক্ষা করিতেছে। কোন এক ফৌজের বড় জেনারেল সাহেব ভ্রমণে বাহির হইয়াছেন। দুই-তিন মিনিট পরেই গাড়ি আসিল। বুঝিলাম, ফার্স্ট ক্লাসের আশা ত্যাগ করিতে হইবে। মাকে লইয়া কোন গাড়িতে উঠি সে এক বিষম ভাবনায় পড়িলাম। সব গাড়িতেই ভিড়। দ্বারে দ্বারে উঁকি মারিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। এমন সময়ে সেকেন্ড ক্লাসের গাড়ি হইতে একটি মেয়ে আমার মাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, “আপনারা আমাদের গাড়িতে আসুন না- এখানে জায়গা আছে।”
আমি তো চমকিয়া উঠিলাম। সেই আশ্চর্যমধুর কণ্ঠ এবং সেই গানেরই ধুয়া- “জায়গা আছে।” ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করিয়া মাকে লইয়া গাড়িতে উঠিয়া পড়িলাম। জিনিসপত্র তুলিবার প্রায় সময় ছিল না। আমার মতো অক্ষম দুনিয়ায় নাই। সেই মেয়েটিই কুলিদের হাত হইতে তাড়াতাড়ি চলতি গাড়িতে আমাদের বিছানাপত্র টানিয়া লইল। আমার একটা ফটোগ্রাফ তুলিবার ক্যামেরা স্টেশনেই পড়িয়া রহিল-গ্রাহ্যই করিলাম না।
তার পরে-কী লিখিব জানি না। আমার মনের মধ্যে একটি অখণ্ড আনন্দের ছবি আছে-তাহাকে কোথায় শুরু করিব, কোথায় শেষ করিব? বসিয়া বসিয়া বাক্যের পর বাক্য যোজনা করিতে ইচ্ছা করে না।
এবার সেই সুরটিকে চোখে দেখিলাম; তখনো তাহাকে সুর বলিয়াই মনে হইল। মায়ের মুখের দিকে চাহিলাম; দেখিলাম তাঁর চোখে পলক পড়িতেছে না। মেয়েটির বয়স ষোলো কি সতেরো হইবে, কিন্তু নবযৌবন ইহার দেহে মনে কোথাও যেন একটুও ভার চাপাইয়া দেয় নাই। ইহার গতি সহজ, দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের শুচিতা অপূর্ব, ইহার কোনো জায়গায় কিছু জড়িমা নাই।
আমি দেখিতেছি, বিস্তারিত করিয়া কিছু বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। এমন-কি সে যে কী রঙের কাপড় কেমন করিয়া পরিয়াছিল তাহাও ঠিক করিয়া বলিতে পারিব না। এটা খুব সত্য যে, তার বেশে ভূষায় এমন কিছুই ছিল না যেটা তাহাকে ছাড়াইয়া বিশেষ করিয়া চোখে পড়িতে পারে। সে নিজের চারিদিকের সকলের চেয়ে অধিক- রজনীগন্ধার শুভ্র মঞ্জরীর মতো সরল বৃন্তটির উপরে দাঁড়াইয়া, যে গাছে ফুটিয়াছে সে গাছকে সে একেবারে অতিক্রম করিয়া উঠিয়াছে। সঙ্গে দুটি-তিনটি ছোটো ছোটো মেয়ে ছিল, তাহাদিগকে লইয়া তাহার হাসি এবং কথার আর অন্ত ছিল না। আমি হাতে একখানা বই লইয়া সে দিকে কান পাতিয়া রাখিয়াছিলাম। যেটুকু কানে আসিতেছিল সে তো সমস্তই ছেলেমানুষদের সঙ্গে ছেলেমানুষি কথা। তাহার বিশেষত্ব এই যে, তাহার মধ্যে বয়সের তফাত কিছুমাত্র ছিল না-ছোটদের সঙ্গে সে অনায়াসে এবং আনন্দে ছোট হইয়া গিয়াছিল। সঙ্গে কতকগুলি ছবিওয়ালা ছেলেদের গল্পের বই-তাহারই কোনো-একটা বিশেষ গল্প শোনাইবার জন্য মেয়েরা তাহাকে ধরিয়া পড়িল। এ গল্প নিশ্চয় তারা বিশ-পঁচিশ বার শুনিয়াছে। মেয়েদের কেন যে এত আগ্রহ তাহা বুঝিলাম। সেই সুধাকণ্ঠের সোনার কাঠিতে সকল কথা যে সোনা হইয়া ওঠে। মেয়েটির সমস্ত শরীর মন যে একেবারে প্রাণে ভরা, তার সমস্ত চলায় বলায় স্পর্শে প্রাণ ঠিকরিয়া ওঠে। তাই মেয়েরা যখন তার মুখে গল্প শোনে তখন গল্প নয়, তাহাকেই শোনে; তাহাদের হৃদয়ের উপর প্রাণের ঝর্না ঝরিয়া পড়ে। তার সেই উদ্ভাসিত প্রাণ আমার সেদিনকার সমস্ত সূর্যকিরণকে সজীব করিয়া তুলিল; আমার মনে হইল, আমাকে যে প্রকৃতি তাহার আকাশ দিয়া বেষ্টন করিয়াছে সে ঐ তরুণীরই অক্লান্ত অম্লান প্রাণের বিশ্বব্যাপী বিস্তার। পরের স্টেশনে পৌঁছিতেই খাবারওয়ালাকে ডাকিয়া সে খুব খানিকটা চানা-মুঠ কিনিয়া লইল এবং মেয়েদের সঙ্গে মিলিয়া নিতান্ত ছেলেমানুষের মতো করিয়া কলহাস্য করিতে করিতে অসংকোচে খাইতে লাগিল। আমার প্রকৃতি যে জাল দিয়া বেড়া-আমি কেন বেশ সহজে হাসিমুখে মেয়েটির কাছে এই চানা একমুঠা চাহিয়া লইতে পারিলাম না। হাত বাড়াইয়া দিয়া কেন আমার লোভ স্বীকার করিলাম না।
মা ভালো-লাগা এবং মন্দ-লাগার মধ্যে দোমনা হইয়াছিলেন। গাড়িতে আমি পুরুষমানুষ, তবু ইহার কিছুমাত্র সংকোচ নাই, বিশেষত এমন লোভীর মতো খাইতেছে, সেটা ঠিক তাঁর পছন্দ হইতেছিল না; অথচ ইহাকে বেহায়া বলিয়াও তাঁর ভ্রম হয় নাই। তাঁর মনে হইল, এ মেয়ের বয়স হইয়াছে কিন্তু শিক্ষা হয় নাই। মা হঠাৎ কারও সঙ্গে আলাপ করিতে পারেন না। মানুষের সঙ্গে দূরে দূরে থাকাই তাঁর অভ্যাস। এই মেয়েটির পরিচয়
লইতে তাঁর খুব ইচ্ছা, কিন্তু স্বাভাবিক বাধা কাটাইয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। এমন সময়ে গাড়ি একটা বড়ো স্টেশনে আসিয়া থামিল। সেই জেনারেল-সাহেবের একদল অনুসঙ্গী এই স্টেশন হইতে উঠিবার উদ্যোগ করিতেছে। গাড়িতে কোথাও জায়গা নাই। বার বার আমাদের গাড়ির সামনে দিয়া তারা ঘুরিয়া গেল। মা তো ভয়ে আড়ষ্ট, আমিও মনের মধ্যে শান্তি পাইতেছিলাম না।
গাড়ি ছাড়িবার অল্পকাল-পূর্বে একজন দেশি রেলওয়ে কর্মচারী নাম-লেখা দুইখানা টিকিট গাড়ির দুই বেঞ্চের শিয়রের কাছে লটকাইয়া দিয়া আমাকে বলিল, “এ গাড়ির এই দুই বেঞ্চ আগে হইতেই দুই সাহেব রিজার্ভ করিয়াছেন, আপনাদিগকে অন্য গাড়িতে যাইতে হইবে।”
আমি তো তাড়াতাড়ি ব্যস্ত হইয়া দাঁড়াইয়া উঠিলাম। মেয়েটি হিন্দিতে বলিল, “না, আমরা গাড়ি ছাড়িব না।” সে লোকটি রোখ করিয়া বলিল, “না ছাড়িয়া উপায় নাই।”
কিন্তু মেয়েটির চলিষ্ণুতার কোনো লক্ষণ না দেখিয়া সে নামিয়া গিয়া ইংরেজ স্টেশন-মাস্টারকে ডাকিয়া আনিল। সে আসিয়া আমাকে বলিল, “আমি দুঃখিত, কিন্তু-”
শুনিয়া আমি ‘কুলি কুলি’ করিয়া ডাক ছাড়িতে লাগিলাম। মেয়েটি উঠিয়া দুই চক্ষে অগ্নিবর্ষণ করিয়া বলিল, “না, আপনি যাইতে পারিবেন না, যেমন আছেন বসিয়া থাকুন।”
বলিয়া সে দ্বারের কাছে দাঁড়াইয়া স্টেশন-মাস্টারকে ইংরেজি ভাষায় বলিল, “এ গাড়ি আগে হইতে রিজার্ভ করা, এ কথা মিথ্যা কথা।”
বলিয়া নাম লেখা টিকিটটি খুলিয়া প্লাটফর্মে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল।
ইতিমধ্যে আর্দালি-সমেত ইউনিফর্ম-পরা সাহেব দ্বারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। গাড়িতে সে তার আসবাব উঠাইবার জন্য আর্দালিকে প্রথমে ইশারা করিয়াছিল। তাহার পর মেয়েটির মুখে তাকাইয়া, তার কথা শুনিয়া, ভাব দেখিয়া, স্টেশন-মাস্টারকে একটু স্পর্শ করিল এবং তাহাকে আড়ালে লইয়া গিয়া কী কথা হইল জানি না। দেখা গেল, গাড়ি ছাড়িবার সময় অতীত হইলেও আর-একটা গাড়ি জুড়িয়া তবে ট্রেন ছাড়িল। মেয়েটি তার দলবল লইয়া আবার একপত্তন চানা-মুঠ খাইতে শুরু করিল, আর আমি লজ্জায় জানলার বাহিরে মুখ বাড়াইয়া প্রকৃতির শোভা দেখিতে লাগিলাম।
কানপুরে গাড়ি আসিয়া থামিল। মেয়েটি জিনিসপত্র বাঁধিয়া প্রস্তুত-স্টেশনে একটি হিন্দুস্থানি চাকর ছুটিয়া আসিয়া ইহাদিগকে নামাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিল।
মা তখন আর থাকিতে পারিলেন না। জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী মা।”
মেয়েটি বলিল, “আমার নাম কল্যাণী।”
শুনিয়া মা এবং আমি দুজনেই চমকিয়া উঠিলাম।
“তোমার বাবা-”“তিনি এখানকার ডাক্তার, তাঁহার নাম শম্ভুনাথ সেন।”
তার পরেই সবাই নামিয়া গেল।মামার নিষেধ অমান্য করিয়া, মাতৃ-আজ্ঞা ঠেলিয়া, তার পরে আমি কানপুরে আসিয়াছি। কল্যাণীর বাপ এবং কল্যাণীর সঙ্গে দেখা হইয়াছে। হাত জোড় করিয়াছি, মাথা হেঁট করিয়াছি; শম্ভুনাথবাবুর হৃদয় গলিয়াছে। কল্যাণী বলে, “আমি বিবাহ করিব না।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কেন।” সে বলিল, “মাতৃ-আজ্ঞা।” কী সর্বনাশ। এ পক্ষেও মাতুল আছে নাকি।
তার পরে বুঝিলাম, মাতৃভূমি আছে। সেই বিবাহ-ভাঙার পর হইতে কল্যাণী মেয়েদের শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করিয়াছে।
কিন্তু আমি আশা ছাড়িতে পারিলাম না। সেই সুরটি যে আমার হৃদয়ের মধ্যে আজও বাজিতেছে- সে যেন কোন ওপারের বাঁশি-আমার সংসারের বাহির হইতে আসিল-সমস্ত সংসারের বাহিরে ডাক দিল। আর, সেই-যে রাত্রির অন্ধকারের মধ্যে আমার কানে আসিয়াছিল “জায়গা আছে”, সে যে আমার চিরজীবনের গানের ধুয়া হইয়া রহিল। তখন আমার বয়স ছিল তেইশ, এখন হইয়াছে সাতাশ। এখনো আশা ছাড়ি নাই, কিন্তু মাতুলকে ছাড়িয়াছি। নিতান্ত এক ছেলে বলিয়া মা আমাকে ছাড়িতে পারেন নাই।
তোমরা মনে করিতেছ, আমি বিবাহের আশা করি? না, কোনো কালেই না। আমার মনে আছে, কেবল সেই এক রাত্রির অজানা কণ্ঠের মধুর সুরের আশা-জায়গা আছে। নিশ্চয়ই আছে। নইলে দাঁড়াব কোথায়। তাই বৎসরের পর বৎসর যায় আমি এইখানেই আছি। দেখা হয়, সেই কন্ঠ শুনি, যখন সুবিধা পাই কিছু তার কাজ করিয়া দিই-আর মন বলে, এই তো জায়গা পাইয়াছি। ওগো অপরিচিতা, তোমার পরিচয়ের শেষ হইল না, শেষ হইবে না; কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো, এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি।
উৎস নির্দেশ : |
---|
‘অপরিচিতা’ প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪) কার্তিক সংখ্যায়। এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পের সংকলন ‘গল্পসপ্তক’-এ এবং পরে, ‘গল্পগুচ্ছ’ তৃতীয় খণ্ডে (১৯২৭)। |
শব্দার্থ ও টীকা : |
---|
➠ ‘এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যের হিসাবে বড়ো, না গুণের হিসাবে।’- গল্পের কথক
চরিত্র অনুপমের আত্মসমালোচনা। পরিমাণ ও গুণ উভয় দিক দিয়েই যে তার জীবনটি
নিতান্তই তুচ্ছ সে কথাই এখানে ব্যক্ত হয়েছে। ➠ ফলের মতো গুটি- গুটি এক সময় পূর্ণ ফলে পরিণত হয়। কিন্তু গুটিই যদি ফলের মতো হয় তাহলে তার অসম্পূর্ণ সারবত্তা প্রকট হয়ে ওঠে। নিজের নিষ্ফল জীবনকে বোঝাতে অনুপমের ব্যবহৃত উপমা। ➠ মাকাল ফল- দেখতে সুন্দর অথচ ভেতরে দুর্গন্ধ ও শাঁসযুক্ত খাওয়ার অনুপযোগী ফল। বিশেষ অর্থে গুণহীন। ➠ অন্নপূর্ণা- অন্নে পরিপূর্ণা। দেবী দুর্গা। ➠ গজানন- গজ (হাতি) আনন যার। গণেশ। ➠ ‘আজও আমাকে দেখিলে মনে হইবে, আমি অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোটো ভাইটি।’- দেবী দুর্গার দুই পুত্র; অগ্রজ গণেশ ও অনুজ কার্তিকেয়। দুর্গার কোলে থাকা দেব-সেনাপতি কার্তিকেয়কে বোঝানো হয়েছে। ব্যঙ্গার্থে প্রয়োগ। ➠ ফল্গু- ভারতের গয়া অঞ্চলের অন্তঃসলিলা নদী। নদীটির ওপরের অংশে বালির আস্তরণ কিন্তু ভেতরে জলস্রোত প্রবাহিত। ➠ ‘ফল্লুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুষিয়া লইয়াছেন।’- অনুপম তার মামার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে কথাটি বলেছে। সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালনে তার ভূমিকা এখানে উপমার মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। ➠ গণ্ডুষ- একমুখ বা এককোষ জল। ➠ অন্তঃপুর- অন্দরমহল। ভেতরবাড়ি। ➠ স্বয়ংবরা- যে মেয়ে নিজেই স্বামী নির্বাচন করে। ➠ গুড়গুড়ি- আলবোলা। ফরসি। দীর্ঘ নলযুক্ত হুকাবিশেষ। ➠ বাঁধা হুঁকা- সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নারকেল-খোলে তৈরি ধূমপানের যন্ত্রবিশেষ। ➠ উমেদারি- প্রার্থনা। চাকরির আশায় অন্যের কাছে ধরনা দেওয়া। ➠ অবকাশের মরুভূমি এক- আনন্দহীন প্রচুর অবসর বোঝানো হয়েছে। ➠ কালে ইহাদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল।- লক্ষ্মী ধন ও ঐশ্বর্যের দেবী। মঙ্গলঘট তাঁর প্রতীক। কল্যাণীদের বংশে একসময় লক্ষ্মীর কৃপায় ঐশ্বর্যের ঘট পূর্ণ ছিল। ➠ পশ্চিমে- এখানে ভারতের পশ্চিম অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। ➠ আন্ডামান দ্বীপ- ভারতীয় সীমানাভুক্ত বঙ্গোপসাগরের দ্বীপবিশেষ। স্বদেশি আন্দোলনের যুগে রাজবন্দিদের নির্বাসন শাস্তি দিয়ে আন্ডামান বা আন্দামানে পাঠানো হতো। ➠ কোন্নগর- কলকাতার নিকটস্থ একটি স্থান। ➠ মনু- বিধানকর্তা বা শাস্ত্রপ্রণেতা মুনিবিশেষ। ➠ মনু সংহিতা- মনু-প্রণীত মানুষের আচরণবিধি সংক্রান্ত গ্রন্থ। ➠ প্রজাপতি- জীবের স্রষ্টা। ব্রহ্মা। ইনি বিয়ের দেবতা। ➠ পঞ্চশর- মদনদেবের ব্যবহার্য পাঁচ ধরনের বাণ। ➠ কন্সর্ট- নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের ঐকতান। ➠ সেকরা- স্বর্ণকার, সোনার অলংকার প্রস্তুতকারক। ➠ ‘বর্বর কোলাহলের মত্ত হস্তী দ্বারা সংগীতসরস্বতীর পদ্মবন দলিত বিদলিত করিয়া আমি তো বিবাহ-বাড়িতে গিয়া উঠিলাম’- অনুপম নিজের বিবাহযাত্রার পরিস্থিতি বর্ণনায় সুরশূন্য বিকট কোলাহলকে সংগীত সরস্বতীর পদ্মবন দলিত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছে। ➠ অভিষিক্ত- অভিষেক করা হয়েছে এমন। ➠ সওগাদ- উপঢৌকন। ভেট। ➠ লোক-বিদায়- পাওনা পরিশোধ। এখানে অনুষ্ঠানের শেষে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। ➠ দেওয়া-থোওয়া- বিয়ের যৌতুক ও আনুষঙ্গিক খরচ বোঝাতে কথাটি বলা হয়েছে। ➠ কষ্টিপাথর- যে পাথরে ঘষে সোনার খাঁটিত্ব পরীক্ষা করা হয়। ➠ মকরমুখো মোটা একখানা বালা- মকর বা কুমিরের মুখাকৃতিযুক্ত হাতে পরিধেয় অলংকারবিশেষ। ➠ এয়ারিং- কানের দুল। Earring. ➠ দক্ষযজ্ঞ- প্রজাপতি দক্ষ কর্তৃক অনুষ্ঠিত যজ্ঞ। এ যজ্ঞে পতিনিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ শুনে শিব অনুচরসহ যজ্ঞস্থলে পৌঁছে যজ্ঞ ধ্বংস করে দেন এবং সতীর শব কাঁধে তুলে নিয়ে প্রলয় নৃত্যে মত্ত হন। এখানে প্রলয়কাণ্ড বা হট্টগোল বোঝাচ্ছে। ➠ রসনচৌকি- শানাই, ঢোল ও কাঁসি- এই তিন বাদ্যযন্ত্রে সৃষ্ট ঐকতানবাদন। ➠ অভ্র- এক ধরনের খনিজ ধাতু। Mica. ➠ অভ্রের ঝাড়- অভ্রের তৈরি ঝাড়বাতি। ➠ মহানির্বাণ- সবরকমের বন্ধন থেকে মুক্তি। ➠ কলি- পুরাণে বর্ণিত চার যুগের শেষ যুগ। কলিযুগ। কলিকাল। ➠ কলি যে চারপোয়া হইয়া আসিল!- কলিকাল পরিপূর্ণরূপে আত্মপ্রকাশ করল। ➠ পাকযন্ত্র- পাকস্থলী। ➠ প্রদোষ- সন্ধ্যা। ➠ একচক্ষু লণ্ঠন- একদিক খোলা তিনদিক ঢাকা বিশেষ ধরনের লণ্ঠন, যা রেলপথের সংকেত দেখানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। ➠ মৃদঙ্গ- মাটির খোলের দুপাশে চামড়া লাগানো এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। ➠ ‘গাড়ি লোহার মৃদঙ্গে তাল দিতে দিতে চলিল।’- চলন্ত রেলগাড়ির অবিরাম ধাতব ধ্বনি বোঝানো হয়েছে। ➠ ধুয়া- গানের যে অংশ দোহাররা বারবার পরিবেশন করে। ➠ জড়িমা- আড়ষ্টতা। জড়ত্ব। ➠ মঞ্জরী- কিশলয়যুক্ত কচি ডাল। মুকুল ➠ একপত্তন- একপ্রস্থ। ➠ কানপুর- ভারতের একটি শহর। ➠ ‘তার পরে বুঝিলাম, মাতৃভূমি আছে।’- কল্যাণী যে দেশমাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে, অনুপমের এই আত্মোপলব্ধি এখানে প্রকাশিত। |
পাঠ-পরিচিতি : |
---|
‘অপরিচিতা’ গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে যে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, তার নাম কল্যাণী। অমানবিক যৌতুক প্রথার নির্মম বলি হয়েছে এমন নারীদের গল্প ইতঃপূর্বে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু এই গল্পেই প্রথম যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথকতা শোনালেন তিনি। এ গল্পে পিতা শম্ভুনাথ সেন এবং কন্যা কল্যাণীর স্বতন্ত্রবীক্ষা ও আচরণে সমাজে গেড়ে-বসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। পিতার বলিষ্ঠ প্রতিরোধ এবং কন্যা কল্যাণীর দেশচেতনায় ঋদ্ধ ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও তার অভিব্যক্তিতে গল্পটি সার্থক। ‘অপরিচিতা’ উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা গল্প। গল্পের কথক অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের যুদ্ধসংলগ্ন সময়ের সেই বাঙালি যুবক, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর উপাধি অর্জন করেও ব্যক্তিত্বরহিত, পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুলমাত্র। তাকে দেখলে আজো মনে হয়, সে যেন মায়ের কোলসংলগ্ন শিশুমাত্র। তারই বিয়ে উপলক্ষ্যে যৌতুক নিয়ে নারীর চরম অবমাননাকালে শম্ভুনাথ সেনের কন্যা-সম্প্রদানে অসম্মতি গল্পটির শীর্ষ মুহূর্ত। অনুপম নিজের গল্প বলতে গিয়ে ব্যাঙ্গার্থে জানিয়ে দিয়েছে সেই অঘটন সংঘটনের কথাটি। বিয়ের লগ্ন যখন প্রস্তুত তখন কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান নতুন এক সময়ের আশু আবির্ভাবকেই সংকেতবহ করে তুলেছে। কর্মীর ভূমিকায় বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জাগরণের মধ্য দিয়ে গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর শুচিশুভ্র আত্মপ্রকাশও ভবিষ্যতের নতুন নারীর আগমনীর ইঙ্গিতে পরিসমাপ্ত। ‘অপরিচিতা’ মনস্তাপে ভেঙেপড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের স্বীকারোক্তির গল্প, তার পাপস্খালনের অকপট কথামালা। অনুপমের আত্মবিবৃতির সূত্র ধরেই গল্পের নারী কল্যাণী অসামান্যা হয়ে উঠেছে। গল্পটিতে পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতার স্ফুরণ যেমন ঘটেছে, তেমনি একই সঙ্গে পুরুষের ভাষ্যে নারীর প্রশস্তিও কীর্তিত হয়েছে। |
কবি পরিচিতি : |
---|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদা দেবী। বিশ্বকবি অভিধায় সম্ভাষিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প রচয়িতা এবং বাংলা ছোটগল্পের শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর লেখনীতেই বাংলা ছোটগল্পের উদ্ভব, বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটেছে। তাঁর ছোটগল্প বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পগুলোর সমতুল্য। ১২৮৪ বঙ্গাব্দে মাত্র ষোল বছর বয়সে “ভিখারিনী” গল্প রচনার মাধ্যমে ছোটগল্প লেখক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পর থেকে জীবনের প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ চৌষট্টি বছরে তিনি অখণ্ড ‘গল্পগুচ্ছে’ সংকলিত ৯৫টি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এর বাইরেও ‘সে’, ‘গল্পসল্প’ এবং ‘লিপিকা’ গ্রন্থে তাঁর আরও গল্প সংকলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সর্বশেষ গল্পটির নাম “মুসলমানীর গল্প”। পারিবারিক জমিদারি তদারকির সূত্রে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসবাসের কালই রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প রচনার স্বর্ণযুগ। ‘সোনার তরী’ কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোও তিনি একই সময়ে রচনা করেন। প্রকৃতির পটে জীবনকে স্থাপন করে জীবনের গীতময় বিশ্বজনীন প্রকাশই রবীন্দ্রগল্পের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তবে বিশ শতকে রচিত গল্পে প্রকৃতি ও গীতময়তার স্থলে বাস্তবতাই প্রাধান্য পেয়েছে। গল্পকার হিসেবে তিনি যেমন বরেণ্য, ঔপন্যাসিক হিসেবেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্থান সুনির্দিষ্ট। তাঁর রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘ঘরে-বাইরে’, ‘শেষের কবিতা’, ‘যোগাযোগ’ বাংলা উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। নাটক রচনার ক্ষেত্রেও রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত। তাঁর রচিত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো: ‘রাজা’, ‘অচলায়তন’, ‘ডাকঘর’, ‘মুক্তধারা’, ‘রক্তকরবী’। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগস্ট (১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাবসান ঘটে। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: |
---|
১. অনুপমের বাবা কী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন? ক. ডাক্তারি খ. ওকালতি গ. মাস্টারি ঘ. ব্যবসা ২. মামাকে ভাগ্য দেবতার প্রধান এজেন্ট বলার কারণ, তার ক. প্রতিপত্তি খ. প্রভাব গ. বিচক্ষণতা ঘ. কূটবুদ্ধি নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও। পিতৃহীন দীপুর চাচাই ছিলেন পরিবারের কর্তা। দীপু শিক্ষিত হলেও তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। চাচা তার বিয়ের উদ্যোগ নিলেও যৌতুক নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে কন্যার পিতা অপমানিত বোধ করে বিয়ের আলোচনা ভেঙে দেন। দীপু মেয়েটির ছবি দেখে মুগ্ধ হলেও তার চাচাকে কিছুই বলতে পারেননি। ৩. দীপুর চাচার সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের মিল আছে? ক. হরিশের খ. মামার গ. শিক্ষকের ঘ. বিনুর ৪. উক্ত চরিত্রে প্রাধান্য পেয়েছে- i. দৌরাত্ম্য (পাপাচার; কুস্বভাব) ii. হীনম্মন্যতা iii. লোভ নিচের কোনটি ঠিক? ক. i ও ii খ. ii ও iii গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii |
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. ‘অপরিচিতা’ গল্পের গল্পকথকের নাম কী? উত্তর : ‘অপরিচিতা’ গল্পের গল্পকথকের নাম অনুপম। ২. ‘অপরিচিতা’ গল্পের গল্পকথকের বয়স কত? উত্তর : ‘অপরিচিতা’ গল্পের গল্পকথকের বয়স সাতাশ বছর। ৩. কার সুন্দর চেহারা নিয়ে পণ্ডিতমশায় বিদ্রুপ করতেন? উত্তর : অনুপমের সুন্দর চেহারা নিয়ে পণ্ডিতমশায় বিদ্রুপ করতেন। ৪. পণ্ডিতমশায় অনুপমের সুন্দর চেহারা কীসের সঙ্গে তুলনা করতেন? উত্তর : পণ্ডিতমশায় অনুপমের সুন্দর চেহারা শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সঙ্গে তুলনা করতেন। ৫. অনুপমের মা কেমন ঘরের মেয়ে ছিলেন? উত্তর : অনুপমের মা গরিব ঘরের মেয়ে ছিলেন। ৬. অনুপমের পিতা পেশায় কী ছিলেন? উত্তর : অনুপমের পিতা পেশায় উকিল ছিলেন। ৭. অনুপমের আসল অভিভাবক কে? উত্তর : অনুপমের আসল অভিভাবক তার মামা। ৮. বিয়ে সম্বন্ধে কার একটা বিশেষ মত ছিল? উত্তর : বিয়ে সম্বন্ধে মামার একটা বিশেষ মত ছিল। ৯. অনুপমের বন্ধুর নাম কী? উত্তর : অনুপমের বন্ধুর নাম হরিশ। ১০. হরিশ কোথায় কাজ করে? উত্তর : হরিশ কানপুরে কাজ করে। ১১. ছুটিতে হরিশ কোথায় এসেছে? উত্তর : ছুটিতে হরিশ কলকাতায় এসেছে। ১২. হরিশ অনুপমকে কী ধরনের মেয়ের সন্ধান দিয়েছিল? উত্তর : হরিশ অনুপমকে খাসা মেয়ের সন্ধান দিয়েছিল। ১৩. অবকাশের মরুভূমির মধ্যে অনুপম কীসের মরীচিকা দেখছিল? উত্তর : অবকাশের মরুভূমির মধ্যে অনুপম নারীরূপের মরীচিকা দেখছিল। ১৪. মেয়ের বয়স পনেরো শুনে কার মন ভার হলো? উত্তর : মেয়ের বয়স পনেরো শুনে মামার মন ভার হলো। ১৫. মামা কলকাতার বাইরের পৃথিবীটাকে কোন দ্বীপের অন্তর্গত বলে জানেন? উত্তর : মামা কলকাতার বাইরের পৃথিবীটাকে আন্দামান দ্বীপের অন্তর্গত বলে জানেন। ১৬. বিশেষ কাজে মামা একবার কোথায় গিয়েছিলেন? উত্তর : বিশেষ কাজে মামা একবার কোন্নগর গিয়েছিলেন। ১৭. এককালে কাদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল? উত্তর : এককালে শম্ভুনাথ সেনদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। ১৮. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠানো হলো? উত্তর : কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য বিনুদাদাকে পাঠানো হলো। ১৯. বিনুদাদা অনুপমের সম্পর্কে কী হন? উত্তর : বিনুদাদা অনুপমের সম্পর্কে পিস্তুতো ভাই হন। ২০. বিনুদাদার রুচি ও দক্ষতার ওপরে অনুপম কতটুকু নির্ভর করতে পারেন? উত্তর : বিনুদাদার রুচি ও দক্ষতার ওপর গল্পকথক ষোলো আনা নির্ভর করতে পারেন। ২১. গল্পকথকের মতে কার ভাষাটা অত্যন্ত আঁট? উত্তর : গল্পকথকের মতে বিনুদাদার ভাষাটা অত্যন্ত আঁট। ২২. বিয়ে উপলক্ষে কন্যাপক্ষকে কোথায় আসতে হলো? উত্তর : বিয়ে উপলক্ষে কন্যাপক্ষকে কলকাতায় আসতে হলো। ২৩. কার চেহারা চোখে পড়বার মতো? উত্তর : শম্ভুনাথ বাবুর চেহারা চোখে পড়বার মতো। ২৪. গল্পকথকের মতে বেহাই সম্প্রদায়ের কী থাকাটা দোষের? উত্তর : গল্পকথকের মতে বেহাই সম্প্রদায়ের তেজ থাকাটা দোষের। ২৫. শম্ভুনাথ বাবুর স্মিতহাস্য বন্ধুটি পেশায় কী ছিলেন? উত্তর : শম্ভুনাথ বাবুর স্মিতহাস্য বন্ধুটি পেশায় ছিলেন উকিল। ২৬. শম্ভুনাথ বাবুর মেয়ের গহনাগুলো কোন আমলের ছিল? উত্তর : শম্ভুনাথ বাবুর মেয়ের গহনাগুলো তাঁর পিতামহীদের আমলের ছিল। ২৭. মামা অনুপমকে কোথায় গিয়ে বসতে বললেন? উত্তর : মামা অনুপমকে সভায় গিয়ে বসতে বললেন। ২৮. বরযাত্রীদের খাওয়া শেষ হলে শম্ভুনাথ বাবু কাকে খেতে বললেন? উত্তর : বরযাত্রীদের খাওয়া শেষ হলে শম্ভুনাথ বাবু অনুপমকে খেতে বললেন। ২৯. কার বিরুদ্ধে চলা অনুপমের পক্ষে অসম্ভব? উত্তর : মামার বিরুদ্ধে চলা অনুপমের পক্ষে অসম্ভব। ৩০. কল্যাণীকে কার ফটোগ্রাফ দেখানো হয়েছিল? উত্তর : কল্যাণীকে অনুপমের ফটোগ্রাফ দেখানো হয়েছিল। ৩১. অনুপমের মতে, তার ছবিটি কীসের মধ্যে লুকানো আছে? উত্তর : অনুপমের মতে, তার ছবিটি একটি বাক্সের মধ্যে লুকানো আছে। ৩২. কে বিয়ে করবে না বলে পণ করেছে? উত্তর : কল্যাণী বিয়ে করবে না বলে পণ করেছে। ৩৩. মাকে নিয়ে অনুপম কোথায় চলছিল? উত্তর : মাকে নিয়ে অনুপম তীর্থে চলছিল। ৩৪. তীর্থে যাওয়ার সময় মায়ের ভার কার উপর ছিল? উত্তর : তীর্থে যাওয়ার সময় মায়ের ভার ছিল অনুপমের উপর। ৩৫. শম্ভুনাথ সেনের মেয়ের নাম কী? উত্তর : শম্ভুনাথ সেনের মেয়ের নাম কল্যাণী। ৩৬. কার নিষেধ অমান্য করে অনুপম কানপুরে এসেছে? উত্তর : মামার নিষেধ অমান্য করে অনুপম কানপুরে এসেছে? ৩৭. বিয়ে ভাঙার পর কল্যাণী কোন ব্রত গ্রহণ করেছে? উত্তর : বিয়ে ভাঙার পর কল্যাণী মেয়েদের শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছে। ৩৮. কে লজ্জায় অনুপমের বিয়ের কথা তুলতে পারেন না? উত্তর : মামা লজ্জায় অনুপমের বিয়ের কথা তুলতে পারেন না। |
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : |
---|
১. শম্ভুনাথ সেন পশ্চিমে গিয়ে বাস করছেন কেন? উত্তর : দেশে বংশমর্যাদা রেখে চলা সহজ নয় বলে শম্ভুনাথ সেন পশ্চিমে গিয়ে বাস করছেন। ➠ এককালে শম্ভুনাথ সেনদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। টাকা-পয়সার কোনো অভাব ছিল না তাদের। কিন্তু বর্তমানে তেমন কিছু নেই বললেই চলে। আর সামান্য যা বাকি আছে তা দিয়ে বংশমর্যাদা রেখে চলা সহজ নয় বলে তিনি পশ্চিমে চলে গিয়েছেন। ২. মামা কেন হরিশকে পেলে ছাড়তে চান না? উত্তর : হরিশ আসর জমাতে অদ্বিতীয় হওয়ার কারণে মামা তাকে পেলে ছাড়তে চান না। ➠ হরিশকে সবাই খুব খাতির করে। কেননা তার সরস রসনার গুণ সবাইকে মুগ্ধ করে দেয়। মামাও তাকে খুব খাতির করেন। মূলত তার আসর জমানোর গুণের কারণেই মামা তাকে পেলে ছাড়তে চান না। ৩. মামা বিয়ে বাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না কেন? উত্তর : বিয়ে বাড়ির উঠানে বরযাত্রীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এবং সমস্ত আয়োজন নিতান্ত মধ্যম রকমের হওয়ায় মামা বিয়ে বাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না। ➠ শম্ভুনাথ সেনের এককালে প্রচুর ধন-সম্পদ থাকলেও বর্তমানে তাঁর তেমন কিছুই নেই। তাই শম্ভুনাথ সেনের আয়োজনে কোনো আড়ম্বর ছিল না। সমস্ত আয়োজন ছিল মধ্যম রকমের। আর বিয়ে বাড়ির উঠানে বরযাত্রীদের জায়গাও সংকুলান হচ্ছিল না। এসব কারণে মামা বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে খুশি হলেন না। ৪. অনুপমের বিয়েতে মামা কেন স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন? উত্তর : শম্ভুনাথ সেনের মুখের কথার উপর নির্ভর করতে পারেননি বলে মামা অনুপমের বিয়েতে স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন। ➠ মামার উদ্দেশ্য ছিল, তিনি কোনোভাবেই কারও কাছে ঠকবেন না। তাই বিয়েতে আগেই পণের কথা পাকাপাকি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাড়িভাড়া, লোক-বিদায় প্রভৃতি বিষয়ে শম্ভুনাথ সেনের টানাটানির পরিচয় পাওয়ায় মামা তাঁর উপর আর বিশ্বাস রাখতে পারেননি। তাই তিনি স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন। ৫. শম্ভুনাথ বাবু কেন মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে আনলেন? উত্তর : বরপক্ষ মেয়ের গহনা যাচাই করে দেখতে চেয়েছিল বলে শম্ভুনাথ বাবু মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে আনলেন। ➠ গল্পকথকের মামা শম্ভুনাথ সেনের মুখের কথার উপর নির্ভর করতে পারেননি বলে স্যাকরাকে সঙ্গে করে এনেছিলেন। আর মামা শম্ভুনাথ সেনকে জানালেন যে, তিনি সমস্ত গহনা যাচাই করে দেখতে চান। শম্ভুনাথ এ ব্যাপারে বরের মতামত জানতে চান। কিন্তু বর এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকে। এরপর শম্ভুনাথ বাবু মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে নিয়ে আসেন। ৬. মামার মুখ লাল হয়ে উঠল কেন? উত্তর : নিজের ফাঁকি ধরা পড়ায় লজ্জায় মামার মুখ লাল হয়ে উঠল। ➠ মামা স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন মূলত মেয়ের বাবাকে অপমান করার জন্য। কিন্তু মেয়ের গহনায় কোনো খাদ না থাকায় এবং গহনা সংখ্যা ওজনে দাবির তুলনায় বেশি হওয়ায় মামা বিপাকে পড়লেন। অন্যরদিকে, বরপক্ষের দেয়া এয়ারিংয়ে সোনার ভাগ সামান্য থাকায় এবং মেয়ের বাবা সেটি ফেরত দেয়ায় মামা রাগে ও লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন। ৭. ‘তবে আপনাদের গাড়ি বলিয়া দিই’?- উক্তিটি শম্ভুনাথ কেন করেছিলেন? উত্তর : মেয়েকে অনুপমের সাথে বিয়ে দেবেন না বলে শম্ভুনাথ সেন প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন। ➠ বরপক্ষ মেয়ের গহনা যাচাই করতে চাওয়ায় শম্ভুনাথ সেন খুব অপমানিতবোধ করেন। আর এ ব্যাপারে বর নিশ্চুপ থাকায় তিনি খুব অবাক হয়ে যান। আর মনে মনে ঠিক করে ফেলেন যাঁরা তাঁকে বিশ্বাস করেন না, তাদের হাতে মেয়ে তুলে দেবেন না। তাই বরপক্ষের খাওয়া শেষ হলে তিনি তাদেরকে বিদায় দেয়া প্রসঙ্গে উক্তিটি করেন। ৮. শম্ভুনাথ সেন কেন অনুপমকে একটি কথা বলারও আবশ্যক বোধ করলেন না? উত্তর : অনুপম তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়, এটা প্রমাণিত হওয়ায় শম্ভুনাথ সেন তাকে একটি কথা বলারও আবশ্যক বোধ করলেন না। ➠ মেয়ের গহনা যাচাইয়ের ব্যাপারে শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মতামত জানতে চাইলে সে কোনো মতামত দিতে পারে না। অনুপমকে শম্ভুনাথ সেন খেতে বললেও মামার আদেশ অমান্য করে সে খেতে পারে না। এসব কারণে শম্ভুনাথ বাবু বুঝতে পারেন অনুপম তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়। তাই পরে শম্ভুনাথ সেন অনুপমকে একটি কথা বলারও আবশ্যক বোধ করেননি। ৯. মা কেন অনুপমকে ছাড়তে পারেননি? উত্তর : নিতান্ত এক ছেলে বলে মা অনুপমকে ছাড়তে পারেননি। ➠ অনুপম যখন খুব ছোট তখন তার বাবা মারা যান। সে তার মায়ের হাতেই মানুষ। বড় হয়ে অনুপম কল্যাণীর প্রেমে পড়লে সে মায়ের আজ্ঞাকে অবহেলা করে কল্যাণীর সাথে দেখা করতে কানপুরে যায়। এসব কিছু তার মা পছন্দ না করলেও তাকে ছাড়তে পারেন না। কেননা অনুপম তাঁর একমাত্র সন্তান। ১০. মামার নিষেধ অমান্য করে অনুপম কেন কানপুরে এসেছে? উত্তর : কল্যাণী এবং কল্যাণীর বাবার সাথে দেখা করার জন্য অনুপম মামার নিষেধ অমান্য করে কানপুরে এসেছে। ➠ কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ে ভেঙে গেলেও অনুপম তাকে ভুলতে পারেনি। অনুপমের কল্পনার জগতের সর্বত্র বিরাজ করে কল্যাণী। কল্যাণীর রূপ-যৌবন এমনকি তার মুখের ভাষাও অনুপমের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাই সে তার সাথে দেখা করার জন্য কানপুরে যেতে চায়। এ ব্যাপারে তার মামা নিষেধ করলেও সে তা অগ্রাহ্য করে। ১১. ধনীর মেয়ে মামার পছন্দ নয় কেন? উত্তর : মামার ধারণা, গরিবের মেয়ে ঘরে আসলে মাথা হেঁট করে আসবে তাই তাঁর ধনীর মেয়ে পছন্দ নয়। ➠ বিয়ে সম্বন্ধে মামার একটা বিশেষ মত ছিল। বিয়ের ক্ষেত্রে তিনি ধনীর মেয়ে পছন্দ করতেন না। কেননা তাঁর ধারণা, গরিবের মেয়ে ঘরে আসলে মাথা হেঁট করে আসবে আর তিনি এটাই চান। আর ধনীর মেয়ে আসলে তা করবে না। তাই তিনি ধনীর মেয়ে পছন্দ করতেন না। ১২. হরিশ কীভাবে অনুপমের মন উতলা করে দিল? উত্তর : একটি খাসা মেয়ের সন্ধান দিয়ে হরিশ অনুপমের মন উতলা করে দিল। ➠ হরিশ কানপুরে কাজ করে। ছুটিতে সে কলকাতা এসেছে। এদিকে অনুপমেরও পড়ালেখা শেষ। তার তেমন কোনো কাজ নেই। এমন অবকাশের সময় হরিশ একটি খাসা মেয়ের সন্ধান দিয়ে অনুপমের মন উতলা করে দিল। ১৩. অনুপমকে কেন সংসারের কোনো কিছুর জন্য ভাবতে হতো না? উত্তর : সংসারের সব দায়িত্ব মামা পালন করতেন বলে অনুপমকে সংসারের কোনো কিছুর জন্য ভাবতে হতো না। ➠ অনুপমের বাবা ছিলেন না। সংসারে ছিলেন মা আর মামা। তবে সব দায়িত্ব ছিল মামার হাতে। সব খুঁটিনাটি বিষয়ে মামা খেয়াল রাখতেন। তাই অনুপমকে সংসারের কোনো কিছুর জন্য ভাবতে হতো না। ১৪. মামার মন কীভাবে নরম হয়েছিল? উত্তর : হরিশের সরস রসনার গুণে মামার মন নরম হয়েছিল। ➠ অনুপমের পরিবারের সর্বময় কর্তা ছিলেন মামা। তাই অনুপমের বিয়ের ব্যাপারে মামার মতামত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর মামাকে রাজি করানোর দায়িত্ব ছিল রসিক হরিশের উপর। আর হরিশের সরস রসনার গুণে সহজেই মামার মন নরম হয়েছিল। ১৫. অনুপমের বিয়ের ভূমিকা অংশটি নির্বিঘ্নে সমাধান হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মামার মন নরম হওয়াতে অনুপমের বিয়ের ভূমিকা অংশটি নির্বিঘ্নে সমাধান হয়েছিল। ➠ অনুপমের বন্ধু হরিশ ছিলেন রসিক প্রকৃতির। আর এ জন্যই মামা তাঁকে পছন্দ করতেন। আর অনুপমের বিয়ের ব্যাপারে মামাকে রাজি করানোর দায়িত্ব ছিল হরিশের উপর। হরিশের সরস রসনার গুণে মামার মন নরম হয়েছিল। আর এ কারণেই অনুপমের বিয়ের ভূমিকা অংশটি নির্বিঘ্নে সমাধান হয়েছিল। ১৬. অনুপম নিজ চোখে মেয়ে দেখার প্রস্তাব করতে পারেনি কেন? উত্তর : সাহসের অভাবে অনুপম নিজ চোখে মেয়ে দেখার প্রস্তাব করতে পারেনি। ➠ অনুপমের প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন মামা। মা ও মামার কথার বাইরে সে নিজ থেকে কোনো কথা বলতে পারত না। কারণ অনুপম ছোটবেলা থেকে এমনভাবে বড় হয়েছে যে, নিজের কোনো মতামত বা ইচ্ছা পোষণের সাহস ছিল না। তাই বিয়ের সময়ও সে নিজ চোখে মেয়ে দেখার প্রস্তাব করতে পারেনি। ১৭. মামা কেন শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন? উত্তর : যৌতুকের গহনাগুলো যাচাই করে দেখার কথা বলার জন্য মামা শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। ➠ মামা ছিলেন চতুর প্রকৃতির লোক। তাঁর জীবনের সংকল্প ছিল জীবনে কারো কাছে ঠকবেন না। শম্ভুনাথ সেন গহনা কম দিয়ে বা খাদযুক্ত গহনা দিয়ে তাঁকে ঠকাতে পারেন। এরূপ ভাবনা থেকেই তিনি গহনাগুলো যাচাই করে দেখতে চান। আর এজন্যই শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। ১৮. শম্ভুনাথ বাবু কেন অনুপমকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন? উত্তর : মেয়ের গহনা যাচাইয়ের ব্যাপারে অনুপমের মতামত জানার জন্য শম্ভুনাথ বাবু তাকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। ➠ শম্ভুনাথ বাবু ছিলেন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তাই মামা গহনা যাচাইয়ের কথা বললে তিনি খুব কষ্ট পান। তিনি ভেবেছিলেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনুপমও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ এবং সে গহনা যাচাইয়ের ব্যাপারে নেতিবাচক মতামত পোষণ করবে। এরূপ ভাবনা থেকেই তিনি অনুপমকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন। ১৯. মামা কেন অবাক হয়ে গেলেন? উত্তর : শম্ভুনাথ সেন মেয়েকে পাত্রস্থ করতে না চাওয়ায় মামা অবাক হয়ে গেলেন। ➠ মামা কনের গহনা যাচাই করে দেখতে চাওয়ায় শম্ভুনাথ সেন খুব কষ্ট পান এবং তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। আর বরও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। তাই তিনি মামাকে গহনা যাচাই করে দেখান এবং বলেন যে সম্পর্কটা স্থায়ী করার ইচ্ছা নেই। আর এ কথা শুনে মামা অবাক হয়ে যান। ২০. অনুপমের মন পুলকের আবেশে ভরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর। উত্তর : কল্যাণী বিয়ে না করার পণ করেছে এ কথা শুনে অনুপমের মন পুলকের আবেশে ভরে যায়। ➠ অনুপম কল্যাণীর বিয়ে না হলেও তারা কেউ কাউকে ভুলতে পারেনি। অনুপম সবসময় প্রত্যাশা করত কল্যাণী তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু মনে মনে কল্যাণী অন্য কোথাও বিয়ে হওয়ার শঙ্কায় শঙ্কিত থাকত। কিন্তু যখন শুনতে পেল যে, কল্যাণী বিয়ে করবে না বলে পণ করেছে, তখন তার মন পুলকের আবেশে ভরে যায়। ২১. বরযাত্রীদের কপাল চাপড়ানোর কারণ বুঝিয়ে লেখ। উত্তর : কনের বাপ বরযাত্রীদের ফাঁকি দিয়ে খাইয়ে দিয়েছে। এজন্য তারা কপাল চাপড়াতে থাকে। ➠ মামার অনৈতিক প্রস্তাবে শম্ভুনাথ সেন স্থির করেন মেয়েকে অনুপমের সাথে বিয়ে দেবেন না। কিন্তু বরযাত্রীদের বিষয়টা বুঝতে দেন না। তিনি তাদের সসম্মানে খাইয়ে দেন এবং তারপর বিদায় করে দেন। আর এজন্যই বরযাত্রীরা কপাল চাপড়াতে থাকে। ২২. শেষ পর্যন্ত গল্পকথকের বয়স পুরোপুরি হলো না কেন? উত্তর : গল্পকথক শিশুকালে কোলে কোলেই মানুষ হয়েছে বলে শেষ পর্যন্ত তার বয়স পুরোপুরি হলো না। ➠ গল্পকথক তার মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই সে খুব আদর-যত্নে মানুষ হয়েছিল। আর মামার কারণে তার সংসারের কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হতো না। সবকিছু মিলিয়ে মানসিক দিক দিয়ে অপরিপক্ব থেকে যায়। ২৩. শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় কীভাবে গলেছিল? উত্তর : অনুপম মাথা হেঁট করে হাত জোড় করায় শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছিল। ➠ শম্ভুনাথ সেন মামার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে কল্যাণীকে বিয়ে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি কঠিন হৃদয়ের মানুষ। কিন্তু এক পর্যায়ে অনুপম যখন কল্যাণীকে ফিরে পাওয়ার আশায় তাঁর কাছে মাথা হেঁট করে, হাত জোড় করে, তখন তাঁর হৃদয় গলে যায় |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ |
---|
মা মরা ছোট মেয়ে লাবনি আজ শ্বশুর বাড়ি যাবে। সুখে থাকবে এই আশায় দরিদ্র
কৃষক লতিফ মিয়া আবাদের সামান্য জমিটুকু বন্ধক রেখে পণের টাকা যোগাড় করলেন।
কিন্তু তাতেও কিছু টাকার ঘাটতি রয়ে গেল। এদিকে বর পারভেজের বাবা হারুন
মিয়ার এক কথা সম্পূর্ণ টাকা না পেলে তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যাবেন। বিষয়টি
পারভেজের কানে গেলে সে বাপকে সাফ জানিয়ে দেয়, ‘সে দরদাম বা কেনাবেচার পণ্য
নয়। সে একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে, অপমান করতে নয়। ফিরতে হলে
লাবনিকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরবে।’ ক. শম্ভুনাথ সেকরার হাতে কী পরখ করতে দিয়েছিলেন? খ. ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. অনুপম ও পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য ব্যাখ্যা করো। ঘ. অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো। |
ক. শম্ভুনাথ স্যাকরার হাতে এয়ারিং পরখ করতে দিয়েছিলেন। খ. উক্তিটি দ্বারা যৌতুক নিয়ে অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় কন্যা সম্প্রদানে পিতার অসম্মতির মধ্য দিয়ে কথক অনুপমের অপমানের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। ➠ অনুপম-কল্যাণীর বিয়ে শুরুর পূর্বে অনুপমের মামা কন্যাপক্ষ প্রদত্ত গহনাগুলো স্যাকরা দিয়ে পরখ করায়। এমন অবমাননাকর পরিস্থিতিতে অনুপমের ভূমিকা না থাকায় কল্যাণীর বাবা কন্যা সম্প্রদানের অসম্মতি জানান। বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেয়া এমন ঘটনা সচরাচর লক্ষণীয় নয়। এখানে এই ঘটনাকে অনুপমের ভাষায় বিরল এবং সমাজে অপমানজনক। গ. পারভেজ এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়ক অনুপম কেবল একটি কণ্ঠস্বর শুনে কল্পনাবিলাসী হয়ে পড়ে। এরপর সেই কণ্ঠস্বরের মেয়েটিকে আড়চোখে বার বার দেখে। মেয়েটির চঞ্চলতা, সাহসিকতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা তাকে মুগ্ধ করে। উদার ও স্বাধীনচেতা মনোভাবের এমন মেয়ে হয়তো আর দ্বিতীয়টি নেই, সে ভাবে, এর সাথেই কি আমার বিয়ে হবার কথা ছিল? ➠ উদ্দীপকের পারভেজ সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী। পারভেজের বিয়েতে তার বাবা যৌতুক নিতে চাইলে সে তা অস্বীকার করে। সে বলে যে, সে কেনাবেচার পণ্য নয়। একজন মানুষকে সে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে। ফিরতে হলে তাকে নিয়েই সে বাড়ি ফিরবে। ঘ. “অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়।” মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ যারা যৌতুক দাবি করে তারা লোভী, নিষ্ঠুর, অমানুষ। বিয়েতে নিজেদের দাবিকৃত পণ না পেলে তাদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই ধরা পড়ে। এমনকি চাহিদামাফিক যৌতুক না পেলে তারা বিয়ের আসর ত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করে না। তাদের এ ধরনের আচরণ সত্যিই অমানবিক। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে মামা অনুপমের বিয়েতে টাকা ও গহনা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন এবং কন্যার পিতা এতে সম্মত হন। বিয়ের দিন, বিয়ে অনুষ্ঠানের ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি কন্যার বাবাকে কন্যার গা থেকে গহনাগুলো খুলে আনতে বলেন; তিনি তা স্যাকরা দিয়ে যাচাই করাবেন। মামা এ ধরনের আচরণ ও কথাবার্তায় তার হীনতা, লোভ ও অমানবিকতারই পরিচয় দেন। উদ্দীপকের হারুন মিয়াও অনুপমের মামার মতোই লোভী। তিনিও কন্যাপক্ষের কাছে অঢেল যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু কন্যার পিতা তা দিতে অসমর্থ হলে তিনি বিয়ের আসর থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা এবং উদ্দীপকের হারুন মিয়া উভয়ই সমগোত্রীয়। তারা লোভী, হীন ও অমানবিক। এ কারণেই তারা একসূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। জুয়েল আহমেদ বড় চাকরি করেন। মধ্যবিত্ত বাবার একমাত্র মেয়ে ফাতেমার সাথে তার বিয়ের দিন ধার্য হলো। পাত্র পক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ২ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক হিসেবে চাইল। এমন পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না ভেবে অসহায় পিতা রাজি হলেন। ক. অনুপম হাতজোড় করার পর কার হৃদয় গলেছে? খ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না কেন? গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ,- ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের পুরোপুরি ভাব উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে, তুমি কি একমত? পক্ষে যুক্তি দাও। |
ক. অনুপম হাতজোড় করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে। খ. পাত্রপক্ষের যৌতুকের স্বর্ণালংকার যাচাই করার মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না। ➠ কল্যাণী বধূ সাজে সেজে বিয়ের জন্য প্রস্তুত। অথচ যৌতুক লোভী পাত্রপক্ষ তাদের গহনা যাচাই করতে চাইলে তাকে গহনাগুলো খুলে দিতে হয়। পাত্রপক্ষের এই হীন-মানসিকতার ফলে শম্ভুনাথ বাবু বিয়ে ভেঙে দেন এবং কল্যাণীও পণ করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ সমাজে সে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। গ. উদ্দীপকে যৌতুকের বিষয়টি যেভাবে ফুটে উঠেছে তা রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ যৌতুকের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পে যথার্থরূপে তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পে বিয়ে হবে কী হবে না সেটা মুখ্য বিষয় নয়; বরং যৌতুকের গহনা খাঁটি ও পরিমাণে সঠিক কিনা সেটাই বেশি বিবেচ্য। এর ফলে বিয়ে ভেঙে গেলেও বরের যৌতুকলোভী মামার কিছু আসে যায় না। ➠ উদ্দীপকেও যৌতুকের বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানে বিয়ে ভেঙে যায়নি; বরং ভালো ছেলে পেয়ে কনের পিতার যৌতুক প্রদানে নিরুপায় সম্মতি লক্ষ করা যায়। সুতরাং দেখা যায় যে, উদ্দীপকটি গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে পুরোপুরি নয়; বরং কেবলমাত্র যৌতুকের বিষয়টি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। যেমন- তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, ঘটকের চাটুকারিতা, যৌতুক, নায়কের কল্পনাবিলাসী চেতনা, নারীর অগ্রগতি, বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে ভেঙে যাওয়া, নায়িকার বিয়ে না করে নারী জাতিকে শিক্ষিত করার ব্রত গ্রহণ এবং নায়কের ভুল বুঝে তা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি। ➠ উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কেবলমাত্র যৌতুকলোভী সমাজ ও শিক্ষিত যুবকের যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার হীন-মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এখানে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অন্যান্য বিষয় বা পরিমাণ অনুপস্থিত। উদ্দীপকের কনের পিতা যৌতুক প্রদানে রাজি এবং বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কোনো উল্লেখ নেই। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনেকগুলো বিষয় থেকে উদ্দীপকে শুধু যৌতুকের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিধি আরো বি¯ড়র। এখানে কনের পিতা যৌতুক যাচাই করে দেখা পাত্রপক্ষের সাথে কোন সম্পর্ক করবে না বলে অসম্মতি জ্ঞাপন করে ও বিয়ে ভেঙে দেয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। “দেখিলাম, এই সতের বছরের মেয়েটির উপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এখনও শৈশবের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই।” ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠানো হয়েছিল? খ. স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন আনা হয়েছিল? ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকে বয়সের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর ক্ষেত্রে কতটুকু প্রযোজ্য? বর্ণনা দাও। ঘ. ‘এখনও কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই’ ‘অপরিচিতার’র কল্যাণীর আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য অনুপমের পিস্তুতো ভাই বিনুদাদাকে পাঠানো
হয়েছিল। খ. যৌতুক হিসেবে নেয়া গহনাগুলো খাঁটি কি-না তা পরখ করার জন্য স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে আনা হয়েছিল। ➠ ‘অপরিচিতা’য় কল্যাণীর বিয়েতে নগদ স্বর্ণালংকার দেয়ার কথা ছিল। কিছুতেই ঠকবার পাত্র নয় বরের মামা। বিয়ের পূর্বেই তাই গহনাগুলোর গুণাগুণ পরখ করতে বাড়ির স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে যান। প্রমাণিত হয় কল্যাণীর বাবার দেয়া সকল গহনাই খাঁটি। গ. উদ্দীপকের বয়সের বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়িকা কল্যাণীর ক্ষেত্রে অনেকাংশেই প্রযোজ্য। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর বিয়ের সময় বয়স ছিল পনের বছর। অর্থাৎ কেবল যৌবন এসে পরিপূর্ণ করেছে তার অবয়ব। অনুপমের ভাষায়, তার গতি সহজ, দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের সূচিতা অপূর্ব, তার কোনো জড়তা নেই। অর্থাৎ যৌবন প্রাপ্তা হলেও কিশোরী সুলভ বৈশিষ্ট্যও তার মধ্যে রয়েছে। ➠ উদ্দীপকের মেয়েটির বয়স সতের। অর্থাৎ কল্যাণীর প্রায় সমান। তার মধ্যে যৌবনের সম¯ড় আলো এসে পড়েছে অথচ আচরণে রয়েছে কৈশোরত্ব। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সুতরাং উদ্দীপকের বয়সের বিষয়টি কল্যাণীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে ধরে নেয়া যায়। ঘ. উদ্দীপকের মানসিকতায় কৈশোরের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, অথচ ‘অপরিচিতা’র কল্যাণী এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, সে ব্যক্তিত্বপূর্ণ হিসেবে গল্পে উপস্থিত হয়েছে। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী সতের বছরের তরুণী হলেও গল্পের শেষদিকে এসে তার ব্যক্তিসত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। যেখানে সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। দৈহিকভাবে সে উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অথচ মানসিকভাবে সে অনেক দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী। ➠ উদ্দীপকে সতের বছরের যে মেয়েটির উল্লেখ করা হয়েছে তার যৌবন উদীপ্ত আলোকে ভরপুর, বিবাহযোগ্য কিন্তু তার আচরণে রয়েছে মাত্র ছেড়ে আসা কৈশোরের বৈশিষ্ট্য, চঞ্চলতা। অর্থাৎ দেহ পূর্ণ হলেও সে আচরণে পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। ➠ ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর মধ্যে যে ব্যক্তিসত্তার প্রকাশ ঘটেছে তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। কেননা, উদ্দীপকের মেয়েটি কৈশোর থেকে বর্তমানে সতেরো বছর বয়সে জেগে উঠতে না পারলেও কল্যাণী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুপ্রথা যৌতুকের রির“দ্ধে জেগে উঠেছিল। সে ছিল স্টেশন মাস্টারের সাথে স্পষ্টবাদী আর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত অনড়। নারী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল, যা উদ্দীপকে উঠে আসেনি। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় রেহানা আক্তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি। এখন তিনি সমাজসেবামূলক একটি সংস্থায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করেন। ক. অনুপম হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর কার হৃদয় গলেছে? খ. কল্যাণী বিয়ে না করার পণ করেছে কেন? গ. রেহানা আক্তারের সমাজসেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ”- কথাটির যৌক্তিকতা বিচার করো। |
ক. অনুমপ হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে। খ. বিয়ের পিঁড়িতে বসেও পাত্রপক্ষের হীন মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে বিয়ে না করার পণ করেছে কল্যাণী। ➠ বরপক্ষ বিয়ে বাড়িতে মেয়ের গায়ের গহনা খাঁটি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ করে। এতে মেয়ের বাবা শম্ভুনাথ বাবু অপমানিত হন। তিনি মেয়েকে আর সে বাড়িতে বিয়ে দেননি। বাবার অপমান ও পুর“ষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতায় ত্যক্ত হয়ে কল্যাণী আর বিয়ে করতে চায় না। বরং দেশব্রতে মনোযোগী হয়ে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেয়। গ. উদ্দীপকের রেহানা আক্তারের সেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের দিককে নির্দেশ করে। ➠ উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, রেহানা আক্তারের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নি। সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেখানে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করছেন। তাঁর এ ব্রত ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ব্রতকেই মনে করিয়ে দেয়। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার বছর খানেক পর অনুপমের সাথে আবার দেখা হলেও আর বিয়ে করার কথা ভাবে না। সে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর ব্রত গ্রহণ করে। একাকিত্ব কাটানো ও সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের জন্যই কল্যাণী এ ব্রত গ্রহণ করে। সুতরাং বলা যায়, সেবামূলক কাজের দিকই উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর মূল দিক বলে বিবেচিত। ঘ. রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ- উক্তিটি যৌক্তিক। ➠ উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে গেলেও রেহানা আক্তার মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হননি। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করার ব্যাপারেও কোনো মত প্রকাশ করেননি। তিনি সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েনি। অনুপমের মামার পণ সম্পর্কে আদিখ্যেতা ও কল্যাণীর বাবার মনোবলের জন্য বিয়ে ভেঙে যায়। কল্যাণী তখন এলাকার মেয়ে শিশুদের পড়ালেখার ভার গ্রহণ করে। মানসিকভাবে কল্যাণী কখনোই নিজের কাছে পরাজিত হয়নি। ➠ তৎকালীন সমাজের অজ্ঞতা ও গোঁড়ামিকে ছাপিয়ে কল্যাণী নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পায়, যা উদ্দীপকে চিত্রিত বর্তমান সমাজে রেহানা আক্তারের মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের প্রতিবন্ধকতাকে তারা দুজনেই জয় করেছে। ➠ সুতরাং, দেখা যাচ্ছে উদ্দীপকের রেহানা আক্তার এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী দুজনেরই মানসিক দৃঢ়তা একসূত্রে গাঁথা। কেউই সমাজের চাপিয়ে দেয়া অন্যায়ে দমে যায়নি। সুতরাং, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। বিয়ে বাড়িতে যেন মহোৎসব শুরু হয়েছে। চারিদিকে মহাধুমধাম চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে বাবা-মা অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন। ক. মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য কী ছিল? খ. মামা বাড়ির স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন এনেছিল? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মিলগুলো নির্দেশ কর। ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র- কথাটির সত্যতা বিচার করো। |
ক. মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তিনি কারো কাছে ঠকবেন না। খ. গহনা আসল না নকল তা পরীক্ষা করার জন্য মামা বিয়ে বাড়িতে স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিল। ➠ কল্যাণীর বিয়েতে বাবা নগদ পণের সাথে গহনা দিতে চান। এসব গহনা খাঁটি কিনা বা মেয়ের বাবা বরপক্ষকে ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য মামা স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে আসেন। স্যাকরা সমস্ত গহনা দেখে খাঁটি প্রমাণ করেন। গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ে-উৎসবের আয়োজনে ব্যাপকতা ও হঠাৎ করে বিরূপ পরিবেশ চিত্রণের মিল রয়েছে। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ে বাড়িতে মহাধুমধাম চলছে। সবাই আনন্দে মহোৎসব জুড়ে দিয়েছে। সবার প্রাণে বয়ে চলেছে খুশির জোয়ার। কোথাও কোনো জড়তা বা কোলাহল চোখে পড়ে না। উৎসবমুখর পরিবেশে একটি বিয়ে বাড়ির চিত্র উদ্দীপকে দেখা যায়। পাশাপাশি কনের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়াও এখানে লক্ষণীয়। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পেও বিয়ে বাড়ির উৎসবমুখরতা চোখে পড়ে। বরপক্ষের অতিরঞ্জিত আয়োজন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ব্যান্ড, বাঁশি, শখের কনসার্ট কোনোটাই বাদ যায় না। মেয়ের বাড়িতেও তার ছোঁয়া লাগে। কনেপক্ষের আতিথেয়তায় বরপক্ষ খুশি হয়। কিন্তু বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে এ সবকিছুই লণ্ডভণ্ডের মধ্য দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের এ উভয় দিকই উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পে ফুটে উঠেছে। ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র- কথাটি সঠিক। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ির উৎসবমুখর পরিবেশ এবং সবশেষে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে মা-বাবার কান্নার চিত্র। কিন্তু ‘অপরিচিতা’ গল্পে আরো নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে ফুটে উঠেছে। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ে ভেঙে যাওয়ার চিত্র। এছাড়া যৌতুক নিয়ে অনুপমের মামার হীন মানসিকতা ও কল্যাণীর বাবার দৃঢ় মনোবল চোখে পড়ে। গল্পে কল্যাণীর ব্রত গ্রহণের বিষয়টিও চোখে পড়ে। কল্যাণী মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর ব্রত গ্রহণ করে, যা উদ্দীপকে দেখা যায় না। সর্বোপরি ‘অপরিচিতা’ গল্পে দুজন মানব-মানবীর সংসার-জীবনের সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে মানসীর প্রতি প্রেমিক হৃদয়ের দুর্বার আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে, যার আভাসমাত্র উদ্দীপকে নেই। ➠ সুতরাং, দেখা যায় ‘অপরিচিতা’ গল্পে বিস্তারিত বর্ণনার আড়ালে যৌতুক প্রথা, সামাজিকতা ও অপূর্ণতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে ফুটে ওঠেনি। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। বিয়ের আসর। চারদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ কাণ্ড। বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো। কনের বাবা গণি মিয়া একটি টেলিভিশন ও একটি মোটর সাইকেল বরপক্ষকে দিতে চাইল। বরের বাবা রফিউদ্দিন বললেন, “আমি আপনার মেয়ে নিতে এসেছি, কোনো যৌতুক নয়।” ক. বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে কে খুশি হলেন না? খ. গোড়াতেই এস্পার-ওস্পার হতো কেন? ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অমিলগুলো দেখাও। ঘ. “উদ্দীপকের রফিউদ্দিনের মনোভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তনের চাবিকাঠি।”- উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার করো। |
ক. বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে মামা খুশি হলেন না। খ. শম্ভুনাথ বাবুর উকিল বন্ধুটি যদি বরপক্ষকে বিশেষ খাতির না করতেন তাহলে শুরুতেই একটা এস্পার-ওস্পার হতো। ➠ শম্ভুনাথ বাবুর এককালে প্রচুর টাকা-পয়সা থাকলেও বর্তমানে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁর বাড়ির উঠানে বরযাত্রীদের জায়গা সংকুলান হয় না, সমস্ত আয়োজনও মধ্যম রকমের। এসব কারণে বরপক্ষ সন্তুষ্ট নয়। এমতাবস্থায় তার উকিল বন্ধুটি যদি বরকর্তাদের প্রত্যেককে বিশেষ সমাদর না করতেন তবে বিয়েটা হয়তো শুরুতেই এস্পার-ওস্পার হতো। গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের যৌতুক নেয়ার ঘটনা এবং মামার মানসিকতার বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা যৌতুক নেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। তাই তিনি অনুপমের বিয়েতে যৌতুকের গহনা নিয়ে বড় রকমের হীনমন্যতার পরিচয় দেন। ফলে বিয়ে ভেঙে দেন পাত্রীর বাবা। ➠ উদ্দীপকের রফিউদ্দিন যৌতুক প্রথার বিরোধী ছিলেন। তাই ছেলের বিয়েতে যৌতুক চাননি। শুধু তাই নয়, মেয়ের বাবা উপহার দিলেও তিনি সেগুলো নিতে চান না। অন্যদিকে ‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখা যায়, মামা অনুপমের বিয়ের আগেই যৌতুকের কথা সেরে ফেলেন। তিনি বিয়ে বাড়িতে স্যাকরা নিয়ে উপস্থিত হন, যাতে মেয়ের বাবা তাঁকে কোনো মতেই ফাঁকি দিতে না পারেন। অর্থাৎ, মামার মানসিকতা এভাবে তৈরি হয়েছে যে, বিয়েতে যৌতুক নিতে হবে এবং যে পরিমাণ যৌতুক চাইবেন মেয়ের বাবা সে পরিমাণ যৌতুক দিতে গিয়ে তাঁকে কোনোরকম ঠকাতে পারবেন না। এছাড়াও মামা মনে করেন, যে মেয়ে ঘরে আসবে সে যেন মাথা হেঁট করে থাকে। এভাবে উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামার মানসিকতা এবং যৌতুক নেয়ার ঘটনার পার্থক্য রয়েছে। উপরন্তু উদ্দীপকে বিয়েটি সুসম্পন্ন হলেও আলোচ্য গল্পে বিয়ের আসরেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘ. উদ্দীপকের রফিউদ্দিনের যৌতুক না দেয়ার মনোভাবই ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তনের চাবিকাঠি। মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা যৌতুক নেয়ার মানসিকতাই গল্পের নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদের কারণ। মামার এরূপ মানসিকতার কারণেই মেয়ের বাবা মেয়েকে অনুপমের হাতে তুলে দেবার সাহস পান না। ➠ উদ্দীপকের রফিউদ্দিন একজন উদার মনের মানুষ। তাই মেয়ের বাবা তাদেরকে উপহার দিলেও তিনি সেগুলো নিতে নারাজ। কারণ তিনি মনে করেন, তারা উপহার বা যৌতুক নিতে আসেননি। এসেছে ছেলের জন্য মেয়েকে নিতে। অন্যদিকে, ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের বিয়েতে মেয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মেয়ের বাবার দেয়া যৌতুকের প্রতি। ফলে বিয়ে ভেঙে যায়। আর অনুপম ও কল্যাণী চিরদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ➠ উদ্দীপকের রফিউদ্দিনের যৌতুক না নেয়ার মনোভাবই পারে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তন করতে। কেননা, ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা যদি রফিউদ্দিনের মতো হতেন তাহলে অনুপমের বিয়ে ভেঙে যেত না। আর গল্পের পরিণতিও এমন করুণ হতো না। তাই আমরা বলতে পারি, রফিউদ্দিনের যৌতুকবিরোধী মনোভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাব পরিবর্তনে সক্ষম। প্রশ্নোল্লিখিত উক্তিটি যুক্তিযুক্ত। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। জোছনার বিয়ে। সে সবেমাত্র যৌবনে পা দিয়েছে। সে গরিবের মেয়ে। তার আরো দুটি বোন আছে। অনেক জায়গা থেকে তার বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু যৌতুকের জন্য তার বিয়ে হয় না। ক. অনুপমের আসল অভিভাবক কে? খ. ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয় কেন?- বুঝিয়ে লেখো। গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?- ব্যাখ্যা করো। ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল চিত্রটি উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. অনুপমের আসল অভিভাবক তার মামা। খ. ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয়। কারণ ধনীর মেয়েরা মাথা হেঁট করে স্বামীর সংসারে থাকতে নারাজ। ➠ মামা অনুপমের জন্য এমন পাত্রী খুঁজছেন যার বাবা ধনী নয়। কারণ ধনীর কন্যা সংসারের সকল যন্ত্রণা, অপমান নীরবে সহ্য করবে না। অন্যদিকে গরিবের কন্যা এসব কিছু মাথা পেতে নীরবে সহ্য করে যাবে। অনুপমের ঘরে যে মেয়ে আসবে সে মাথা হেঁট করেই আসবে- এটিই মামার প্রত্যাশা। গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে নির্দেশিত বাল্যবিয়ে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ একটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেয়া এবং বরপক্ষের দাবিকৃত যৌতুক-এ দুয়ের চাপে কন্যার পিতা পিষ্ট হন। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে কন্যার বিয়ে দিতে না পারলে সমাজে তিনি অপমানিত হবেন এবং বরপক্ষকে যৌতুক দিতে না পারলে তার কন্যা সুখী হবে না। এ দুয়ে মিলে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থা হয় শোচনীয়। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়িকা কল্যাণীকে পনেরো বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে শম্ভুনাথ বাবুকে একদিকে যৌতুকের টাকা জোগাড় করতে হয়, অন্যদিকে বরের বাবার কাছে নানাভাবে অপমানিত হতে হয়। উদ্দীপকেও বাল্যবিয়ে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থাও তাই। সেখানে কন্যার মাত্র শৈশব পার হয়েছে। কিন্তু পিতা ভালো পাত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ, কন্যার পিতা বড়লোক নন, তিনি বেশি যৌতুক দিতে পারবেন না। এছাড়া বয়স বেশি হলে যৌতুক বেশি লাগবে। ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল চিত্রটি উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে এটি আমাদের সমাজে ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। কন্যার বিয়েতে বরপক্ষের চাহিদার সীমা থাকে না। আর সেটি মেটাতে গিয়ে কন্যার পিতাকে কখনো কখনো সর্বস্বান্ত হতে হয়। যারা যৌতুক দাবি করে তারা অমানবিক ও আত্মসম্মানবোধহীন। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর পিতা নিজের সর্বস্ব দিয়ে বরপক্ষের দাবি পূরণ করেন। যখন দেখেন যে, বরের মামা কন্যার গহনা যাচাই করার জন্য স্যাকরা নিয়ে এসেছেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন বরপক্ষ কতটা অমানবিক। সেজন্যই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এমন ঘরে তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না। অন্যদিকে উদ্দীপকেও একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার পরিচয় পাওয়া যায়। কন্যার জন্য ভালো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কন্যার পিতা ধনী নন। তিনি বরপক্ষের যৌতুকের চাহিদা মেটাতে পারবেন না। ➠ যৌতুক প্রথা এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার চিত্র উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্প উভয় স্থানেই আছে। তবে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল চিত্রটি হলো যৌতুক প্রথা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে কন্যার পিতার অবস্থান, যা উদ্দীপকে নেই। এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৮ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। বিয়ের জন্য কাজী সাহেব এলেন। এলেন বর-কনে পক্ষের সাক্ষী-উকিল। এজিন আনার জন্য উকিল সাক্ষী অন্দর মহলে যেতে চাইল। এমন সময় বরের বাবা রায়বাহাদুর গর্জে উঠে বললেন, “আগে ফ্রিজ আর মোটরসাইকেল, পরে বিয়ে।” কনের বাবা অক্ষমতা প্রকাশ করলেন। বিয়ের আসর চোখের পলকে ভেঙে গেল। ক. কে আসর জমাতে অদ্বিতীয়? খ. মেয়ের বয়স পনেরো শুনে অনুপমের মামার মন ভার হলো কেন? গ. উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের মধ্যকার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরো। ঘ. উদ্দীপকের রায়বাহাদুর এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা একসূত্রে গাঁথা। -মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো। |
ক. ‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশ আসর জমাতে অদ্বিতীয়। খ. মেয়ের বয়স পনেরো শুনে অনুপমের মামার মন ভার হলো। কারণ, তিনি মনে করলেন যে, ঐ মেয়ের বংশে কোনো দোষ আছে। ➠ তখনকার সময়ে আট থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেয়ার রীতি ছিল। এ সময়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে না হলে মনে করা হতো মেয়ের বংশে কোনো দোষ আছে। যে কারণে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। যে মেয়ের সাথে অনুপমের বিয়ের কথা চলছিল তার বয়স পনেরো। পনেরো বছর বয়সেও মেয়ের বিয়ে হয়নি, এমনটি ভেবে অনুপমের মামার মন ভার হলো। গ. বরপক্ষের অমানবিক আচরণের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। ➠ যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেছে। এর কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনেক মেয়ের জীবন। যৌতুকের কারণে বরপক্ষ কখনো কখনো হয়ে ওঠে অত্যন্ত অমানবিক। মূলত যারা যৌতুক দাবি করে তারা ব্যক্তিত্বহীন, অমানুষ। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে ব্যক্তিত্বহীনতা, অমানবিকতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত অনুপমের মামা। বেছে বেছে তিনি এমন একজন পাত্রী নির্বাচন করেন যার বাবা মেয়ের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হবেন না। কল্যাণীর বাবা মেয়ের বিয়েতে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। কিন্তু বরপক্ষ বিশেষত বরের মামা তার অমানবিকতার চূড়ান্ত পরিচয় দিয়েছেন স্যাকরা নিয়ে এসে মেয়ের গহনা যাচাই করতে চেয়ে। উদ্দীপকেও বরপক্ষের এমন অমানবিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। বরপক্ষ বিয়েতে বিশ হাজার টাকা পণ এবং বহু দানসামগ্রী দাবি করে। কন্যার বাবা পুরো টাকা জোগাড় করতে পারেনি। এ ব্যাপারটি জানার পর বিবাহসভায় বরের বাবা পুরো টাকা হাতে না পেলে বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দেয়। ঘ. “উদ্দীপকের রায়বাহাদুর এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামা একসূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ যারা যৌতুক দাবি করে তারা লোভী, নিষ্ঠুর, অমানুষ। বিয়েতে নিজেদের দাবিকৃত পণ না পেলে তাদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই ধরা পড়ে। এমনকি চাহিদামাফিক যৌতুক না পেলে তারা বিয়ের আসর ত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করে না। তাদের এ ধরনের আচরণ সত্যিই অমানবিক। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে মামা অনুপমের বিয়েতে টাকা ও গহনা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন এবং কন্যার পিতা এতে সম্মত হন। বিয়ের দিন, বিয়ে অনুষ্ঠানের ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি কন্যার বাবাকে কন্যার গা থেকে গহনাগুলো খুলে আনতে বলেন; তিনি তা স্যাকরা দিয়ে যাচাই করাবেন। মামা এ ধরনের আচরণ ও কথাবার্তায় তার হীনতা, লোভ ও অমানবিকতারই পরিচয় দেন। উদ্দীপকের রায়বাহাদুরও অনুপমের মামার মতোই লোভী। তিনিও কন্যাপক্ষের কাছে অঢেল যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু কন্যার পিতা তা দিতে অসমর্থ হলে তিনি বিয়ের আসর থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা এবং উদ্দীপকের রায়বাহাদুর উভয়ই সমগোত্রীয়। তারা লোভী, হীন ও অমানবিক। এ কারণেই তারা একসূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৯ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। আমাদের অন্যতম ব্যবসায়- পাস বিক্রয়। এই পাস বিক্রেতার নাম ‘বর’ এবং ক্রেতাকে ‘শ্বশুর’ বলে। এক একটি পাসের মূল্য কত জান? “অর্ধেক রাজত্ব ও এক রাজকুমারী”। এম. এ. পাস অমূল্যরত্ন, ইহা যে-সে ক্রেতার ক্রেয় নহে। নিতাšড় স¯ড়া দরে বিক্রয় হইলে, মূল্য- এক রাজকুমারী এবং সমুদয় রাজত্ব। আমরা অলস, তরলমতি, শ্রমকাতর, কোমলাঙ্গ বাঙালি কিনা তাই ভাবিয়া দেখিয়াছি, সশরীরে পরিশ্রম করিয়া মুদ্রালাভ করা অপেক্ষা ঙষফ ভড়ড়ষ শ্বশুরের যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন করা সহজ। ক. বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী কীসের ব্রত গ্রহণ করেছে? খ. কোনো কিছুর জন্যই অনুপমকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না কেন? গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?- ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের আংশিক প্রতিফলন মাত্র।- মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো। |
ক. বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী মেয়ে শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছে। খ. মামা অনুপমদের সংসারটাকে চারদিক থেকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছেন যে, কোনোকিছুর জন্যই তাকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না। ➠ অনুপমের বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। তবে মা থাকলেও তার আসল অভিভাবক তার মামা। তিনি সংসারের সবকিছুর ভার নিজের কাঁধে নিয়েছেন, সংসারের সকল ভাবনা তার। কেননা তিনি তাঁর বিচক্ষণতা দিয়ে সবাইকে হটিয়ে অনুপমদের স্বার্থরক্ষা করে এসেছেন এতকাল। এ কারণেই কোনোকিছু নিয়ে অনুপমকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না। গ. আমাদের সমাজব্যবস্থায় পণপ্রথাকে যেভাবে বিবেচনা করা হয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের সে বিষয়টির প্রতি উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ➠ আমাদের সমাজে বরপক্ষ যৌতুককে নিজেদের প্রাপ্য হিসেবেই মনে করে। যে ছেলে যত বেশি যোগ্য, তার মূল্য তত বেশি। অর্থাৎ ছেলের যোগ্যতাকে যৌতুকের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর এমএ পাস এবং ধনী। আর সে কারণেই অনেক বড় ঘর থেকে তার বিয়ের সম্বন্ধ আসে। তার মামা অবশেষে এমন একটি মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে, যার বাবা বরকে সর্বস্ব দিতে কসুর করবে না। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি লক্ষ করি। এখানে বরকে বলা হয়েছে বিক্রেতা এবং শ্বশুরকে বলা হয়েছে ক্রেতা। মেয়ের বাবা তার সর্বস্ব দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এক অর্থে জামাই ক্রয় করেন। ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের আংশিক প্রতিফলন মাত্র।- মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ কন্যার বিয়ের কথা ভাবতে গেলে পরিবারকে প্রথমে যৌতুক নিয়ে ভাবতে হয় । কারণ মোটা অঙ্কের যৌতুক দিতে না পারলে মেয়েকে যোগ্য বরের সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না। এ বিষয়টি আমাদের সমাজে এমনভাবেই প্রচলিত হয়ে গেছে যে, এটাকে একটা প্রথাই মনে করা হয়। মূলত বরপক্ষ এটাকে নিজেদের প্রাপ্য হিসেবেই গণ্য করে থাকে। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর এমএ পাস বিধায় তার পরিবারের যৌতুকের দাবিও বেশি। কন্যার বাবাকে চাপ দিয়ে যে-কোনো মূল্যে তারা বিশেষত অনুপমের মামা তা কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করতে বদ্ধপরিকর। উদ্দীপকেও যৌতুক প্রথার এ বিষয়টি লক্ষ করি। উদ্দীপকে বিধৃত হয়েছে যে, আমাদের দেশের ছেলেরা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিনিময়ে জোরপূর্বক আদায় করে শ্বশুরের সর্বস্ব। এ ব্যবস্থাই যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল বিষয় যৌতুক প্রথা হলেও এতে আছে এই নিকৃষ্ট সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চিত্র। কল্যাণী এবং তার বাবা শম্ভুনাথ বাবু প্রতিবাদী চরিত্রের দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল যৌতুক প্রথার চিত্রই ফুটে উঠেছে। এদিক বিচার করে তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১০ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। গ্রামের সকল লোক ধুমধামের শবযাত্রা ভিড় করিয়া দেখিতে আসিল। মেয়েরা কাঁদিতে কাঁদিতে মায়ের দুই পায়ে গাঢ় করিয়া আলতা এবং মাথায় ঘন করিয়া সিন্দুর লেপিয়া দিল, বধূরা ললাট চন্দনে চর্চিত করিয়া বহুমূল্য বস্ত্রে শাশুড়ির দেহ আচ্ছাদিত করিয়া দিয়া আঁচল দিয়া তাঁহার শেষ পদধূলি মুছাইয়া লইল। পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে, কলরবে মনে হইল না এ কোনো শোকের ব্যাপার- এ যেন বড় বাড়ির গৃহিণী পঞ্চাশ বর্ষ পরে আর একবার নতুন করিয়া তাঁহার স্বামীগৃহে যাত্রা করিতেছেন। ক. কলিকাতার বাইরের বাকি জগৎটাকে মামা কী বলে জানেন? খ. কল্যাণীর পিতার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল? গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ?- ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিশেষ একটি দিককেই নির্দেশ করে, পুরো বিষয়কে নয়।”- মন্তব্যটি আলোচনা করো। |
ক. কলকাতার বাইরের বাকি জগৎটাকে মামা আন্দামান দ্বীপের অšর্ড়্গত বলে জানেন।
খ. কল্যাণীর পিতার আর্থিক অবস্থা খুবই অপ্রতুল ছিল। ➠ কল্যাণীর পিতার পূর্বপুর“ষদের আমলে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। এখন তা শূন্য বললেই হয়, যদিও তলায় সামান্য কিছু বাকি আছে। দেশে বংশ মর্যাদা রক্ষা করে চলা সহজ নয় বলে তিনি পশ্চিমে গিয়ে বাস করছেন। সেখানে গরিব গৃহস্থের মতোই থাকেন। গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ের অনুষ্ঠানাদির আড়ম্বরের বাড়াবাড়ির বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ সমাজবদ্ধ জীব মানুষ তার দৈনন্দিন নানা কার্যকলাপ ও পারস্পরিক লেনদেন এবং নানা উৎসব-অনুষ্ঠানাদিতে সামাজিকতার পরিচয় দেয়। সামাজিক এসব অনুষ্ঠান মূলত পারস্পরিক সৌহার্দ ও সৌজন্যের বহিঃপ্রকাশ। সমাজের কিছু বৈষয়িক ও স্বার্থবাদী মানুষ এমন অনুষ্ঠানগুলোকেও আড়ম্বর প্রকাশ ও অন্যের বিড়ম্বনার কারণে পরিণত করে তুলেছে।’ ➠ উদ্দীপকে মৃতের সৎকারের মতো একটি শোকাবহ অনুষ্ঠানকে অর্থের প্রাচুর্য ও তার বহিঃপ্রকাশে অনুরূপভাবে আড়ম্বরের বাড়াবাড়ি ফুটে উঠেছে। আড়ম্বর ও প্রাচুর্যের নির্দয় বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ের অনুষ্ঠানটিতেও। সেখানে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে এত বাহক যায় যে, তাদের বিদায় করতে কনেপক্ষকে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে। তারপর বিয়ের দিন ব্যান্ড, বাঁশি, শখের কনসার্ট প্রভৃতি যত প্রকার উচ্চশব্দ আছে সব একসঙ্গে মিশিয়ে বর্বর কোলাহলে বরযাত্রী দল সংগীতসরস্বতীর পদ্মবন মত্তহস্তীর ন্যায় দলিত-বিদলিত করে বিয়েবাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়েছিল। ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিশেষ একটি দিককেই নির্দেশ করে, পুরো বিষয়কে নয়- শীর্ষক বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। ➠ অর্থলোভী মানুষের কাছে অর্থই সব। আদর্শ, নৈতিক মূল্যবোধ, শিক্ষা সবকিছুই তাদের কাছে অর্থহীন। যে-কোনো মূল্যে তারা অর্থ ও নিজেদের প্রাধান্যকেই কামনা করে। তারা জীবনের সব ক্ষেত্রেই অর্থ ও প্রাধান্যের সমাগম চায়। স্কুল, কলেজে দু-চারটা পা দেয়া সন্তানকে অর্থ উপার্জনের রাস্তা হিসেবে তারা জ্ঞান করে। এতে অপরপক্ষের দুর্ভোগ ও অবমাননার কথা তাদের চেতনায় ন্যূনতম নাড়া দেয় না। ➠ উদ্দীপকে অর্থবিত্তের প্রাচুর্য প্রকাশের এক বিশেষ দিক ফুটে উঠেছে। সেখানে মৃতের সৎকারের মতো একটি শোকাবহ ঘটনা আর শোকাবহ থাকেনি, হয়ে উঠেছে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসববিশেষ। ‘অপরিচিতা’ গল্পেও বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষ কনেপক্ষের উপর তাদের অর্থবিত্তের প্রাচুর্যের এমনি উৎকট প্রদর্শনী দেখায় যে, কনেপক্ষের জন্য তা দুর্ভোগের অবমাননার বিষয়ে পরিণত হয়। উদ্দীপকটি গল্পের এ বিষয়টি তুলে ধরলেও এটি গল্পের এক বিশেষ দিক বা অংশবিশেষ মাত্র। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষের আধিপত্য, নারীর প্রতি অবমাননা, দু-চারটা পরীক্ষা পাসের বিপরীতে সামাজিক ও আর্থিক নানা সুবিধা লাভ, বৈষয়িক লোকের অর্থলিপ্সা এবং নারীর অন্তর্নিহিত শক্তির বিজয়বার্তা ঘোষিত হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে গল্পের সামাজিক অনুষ্ঠানাদির আড়ম্বরতা ফুটে উঠেছে মাত্র। এভাবে প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১১ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত সদর থানার একদল মানুষ বরযাত্রীকে গণধোলাই দিয়ে বিয়ের আসর থেকে তাড়িয়ে দেয়। আর এ বরপক্ষ ছিল বরিশালের গৌরনদী থানার অন্তর্গত চরগ্রামের অধিবাসী। বিয়ের এক পর্যায়ে কাবিননামার দেনমোহরের পরিমাণ ধার্যের বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। বরপক্ষের অস্বাভাবিক আচরণে কন্যাপক্ষের একজন রাগান্বিত হয়ে ওঠে এবং তৎক্ষণাৎ মারামারি বেঁধে যায়। শেষ পর্যন্ত বরপক্ষকে জরিমানা দিয়ে বিয়ের মঞ্চ ত্যাগ করতে হয়। ক. হবিশ কোথায় কাজ করে? খ. সম¯ড় মন যে সেই অপরিচিতার পানে ছুটিয়া গিয়াছিল- কেন? গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের সাদৃশ্য দেখাও। ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজব্যবস্থা ‘অপরিচিতা’ গল্পের সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ- বিচার করো। |
ক. হবিশ কানপুরে কাজ করে। খ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়ক অনুপমের মনটা ছুটে গেল তার কল্পলোকের রাজকন্যা কল্যাণীর দিকে। ➠ অনুপম তার মা ও মামার একান্ত অনুগত আদরের ছেলে। তাদের মুখের উপর কোনো কথা বলার বা সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস বা ইচ্ছা তার ছিল না। সংগত কারণেই আজ তার ভাগ্যে এ করুণ পরিণতি। মামার লোভী মানসিকতা আর শ্বশুরের অপমানবোধের কারণে তার বিয়েটা হতে গিয়েও হলো না। কিন্তু অনুপমের মনটা আজও কিছু একটার অভাব অনুভব করে। দিবা-রাত্রি সে তার প্রেয়সীর পানে ছুটে যেতে চায়। কিন্তু সে তো আজও অপরিচিতা, অচেনা। গ. উদ্দীপকের সাথে অপরিচিতা গল্পের কাহিনি অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ। আর এ সাদৃশ্যের বিষয় হলো যৌতুক। ➠ আমাদের দেশে যৌতুক বা পণপ্রথা একটা মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এ সমাজে মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে বাবাকে অনেক ধকল সহ্য করতে হয়। এমনকি অনেক বাবা তাঁর সঞ্চয়ের সবটুকু দিয়েও মেয়ের শ্বশুর পক্ষের মন খুশি করতে ব্যর্থ হন। তেমনি বিয়ের কাবিননামার দেনমোহরের পরিমাণ ধার্যের ব্যাপারেও অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। আর সংগত কারণে অনেক ছেলেমেয়ের জীবনে নেমে আসে অশান্তির ঘোর অন্ধকার। ➠ উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করেছি যে, এক বরযাত্রীদের দল বিয়ে করতে এসে মেয়েপক্ষের কাছে অপমানিত হয়ে ফিরে যায়। বরিশালের গৌরনদী থানার অধিবাসী বরপক্ষ ফরিদপুরের সদরে বিয়ে করতে গিয়ে এ ঘটনার শিকার হয়। তবে এক্ষেত্রে যৌতুক নয়, কাবিননামার দেনমোহরের পরিমাণ ধার্যের বিষয়ে সমস্যা বাঁধে এবং এক পর্যায়ে মারামারিও শুরু হয়। অপরদিকে ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের বিয়ে ভাঙার একমাত্র কারণ হলো মামার হীন ও লোভী দৃষ্টিভঙ্গি এবং শম্ভুনাথের অপমানবোধ। উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ উভয় ক্ষেত্রেই বরপক্ষের হীন ও লোভী মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে যায়। আর এদিক থেকে উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ঘ. উদ্দীপকের সমাজ ব্যবস্থার সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের সমাজব্যবস্থা বহুলাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এটা হলো বিয়ে সম্পর্কিত জটিলতা ও কুসংস্কার। ➠ বিয়েতে পণপ্রথা, যৌতুক, দেনমোহর ইত্যাদি বিষয়গুলো আদিকাল থেকেই আজ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে চলে আসছে। আর এ ধরনের কুপ্রথার প্রভাব আমাদের সকলকেই বহন করতে হচ্ছে। একদিকে ছেলে পক্ষের লোভী দৃষ্টিভঙ্গি, অন্যদিকে কন্যাপক্ষের না দিতে পারার দুর্বলতা। এ দু’য়ের কারণে উভয়ের জীবনে নানা প্রকার অশান্ত সৃষ্টি হয়, যার ফল উভয় পক্ষকেই বহন করতে হয়। ➠ উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি, পুরুষদের অসৎ পরিকল্পনা ও অমানবিকতার পরিচয়। কারণ উক্ত বরপক্ষের কাবিননামার দেনমোহরের পরিমাণ ধার্যের বিষয়ে নিচু মনমানসিকতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এমনকি মারামারিও হয়েছে অনেক। আবার ‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখা গেছে অনুপমের মামা তাঁর দাবি অনুযায়ী সকল গহনা পাওয়ার পরও অবিশ্বাসের কারণে শম্ভুনাথের কাছে লোভী স্বার্থপর বলে পরিচিত হয়েছে। এমনকি সংগত কারণে বিয়েটা ভেঙে যায়। ➠ উদ্দীপক ও অপরিচিতা উভয় ক্ষেত্রেই আমরা এ সমাজের মানুষের লোভ, স্বার্থপরতা ও নিচু মানসিকতার পরিচয় পেয়েছি। তাছাড়া পরিণতিও এক রকম। অর্থাৎ বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আর এর কারণ হিসেবে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্প উভয় ক্ষেত্রেই বরপক্ষের দোষ ফুটে উঠেছে। তাই উভয় সমাজ ব্যবস্থাতেই সামাজিক অসংগতি ও বিবাহরীতির জটিলতা ফুটে উঠেছে। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১২ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। ছবি দেখে পাত্রীটিকে তুহিনের বেশ পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু তার বড় মামা, যিনি তুহিনদের সংসারের আসল অভিভাবক- মেয়ে দেখে এসে বললেন, মেয়ের পরিবার বড় বেশি বড়লোক। তাই সেখানে সম্বন্ধ করা চলে না। তুহিন লাজলজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেলল, বড়লোক হওয়াটা কি দোষের? মামা চোখ নাচিয়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে বিজ্ঞের মতো বললেন, মুরব্বিরা বলে গেছেন, মেয়ে বিয়ে দেবে বড় ঘরে, কিন্তু ছেলে বিয়ে করাবে ছোট ঘরে। ছোট ঘরের মেয়ে আর মেয়ের জ্ঞাতি-স্বজনকে সহজেই চেপে রাখা যায়। আবার আদর-আপ্যায়ন ও পাওনাটাও ঘাড় ধরে আদায় করা যায়। ক. কার চেহারা চোখে পড়ার মতো? খ. “ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই।”- কেন? গ. উদ্দীপকের মামা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের সাথে কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ? ঘ. উদ্দীপকের মামা ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা চরিত্রগত দিক থেকে একই আদর্শের অনুসারী।-মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো। |
ক. শম্ভুনাথ বাবুর চেহারা চোখে পড়ার মতো । খ. সংসারের কোনো রকম দায়িত্ব কাঁধে না নিয়ে আপাত নির“পদ্রব ও নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপনকে ব্যঙ্গ করে অনুপম এ কথা বলেছে। ➠ দায়িত্ববান সামাজিক মানুষ হিসেবে সমাজে বসবাস করতে গেলে মানুষকে সৎকাজে সহযোগিতা এবং অসৎ কাজে বিরোধিতা করতে হবে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে কথক যেহেতু শিশুকাল থেকে কোলে কোলেই মানুষ এবং যৌবনেও তেমনটি রয়েছেন তাই তাকে সংসারের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হয়নি। আর বিরোধ-বিপত্তিমূলক কোনো কাজে না থেকে তথাকথিত ভালো মানুষ হওয়াটাকে কথক উপর্যুক্ত বাক্যে ব্যঙ্গ করেছেন। গ. উদ্দীপকের মামা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কথক অনুপমের মামার চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ➠ বিয়ে একটি সামাজিক নিয়ম। দুটি নর-নারীর মিলনের মাধ্যমে সামাজিক জীবনকে এগিয়ে নেয়ার এক সমাজসিদ্ধ প্রক্রিয়া। আগে দুটি নর-নারীর মধ্যকার মিলনের ব্যাপারটি একান্তভাবেই তাদের পরিবারের অভিভাবকদের মর্জিমাফিক ছিল। এ প্রথাগত বিয়েকে কেন্দ্র করে সমাজে নানা র“চি, পছন্দ, নীতি ও আচার-আচরণের সৃষ্টি হয়। ➠ উদ্দীপকে ফটো দেখে পাত্রী পছন্দ হলেও পাত্রের অভিভাবক মামা এক বিশেষ কারণে বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। তার যুক্তি হলো মেয়ের পরিবার বেশি বড়লোক। তাই সেখানে আত্মীয়তা করা চলে না। বিয়ে সম্বন্ধে উদ্দীপকের মামার এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিও দেখা যায়। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘অপরিচিতা’ গল্পেও কথক অনুপমের মামা তার আসল অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। বিয়ে সম্বন্ধে তারও বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ধনীর কন্যা তারও পছন্দ নয়। তার মতে, তাদের ঘরে যে মেয়ে আসবে সে মাথা হেঁট করে আসবে। উদ্দীপকের মামার ভিতরেও অনুরূপ মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান রয়েছে। ঘ. উদ্দীপকের মামা ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা চরিত্রগত দিক দিয়ে একই আদর্শের অনুসারী।মন্তব্যটি যথার্থ। ➠ পুরুষপ্রধান সমাজব্যবস্থার অন্যায় ও বৈষম্যটাকে স্থায়ী করতে সমাজপতিরা নানা কুসংস্কার ও প্রথা সৃষ্টি করেছে। বিয়ের মতো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠানেও তাদের কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় নানা নিয়ম-রেওয়াজ ও সংস্কার প্রথার সংযোজন ঘটিয়েছে। ➠ উদ্দীপকে দেখা যায়, তুহিনের মামা বিয়ের জন্য কনে নির্বাচন প্রসঙ্গে এক বিশেষ মতের ধারক। অর্থাৎ, বড়লোকের মেয়েকে সংসারের বউ করে আনতে অনিচ্ছুক। তুহিন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মেয়ে বিয়ে দিতে হবে বড় ঘরে আর ছেলে বিয়ে করাতে হবে ছোট ঘরে। কেননা ছোট ঘরের মেয়ে আর মেয়ের জ্ঞাতি-স্বজনকে সহজেই চেপে রাখা যায়। আবার আদর-আপ্যায়ন ও পাওনাটাও ঘাড় ধরে আদায় করা যায়। উদ্দীপকের মামার এই চারিত্রিক আদর্শ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কথক অনুপমের মামার চারিত্রিক আদর্শের সাথে মিলে যায়। ➠ ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামার ভাগ্নেকে বিয়ে করানোর ক্ষেত্রে ধনীর কন্যা পছন্দ নয়। তিনি চান সংসারে যে মেয়ে আসবে সে মাথা হেঁট করে আসবে। তিনি এমন বেয়াই চান যার টাকা নেই অথচ সে টাকা দিতে কসুর করবে না। যাকে শোষণ করা চলবে অথচ বাড়িতে এলে গুড়গুড়ির পরিবর্তে বাঁধা হুঁকায় তামাক দিলে যার নালিশ খাটবে না। উদ্দীপকের মামা এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা চরিত্রগত দিক দিয়ে একই মন-মানসিকতার ধারক-বাহক। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৩ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : অবশেষে বিবাহের দিন উপস্থিত হইল। নিতাšড় অতিরিক্ত সুদে একজন বাকি টাকাটা ধার দিতে স্বীকার করিয়াছিল, কিন্তু সময়কালে সে উপস্থিত হইল না। বিবাহ সভায় একটা তুমুল গোলযোগ বাঁধিয়া গেল। রামসুন্দর আমাদের রায়বাহাদুরের হাতে-পায়ে ধরিয়া বলিলেন, শুভকার্য সম্পন্ন হইয়া যাক, আমি নিশ্চয় টাকা শোধ করিয়া দিব। রায়বাহাদুর বলিলেন, টাকা হাতে না পাইলে বর সভাস্থ করা যাইবে না। ক. বিয়ে উপলক্ষে কন্যাপক্ষকে কোথায় আসতে হলো? খ. পণপ্রথা বলতে কী বোঝ? গ. উদ্দীপকের রামসুন্দর ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি?- ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পের একমাত্র বিষয় নয়।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. বিয়ে উপলক্ষে কন্যাপক্ষকে কলকাতায় আসতে হলো। খ. পণপ্রথা হলো বিয়ে দিতে বরপক্ষ বা কন্যাপক্ষকে বাধ্যতামূলকভাবে যৌতুক দেবার প্রথা। পণপ্রথা সমাজের একটি ঘৃণিত প্রথা। তবুও কন্যাকে সুখে রাখতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বর বা বরপক্ষকে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবন সৃজনে কন্যাপক্ষও বরপক্ষকে আর্থিক সহযোগিতা করতে রাজি হয়, যদিও পণের টাকা পরিশোধ করতে অনেক পরিবারকে পথে নামতে হয়। গ. উদ্দীপকটি ভালোভাবে পড়ে এখানে কী ধরনের চরিত্র আছে সেটি শনাক্ত করার চেষ্টা কর। তারপর ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে সেটি দেখাও ও ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকটি মনোযোগের সাথে পড়ে কী বিষয় এখানে প্রতীয়মান হয় সেটি লেখ। তারপর ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধর। মূল্যায়ন অংশে উদ্দীপক ও গল্পের সমন্বয়ে নিজের যুক্তি দ্বারা সংক্ষিপ্তাকারে প্রশ্ন মাফিক উত্তর দাও। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৪ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : তারেক আর আরিফ দুই বন্ধু। সম্প্রতি আরিফ বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত কন্যার সন্ধান করছে। এ বিষয়টি আরিফ তার কাছের বন্ধু তারেককে জানালে সে উচ্চশিক্ষিতা, সুন্দরী, চঞ্চলা এবং অন্যান্য গুণে গুণান্বিতা মুক্তার কথা ব্যক্ত করে। তারেক অনেক রসিক বলে এ বিয়ের সম্বন্ধটির কথা আরিফের চাচাকে জানিয়ে দেয় সহজেই। ক. কে লজ্জায় অনুপমের বিয়ের কথা তুলতে পারেন না? খ. হরিশ আসর জমাতে কীভাবে অদ্বিতীয়? গ. উদ্দীপকের আরিফ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চিরত্রের ধারক? ব্যাখ্যা করো। ঘ. মজমা কিংবা আসর জমাতে উদ্দীপকের তারেক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশ দুজনই পারঙ্গমতা দেখাতে পারে।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
ক. মামা লজ্জায় অনুপমের বিয়ের কথা তুলতে পারেন না। খ. রসিকমনা মানুষ বলে হরিশ আসর জমাতে অদ্বিতীয় ছিল। রসিকতা বা আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করা একজন মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যটি ছিল মূলত হরিশের চরিত্রে। সে অসাধারণ কৌতুকপ্রিয় ছিল বলে তার প্রিয় বন্ধু অনুপমের বিয়ের সম্বন্ধের বিষয়টি অনুপমের মামাকে বলতে পেরেছিল সহজেই। এভাবেই হরিশ কথায়, আচরণে, গল্পে আসর জমাত। গ. প্রথমেই উদ্দীপকটি মনোযোগের সাথে পড়ে আরিফ চরিত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে তৎপর হবে। তারপর ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের ধারক হবে উদ্দীপকের আরিফ সেটি দেখাবে। ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশের আসর জমানোর বিষয়টি উপস্থাপন কর এবং উদ্দীপকের তারেকের আসর জমানোর বিষয়টি ক্রমান্বয়ে বর্ণনা কর। তারপর মূল্যায়ন অংশে নিজস্বতার সাথে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের আলোকে চরিত্রদ্বয় তুলে ধর। |
সৃজনশীল প্রশ্ন- ১৫ |
---|
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : তবে পরানে ভালোবাসা কেন গো দিলে রূপ না দিলে যদি বিধি হে? পূজার তরে হিয়া উঠে যে ব্যাকুলিয়া পূজিব তারে গিয়া কি দিয়ে? মনে গোপনে থাকে প্রেম, যায় না দেখা- কুসুম দেয় তাই দেবতায়। ক. বিনুদাদা অনুপমের সম্পর্কে কী হন? খ. দেয়ালটুকুর আড়ালে রয়ে গেল।- কী এবং কেন? গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন বিষয়কে উপস্থাপন করেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত বিষয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের সমগ্র ভাবের ধারক নয়। -বর্ণনা করো। |
ক. বিনুদাদা অনুপমের সম্পর্কে পিস্তুতো ভাই হন। খ. কল্যাণীকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাওয়া অনুপমের কাছে দেয়ালটুকুর আড়ালে রয়ে গেল। অনুপম কল্যাণীকে নববধূর সাজ সাজতে দেখে হৃদয়ে পুলক অনুভব করে। তার স্নিগ্ধ-কোমল মুখ, হালকা গড়নের শারীরিক অবয়ব ইত্যাদি অনুপমকে বড় বেশি বিমোহিত করতে থাকে। কিন্তু অনুপমের যৌতুক সংক্রান্ত বিষয়ে বিয়ে ভেঙে গেলে কল্যাণীকে তার আর পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই বলা হয়েছে, কল্যাণীকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাওয়া অনুপমের কাছে দেয়ালটুকুর আড়ালে রয়ে গেল। গ. উদ্দীপকটি মনোযোগ সহকারে পড়। তারপর ‘অপরিচিতা’ গল্পটির কোন বিষয় উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়েছে সেটি উল্লেখ করো। ঘ. সাবধানতার সাথে উদ্দীপকটি পড়ে ভাব বোঝার চেষ্টা কর এবং ভাবটি লেখ। তারপর ‘অপরিচিতা’ গল্পটির বিভিন্ন বিষয় ক্রমান্বয়ে তুলে ধর। তারপর মূল্যায়ন অংশে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রশ্নমাফিক উত্তর দাও। |
তথ্যসূত্র: |
---|
১. সাহিত্য পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |