‘আমি কোনো আগুন্তুক নই’ কবিতার মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

আমি কোনো আগুন্তুক নই : আহসান হাবীব
আমি কোনো আগুন্তুক নই

আমি কোনো আগুন্তুক নই
আহসান হাবীব

আসমানের তারা সাক্ষী
সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই
নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী
সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী
পুবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি
মাছরাঙা আমাকে চেনে
আমি কোনো অভ্যাগত নই
খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই
আমি কোনো আগন্তুক নই।
আমি কোনো আগন্তুক নই, আমি
ছিলাম এখানে, আমি স্বাপ্নিক নিয়ম
এখানেই থাকি আর
এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা-
সারা দেশে।

আমি কোনো আগন্তুক নই। এই
খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের
পাখিরা আমাকে চেনে
তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই।
কার্তিকের ধানের মঞ্জরি সাক্ষী
সাক্ষী তার চিরোল পাতার
টলমল শিশির-সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা
নিশিন্দার ছায়া
অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী
তার ক্লান্ত চোখের আঁধার-
আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন। আমি
জমিলার মা-র
শূন্য খাঁ খাঁ রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি
সে আমাকে চেনে।

হাত রাখো বৈঠায় লাঙলে, দেখো
আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর। দেখো
মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে
লেগে আছে এই স্নিগ্ধ মাটির সুবাস
আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোনো আগন্তুক নই।
দু’পাশে ধানের খেত
সরু পথ
সামনে ধু ধু নদীর কিনার
আমার অস্তিত্বে গাঁথা। আমি এই উধাও নদীর
মুগ্ধ এক অবোধ বালক।

উৎস নির্দেশ:
‘আমি কোনো আগুন্তুক নই’ কবিতাটি আহসান হাবীব ‘দু’হাতে দুই আদিম পাথর’ (১৯৮০) কাব্যগ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত হয়েছে এবং এটি কাব্যগ্রন্থের শেষ কবিতা। এটি গদ্যছন্দে রচিত। কাব্যের প্রথম কবিতা হলো ‘সারা দিন আমি’। দু’হাতে দুই আদিম পাথর’ কাব্যগ্রন্থে মোট ৪৪টি কবিতা রয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা:
আগুন্তুক- অতিথি।
আসমান- আকাশ।
সাক্ষী- কোনো ঘটনা বা বিষয় প্রত্যক্ষকারী, প্রত্যক্ষদর্শী; কোনো কিছু নিজ চোখে দেখেছেন এমন কেউ।
জমিন- ভূমি; ভূখণ্ড।
জারুল- গাছ বিশেষ; বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে বর্ষাকালে ফোটে এমন উজ্জ্বল বেগুনি রঙের ছোটো ফুল বা তার ধূসর বাকলবিশিষ্ট ভেষজগুণসম্পন্ন মাঝারি আকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ (আদিনিবাস: চীন)।
নিশিরাইত- ‘নিশীথ রাত্রি’র গ্রামীণ কথ্যরূপ (গভীর রাত বোঝাতে)।
বিস্তর- অনেক, প্রচুর
জোনাকি- জোনাকিপোকা; জুনিপোকা; ক্রাস্তীয় অঞ্চলে সবার পরে দলবদ্ধ হয়ে ওড়ে এবং প্রজননের সংকেতরূপে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে নিয়মিতভাবে আলো বিকিরণ করে এমন উপাঙ্গবিশিষ্ট কীট।
পুবের পুকুর- পূর্বে পুকুর [‘অনন্যা’ থেকে প্রকাশিত আহসান হাবীবের কবিতাসমগ্র বইতে গুবের পুকুর বলেছে।]
ঝাকড়া- গুচ্ছময়
ডুমুর- বাংলাদেশ-সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশের পতিত জমিতে জাত এবং সবজি হিসেবে রেঁধে খাওয়া যায় এমন গুচ্ছবদ্ধ ছোটো ফল (ফলের ভেতরে থাকে বলে ফুল দেখা যায় না) বা তার খসখসে উপবৃত্তাকার পাতাবিশিষ্ট ভেষজগুণসম্পন্ন মাঝারি আকৃতির গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।
অভ্যাগত- অতিথি; নিমন্ত্রিত অতিথি; নবাগত লোক।
স্বাপ্নিক- স্বপ্নবিষয়ক
স্বাপ্নিক নিয়ম- স্বপ্নজাত নিয়ম। এটি কোনো লিখিত নিয়ম/আইন নয়। মানুষ তার কল্পনা বা স্বপ্নে একই সাথে অনেক কিছুকে ধারণ করতে পারে। বহু দূরত্ব তুচ্ছ হয় তার কাছে। সুস্থ মানুষ মাত্রই স্বপ্নতাড়িত। একেই কবি বলেছেন স্বাপ্নিক নিয়ম।
সর্বত্রই- সবখানে
খর- প্রবল
খর রৌদ্র- প্রবল রোদ
জলজ- জলে জন্মে যা।
জলজ বাতাস- এখানে জলবাহী আর্দ্রশীতল গ্রামীণ বায়ুকে বোঝানো হয়েছে।
অনাত্মীয়- আত্মীয় নয় এমন; পর।
মঞ্জরী- মুকুল বা শিষ
ধানের মঞ্জরী- ধানের শিষ বা মুকুল। [‘অনন্যা’ থেকে প্রকাশিত আহসান হাবীবের কবিতাসমগ্র বইতে ধানের মঞ্জুরী বলেছে।]
চিরোল পাতা- চেরা পাতা
নিশিন্দা- গ্রামীণ এক ধরনের গাছ। যাকে গুল্ম ও বৃক্ষের সংকর বলা চলে। নিশিন্দা প্রায় সারা দেশের গ্রামগঞ্জে প্রায় অযত্নেই জন্মে। পাঁচ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ভেষজ গুণ থাকায় বাত, ব্যথা, হাঁপানি ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর পাতা ও ডাল পোকামাকড় রোধী।
জমিলার মা-র
শূন্য খাঁ খাঁ রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি - গরিব, অভাবী শ্রেণির প্রতিনিধি জমিলার মা। তাদের রান্নাঘর শূন্যই থাকে সাধারণত। কারণ রান্না করার খাদ্য উপাদান তাদের নেই। যেহেতু রান্না করা হয় না, খাবারও খাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই থালা-বাসনও শুকনো থাকে। কবিও সেই অবস্থার কথা জানেন। স্পর্শ- ছোঁয়া।
সুবাস- মাটির মিষ্টি গন্ধ।
স্নিগ্ধ মাটির সুবাস- মায়াবী ও আকর্ষণীয় গ্রামবাংলা।
দুপাশে ধানের খেত
সরু পথ
সামনে ধু ধু নদীর কিনার
আমার অস্তিত্বে গাঁথা।- কবি গ্রামীণ জীবনেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তরের মতো ক্ষেতের সরু পথ, তার পাশে ধানের সমারোহ এবং একটু এগিয়ে গেলে বিশাল নদীর কিনার কবির মনের ভেতর, অস্থি-মজ্জায় গ্রথিত হয়ে আছে। এরা সবাই কবির খুবই চেনা-জানা।
উধাও- নিরুদ্দেশে/ অদৃশ্য।
উধাও নদী- উধাও অর্থ নিরুদ্দেশে। নদী যেহেতু নিরুদ্দেশে ধাবিত হয়, সেহেতু বহমানতা বোঝাতে কবি লিখেছেন উধাও নদী।

‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার বৈশিষ্ট্য:
১। বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা এই কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
২। এটি কয়েকটি স্তবকে বিভক্ত একটি গদ্য কবিতা। কবিতায় চরণের শেষে মিল পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে এক চরণের মাঝখানে শুরু হওয়া বাক্য পরের চরণে গিয়ে শেষ হয়েছে।
৩। কবিতাটিতে পুনরাবৃত্ত অনুপ্রাস দেখা যায়: ‘আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন’-এখানে ‘চ’, ‘জ’ ও ‘ন’ ধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এটি এক ধরনের শব্দালংকার।
৪। কবিতায় উপমার ব্যবহার হয়েছে। যেমন: ‘জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা’- এখানে জ্যোৎস্নাকে চাদরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটি এক ধরনের অর্থালংকার।
৫। কবিতাটির লয় ধীর গতির।
৬। কবিতাটি গদ্যছন্দে লেখা। সাধারণ গদ্যের চেয়ে এর বাক্যগঠন আলাদা। আবৃত্তি করার সময়ে এই কবিতার ভাষার মধ্যে এক ধরনের সুর ও সূক্ষ্ম তাল টের পাওয়া যায়।
৭। চরণগুলোর পর্ব-বিন্যাস এ রকম:
/আসমানের তারা সাক্ষী
/সাক্ষী এই জমিনের ফুল, /এই
নিশিরাইত/বাঁশবাগান/বিস্তর জোনাকি সাক্ষী
/সাক্ষী এই জারুল জামরুল, /সাক্ষী
পুবের পুকুর,/তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে/স্থির দৃষ্টি
মাছরাঙা/আমাকে চেনে
/আমি কোনো অভ্যাগত নই
/খোদার কসম/আমি ভিনদেশি পথিক নই
/আমি কোনো আগন্তুক নই।

পাঠ-পরিচিতি:
জন্মভূমির সঙ্গে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এর সবকিছুই তার মনে হয় কত চেনা, কত জানা। জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেড়ে থেকেই মানুষ তাই সমগ্র দেশকে আপন করে পায়। এই অনুভূতি তুলনাহীন। দেশ মানে তো শুধু চারপাশের প্রকৃতি নয়, একে আপন সত্তায় অনুভব করা। আর দেশকে অনুভব করলেই দেশের মানুষকেও আপন মনে হবে আমাদের। এই কবিতায় সেই অনুভবই আন্তরিক মমতায় সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন কবি। তিনি উচ্চারণ করছেন, তিনি কোনো আগন্তুক নন। তিনি যেমন ওই আসমান, জমিনের ফুল, জোনাকি, পুকুর, মাছরাঙাকে চেনেন, তেমনি তারাও তাকে চেনে। পাখি, কার্তিকের ধান কিংবা শুধু শিশির নয়, তিনি এই জনপদের মানুষকেও ভালোভাবে চেনেন। তিনি কদম আলী, জমিলার মা'র মতো মানুষের চিরচেনা স্বজন। কবি অনুভব করেন, যে-লাঙল জমিতে ফসল ফলায়, সেই লাঙল আর মাটির গন্ধ লেগে আছে তার হাতে, শরীরে। ধানক্ষেত আর ধু ধু নদীর কিনার, অর্থাৎ এই গ্রামীণ জনপদের সঙ্গেই তার জীবন বাঁধা। এই হচ্ছে তাঁর অস্তিত্ব। এই হচ্ছে মানবজীবন, জন্মভূমির সঙ্গে যে-মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত।

কবি পরিচিতি:
আহসান হাবীব ১৯১৭ সালের ২রা জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে আইএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। কর্মজীবনে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ তাঁর কবিতাকে বিশিষ্ট ব্যঞ্জনা দান করেছে। তাঁর কবিতার স্নিগ্ধতা পাঠকচিত্তে এক মধুর আবেশ সৃষ্টি করে। তিনি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর প্রথম কাব্য রাত্রিশেষ। এছাড়া ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ছোটোদের জন্য তাঁর কবিতার বই জোছনা রাতের গল্প ও ছুটির দিন দুপুরে। ‘রানী খালের সাঁকো’ তাঁর কিশোরপাঠ্য উপন্যাস। আহসান হাবীব তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য ‘বাংলা একাডেমি’ ও ‘একুশে পদক’ পুরস্কার লাভ করেন। দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক থাকাকালে ১৯৮৫ সালের ১০ই জুলাই তাঁর জীবনাবসান ঘটে।।

কর্ম-অনুশীলন:
১। প্রকৃতির সঙ্গে তোমার সম্পর্কের পরিচয় দাও।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১। আহসান হাবীব কার চিরচেনা স্বজন?
ক. পাখির
খ. কদম আলীর
গ. জোনাকির
ঘ. জমিলার মা’র
২। কবি বৈঠায় লাঙলে হাত রাখতে বলেছেন কেন?
ক. শপথ নেয়ার জন্য
খ. পরশ অনুভব করার জন্য
গ. কবিকে খুঁজে পাবার জন্য
ঘ. অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩-সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও :
রিপভ্যান উইংকল দীর্ঘ বিশ বছর পর তার গাঁয়ে ফিরে এলে তাকে কেউ চিনতে পারেনি। সবাই তার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অবশেষে তার স্বজন টম এলে সব সন্দেহের অবসান ঘটে।
৩। উদ্দীপকের টমের সঙ্গে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে-
ক. কদম আলীর
খ. জমিলার মার
গ. অবোধ বালকের
ঘ. ভিনদেশি পথিকের

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতাটির রচয়িতা আহসান হাবীব।
২. আহসান হাবীব কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : আহসান হাবীব ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. আহসান হাবীব কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : আহসান হাবীব পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
৪. আহসান হাবীব আইএ পর্যন্ত কোন কলেজে অধ্যয়ন করেন?
উত্তর : আহসান হাবীব আইএ পর্যন্ত বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে অধ্যয়ন করেন।
৫. আহসান হাবীব কর্মজীবনে পেশা হিসেবে কী বেছে নেন?
উত্তর : আহসান হাবীব কর্মজীবনে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন।
৬. আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর : আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘রাত্রিশেষ’।
৭. আহসান হাবীবের ‘রানী খালের সাঁকো’ উপন্যাসটি কাদের জন্য রচিত?
উত্তর : আহসান হাবীবের ‘রানীখালের সাঁকো’ উপন্যাসটি কিশোরদের জন্য রচিত।
৮. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি আসমানের কাকে সাক্ষী করেন?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি আসমানের তারাকে সাক্ষী করেন।
৯. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বর্ণিত পুকুর কোন দিকে?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বর্ণিত পুকুর পূর্বদিকে রয়েছে।
১০. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বর্ণিত মাছরাঙা কিসের ডালে বসে?
উত্তর : ‘আমি কোন আন্তুক নই’ কবিতায় বর্ণিত মাছরাঙা ডুমুরগাছের ডালে বসে।
১১. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি খোদার কসম করে কী বলেছেন?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি খোদার কসম করে বলেছেন আমি ভিনদেশি পথিক নই।
১২. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় ক্লান্ত বিকেলের কারা কবিকে চেনে?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় ক্লান্ত বিকেলের পাখিরা কবিকে চেনে।
১৩. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কোন মাসের ধানের মঞ্জরীকে সাক্ষী করেছেন?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কার্তিকের ধানের মঞ্জরীকে সাক্ষী করেছেন।
১৪. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় চিরোল পাতার কোনটিকে সাক্ষী করেছেন কবি?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় চিরোল পাতার টলমল শিশিরকে সাক্ষী করেছেন কবি।
১৫. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় অকাল বার্ধক্যে নত কে?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী।
১৬. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কার চিরচেনা স্বজন?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কদম আলীর চিরচেনা স্বজন।
১৭. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় শূন্য খা খা রান্নাঘর কার?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় শূন্য খা খা রান্নাঘর জমিলার মায়ের।
১৮. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বৈঠায় লাঙলে কার হাতের স্পর্শ লেগে আছে?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বৈঠায় লাঙলে কবির হাতের স্পর্শ লেগে আছে।
১৯. ‘আসমান’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘আসমান’ শব্দের অর্থ আকাশ।
২০. নিশিন্দা কী?
উত্তর : নিশিন্দা এক ধরনের গ্রামীণ গাছ।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. কবি আহসান হাবীবের কবিতা পাঠক হৃদয়ে মধুর আবেশ সৃষ্টি করে কেন?
উত্তর : কবি আহসান হাবীবের কবিতায় গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ বিশিষ্ট ব্যঞ্জনায় ফুটে ওঠায় তা পাঠক হৃদয়ে মধুর আবেশ সৃষ্টি করে।
➠ আহসান হাবীব কবিতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ স্নিগ্ধ রূপে ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর কবিতার এই স্নিগ্ধতাই পাঠক মনে মধুর আবেশ সৃষ্টি করে।
২. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় মাছরাঙা কবিকে চেনে কেন?
উত্তর : ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির প্রতিনিয়ত পুকুরপাড়ে মাছরাঙার সাথে সাক্ষাৎ হতো বলে মাছরাঙা তাঁকে চেনে।
➠ মানুষ জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেড়ে সমগ্র দেশকে আপন করে নেয়। কবি জন্মভূমিতে চারপাশের প্রকৃতিকে আপন সত্তায় অনুভব করেছেন। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সান্নিধ্যে থেকেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। তেমনি মাছরাঙার সান্নিধ্যও তিনি পেয়েছেন। তাই মাছরাঙা কবিকে চেনে।
৩. জমিলার মায়ের রান্নাঘরের থালাগুলো সব শুকনো কেন?
উত্তর : ঠিকমতো রান্না-খাওয়া হয় না বলে জমিলার মায়ের রান্নাঘরের থালাগুলো সব শুকনো।
➠ জমিলার মা গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র, অভাবী একজন মানুষ। অভাবের কারণে তার রান্নাঘর সাধারণত শূন্যই থাকে। কেননা রান্না করার খাদ্য উপাদান তাদের নেই। যেহেতু রান্না করা হয় না, সেহেতু খাবারও যাওয়া হয় না। ফলে রান্নাঘরের থালাগুলো শুকনোই থাকে।
৪. কবি জমিনের ফুল, জারুল, জামরুলকে সাক্ষী করেছেন কেন?
উত্তর : কবি জমিনের ফুল, জারুল, জামরুলকে সাক্ষী করেছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে।
➠ প্রকৃতির সাথে কবির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তিনি প্রকৃতির গাছপালা পাখপাখালি প্রভৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছেন। ফলে এদেরকে তিনি ভালো করে চেনেন। এরাও কবিকে চেনে। জমিনের ফুল, জারুল, জামরুলও প্রকৃতির উপাদান। কবি এদের সাথে কবির আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি এদেরকে সাক্ষী করেছেন।
৫. জন্মভূমির সবকিছু কবির কাছে চেনাজানা মনে হয় কেন?
উত্তর : জন্মভূমির একান্ত সান্নিধ্যে কবি বেড়ে উঠেছেন বলে জন্মভূমির সবকিছু কবির কাছে চেনাজানা মনে হয়।
➠ জন্মভূমির সাথে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। জন্মভূমির মধ্যে শেকড় গেড়ে থেকেই মানুষ সমগ্র দেশকে আপন করে পায়। জন্মভূমির প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠায় কবি প্রকৃতির সবকিছুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই কবির কাছে জন্মভূমির সবকিছু চেনাজানা মনে হয়।
৬. জন্মভূমির সাথে মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত কেন?
উত্তর : মানুষ জন্মভূমিতে জন্ম নিয়ে তার সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে বিধায় জন্মভূমির সাথে মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত।
➠ মানুষ জন্মলাভের পর তার দেশের প্রকৃতি ও মানুষের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে। প্রকৃতির নানা উপাদানের সাথে তার পরিচয় ঘটে। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে মানুষের সাথে জন্মভূমির এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক আজীবন স্থায়ী হয়। আর এভাবেই জন্মভূমির সাথে মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত।
৭. কবি নিজেকে কদম আলীর চিরচেনা স্বজন বলেছেন কেন?
উত্তর : কবি ছোটবেলা থেকেই কদম আলীকে ভালোভাবে চেনেন বলে নিজেকে কদম আলীর চিরচেনা স্বজন বলেছেন।
➠ জন্মভূমির সাথে কবির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনি জন্মভূমির প্রকৃতি যেমন চেনেন, তেমনি জন্মভূমির মানুষগুলোকেও চেনেন। গ্রামীণ জনপদের সাথেই তাঁর জীবন বাঁধা। এই গ্রামীণ জনপদের এক দরিদ্র প্রতিনিধি কদম আলী। কদম আলীর সাথে কবির অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। এজন্য তিনি নিজেকে কদম আলীর চিরচেনা স্বজন বলেছেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ১
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াইতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা বায়; রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।
ক. বিস্তর জোনাকি কোথায় দেখা যায়?
খ. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবি একথা বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা চিত্রের সাথে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের সঙ্গে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার চেতনাগত বৈসাদৃশ্যই বেশি”- যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
ক. বিস্তর জোনাকি বাঁশবাগানে দেখা যায়।
খ. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’-কবি এ কথা বলেছেন এটি বোঝাতে যে, তিনি বাইরে থেকে আসা কোনো মানুষ নন।
➠ কবি এ মাটির সন্তান। এ জনপদের মানুষ তাঁর চিরচেনা। জন্মভূমির সাথে তিনি গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাই তিনি কবিতায় বারবার উচ্চারণ করেছেন এদেশে তিনি কোনো আগুন্তক নন। কবির এই বক্তব্য গভীর দেশপ্রেমের পরিচায়ক।

গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
➠ কবি আহসান হাবীব তাঁর ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনবদ্য বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবে নীল আসমান, জমিনের ফুল, জোনাকি, পুকুর, মাছরাঙার কথা বলেছেন। পাখি, কার্তিকের ধান কিংবা শিশিরের সাথে কবির ব্যাপক জানাশোনা। যে লাঙল জমিতে ফসল ফলায় সেই লাঙল আর মাটির গন্ধ লেগে আছে তার হাতে-শরীরে। ধূ-ধূ নদীর কিনার, ধানখেত আর গ্রামীণ জনপদের সাথে তার জীবন বাঁধা। জারুল, জামরুল, ঝাঁকড়া ডুমুরের ডাল, জল, বাতাস সবই সাক্ষ্য দেয় কবি এ মাটির সন্তান।
➠ উদ্দীপকেও রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক মনোরম দৃশ্যকল্প। উদ্দীপকের কবি এক নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন। কবি মৃত্যুর পর যেন আবার ফিরে আসতে চান এই সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে। বাংলার নদী, মাঠ, খেত, উড়ন্ত সুদর্শন, লক্ষ্মীপেঁচার ডাক, কবিকে মুগ্ধ করে। উঠানের ঘাসে শিশুর ধান ছড়ানো, রূপসার ঘোলা জলে ছেঁড়া পালে কিশোরের ডিঙা বাওয়া, ধবল বকের নীড়ে ছুটে যাওয়া বর্ণনা আমাদের বিমোহিত করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায়ও লক্ষণীয়।

ঘ. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি নিজের মাটিতে অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবি মৃত্যুর পরে এই বাংলায় আবার ফিরে আসার কামনা ব্যক্ত করেছেন। তাই উভয়ের মাঝে চেতনাগত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
➠ মাতৃস্নেহে লালিত ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি সকলের কাছে তাঁর অস্তিত্বের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি বাইরে থেকে আসা কোনো মানুষ নন। তিনি এ মাটিরই সন্তান। নদী, গাছপালা, বাতাস, মাটি সবকিছুই তার সাক্ষী। এদেশের মাছরাঙা, জোনাকি, ধানের মঞ্জরী মানুষ সবকিছু কবিকে যেমন চেনে, কবিও তেমনি সবকিছুকে চেনেন। জন্মভূমির সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি কবিতায় তাঁর শেকড়ের সন্ধান করেছেন।
➠ উদ্দীপকের কবি মৃত্যুর পর আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান। কারণ তিনি বাংলার রূপে মুগ্ধ। এ দেশের নদী, মাঠ, ফসলের খেত, পাল তোলা নৌকাসহ দৃষ্টিনন্দন সব কিছুই কবির মনে গভীর অনভূতি জাগিয়ে তোলে। কবি তাই মরণের পর এই প্রকৃতির বুকে মিশে থাকতে চান। আবার তিনি দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবগাহন করতে চান। কবির এই মনোভাব দেশপ্রেম থেকে জাত।
➠ ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির জন্মভূমিতে কবির অস্তিত্ব বিদ্যমান। তিনি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গের মতোই মিলেমিশে আছেন। তিনি নিজ পরিবেশে থেকে দেশকে ভালোবেসে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবি মরণের পর আবার এই প্রিয় বাংলায় ফিরে আসতে চান। তিনি কল্পনার জগতে ভালোবাসার জাল বিস্তার করেছেন। তাই চেতনাগত দিক থেকে উদ্দীপক ও কবিতায় বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ২
আমি বাংলায় গান গাই,
আমি বাংলার গান গাই,
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই
বাংলায় খুঁজে পাই।
আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন,
আমি বাংলায় বাঁধি সুর-
আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে
হেঁটেছি এতটা দূর।
ক. মাছরাঙা কাকে চেনে?
খ. কদম আলী অকাল বার্ধক্যে নত কেন?
গ. উদ্দীপক কবিতাংশটি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কোন চেতনাকে ধারণ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার মূলভাবের সম্পূর্ণ প্রকাশক কি? তোমার মতামত দাও।
ক. মাছরাঙা কবিকে চেনে।
খ. অভাব ও পুষ্টিহীনতায় কদম আলী অকাল বার্ধক্যে নত।
➠ ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কদম আলী গ্রামীণ সমাজের অভাবী মানুষের প্রতিনিধি। সংসারের অভাবের কারণে তাঁর মতো মানুষদের ঠিকমতো আহার জোটে না। ফলে শরীরের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয় না। আর এ কারণেই কদম আলী অকাল বার্ধক্যে নত।

গ. উদ্দীপক কবিতাংশটি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বর্ণিত জন্মভূমির সাথে মানুষের গভীর সম্পর্কের চেতনাকে ধারণ করে।
➠ জন্মভূমির সাথে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এটি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি গভীরভাবে ব্যক্ত করেছেন। কবি এদেশে বাস করে আপন সত্তায় সমগ্র দেশকে ধারণ করেছেন। এদেশের মাঠ-ঘাট, ফুল-ফল, মানুষ, পাখি, গাছপালা, মানুষ জন সবকিছুকেই কবি একান্ত আপনার করে নিয়েছেন। সকলের সাথে তিনি গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। জন্মভূমির সাথে গভীর সম্পর্কের এই চেতনাকে কবি আপন সত্তায় লালন করে চলেছেন।
➠ উদ্দীপক কবিতায় বর্ণিত এই জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসার দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কবি বাংলাকে গভীরভাবে আপন সত্তায় ধারণ করেছেন। ফলে কবির চলাফেরা, হাসি-গান, আনন্দ-বেদনা, সবকিছুর মাঝেই বাংলাকে খুঁজে পেয়েছেন। দেশকে গভীরভাবে অনুভব করলেই নিজের অস্তিত্বে তাকে অনুভব করা যায়। উদ্দীপকের কবি দেশকে নিজের অস্তিত্বে অনুভব করেছেন। আর ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির মাঝে এই চেতনাই প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার মতো জন্মভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ অনুরাগ ও আত্মিক সম্পর্কের দিকটি তুলে ধরায় তা কবিতার সম্পূর্ণ মূলভাবের প্রকাশক।
➠ ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় জন্মভূমির সাথে কবির গভীর সম্পর্কের দিকটিই প্রধান হয়ে উঠেছে। কবি জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেঁড়ে সমগ্র দেশকে আপন করে নিয়েছেন। তিনি নিজের অনুভূতি দিয়ে চারপাশের সবকিছুকে অনুভব করেন। কবির এই অনুভবই কবিতায় মূলবক্তব্য হয়ে ফুটে উঠেছে।
➠ উদ্দীপকের প্রধান বিষয় হলো কবির দেশপ্রেমের চেতনা। সেখানে কবি জন্মভূমি বাংলার মাঝে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। আপন করে নিয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট, প্রকৃতিকে। বাংলার সাথে তার গড়ে উঠেছে আজীবনের সম্পর্ক। সে কারণেই সবকিছুতে বারবার বাংলাকেই খুঁজে পান। দেশের সাথে এই গভীর সম্পর্কের দিকটিই উদ্দীপকের মূল বক্তব্য হয়ে উঠেছে।
➠ ‘আমি কোনো আগুন্তক নই’ এবং উদ্দীপক উভয়ের আলোচনার বিষয় হলো দেশেপ্রেমের চেতনা। উভয় কবির মাঝেই গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে জন্মভূমির সাথে গভীর সম্পর্কের দিকটি। কবিতার কবি বারবার নিজেকে এ মাটির সন্তান বলে ঘোষণা করেছেন। উদ্দীপক কবিতাংশের কবিও নিজের অস্তিত্বে গভীরভাবে অনুভব করেন বাংলাকে। বাংলাকে ঘিরেই তাঁর সব স্বপ্ন, সাধনা।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
জর্জের জন্ম ইউরোপের দেশ স্পেনে। ১৯৮৫ সালে মাদকাসক্তদের নিরাময়ের ব্যাপারে কাজ করার জন্য তিনি বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও মানুষের অন্তরঙ্গ ব্যবহার তাঁকে মুগ্ধ করে। তাই তিনি এই দেশেই স্থায়ী বসতি গড়েছেন। বাংলাদেশের সাথে তাঁর প্রাণ বাঁধা পড়েছে গভীরভাবে। এ দেশের সাথে যেন তাঁর চিরকালের পরিচয়।
ক. ‘আমি কোনো আগুন্তক নই’ কবিতায় জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা কী?
খ. ক্লান্ত বিকেলের পাখিরা কবিকে চেনে কেন?
গ. উদ্দীপকের জর্জের এদেশে অবস্থানের সাথে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির অবস্থানের অমিল ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উক্ত পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশের প্রতি জর্জ ও কবির অনুভূতি একই’- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
ক. ‘আমি কোনো আগুন্তক নই’ কবিতায় জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা নিশিন্দার ছায়া।
খ. কবি প্রকৃতি সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠায় ক্লান্ত বিকেলের পাখিদের সাথে প্রতিনিয়ত তাঁর দেখা হয় বলে তারা কবিকে চেনে।
➠ কবি জন্মভূমিকে নিজের অস্তিত্বে ধারণ করেছেন। জন্মভূমির প্রকৃতির মাঠ-ঘাট, খেত-খামার, পশুপাখি সবকিছুকেই কবি কাছে থেকে দেখেছেন। তিনি বিকেলে ক্লান্ত পাখিদের নীড়ে ফেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। তারাও কবিকে দেখেছে। এজন্য এই পাখিরা কবিকে চেনে।

গ. উদ্দীপকের জর্জ অন্য দেশ থেকে এদেশে এসে অবস্থান করেছেন। আর ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি জন্ম থেকে এদেশে অবস্থান করায় তাঁদের মধ্যে অমিল ফুটে ওঠে।
➠ জন্মভূমির সাথে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। তাই জন্মভূমির সবকিছুকেই মানুষের চেনা মনে হয়। জন্মভূমির মাঝে শিকড় গেড়ে থেকেই সমগ্র দেশকে আপন করে পাওয়া যায়। জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকলে তাকে একান্ত আপনার মনে হয়। জন্মভূমির প্রতি এই গভীর অনুভূতি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির মাঝে প্রকাশিত হয়েছে। কবি এদেশেই জন্মেছেন। তাই এদেশের সবকিছু তাঁর চেনাজানা।
➠ উদ্দীপকের জর্জের সাথে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য ফুটে উঠেছে। জর্জের জন্মভূমি হলো স্পেন। তিনি একটি কাজে বাংলাদেশে এসে স্থায়ী হয়েছেন। এদেশের প্রকৃতি ও জনজীবন উভয়ের মনে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়েছে। দু’জনেই এদেশকে ভালোবেসেছেন অন্তর দিয়ে। কিন্তু ‘আমি কোনো আগুন্তক নই’ কবিতার বর্ণিত কবি ভিনদেশি নন। ফলে কবিতার কবি এবং উদ্দীপকের জর্জের মাঝে অবস্থানগত ভিন্নতা ফুটে উঠেছে।

ঘ. অবস্থানগত ভিন্নতা থাকলেও উদ্দীপকের জর্জ এবং ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি এদেশকে আপন সত্তায় অনুভব করেছেন।
➠ ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় দেশের প্রতি কবি গভীর অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। দেশের সাথে তার আজীবনের সম্পর্ক। তিনি তাঁর সত্তায় সমগ্র দেশকে আপন করে পেয়েছেন। তাই তো তিনি বলেছেন, আমি কোনো আগন্তুক নই। কবি এদেশের আসমান, জমিন, ফুল, ফল, পাখি, মানুষ সবকিছুকে চেনেন। তারাও কবিকে চেনে। কবি তাদের চিরচেনা স্বজন। দেশের প্রতি কবির এ গভীর অনুভূতি তাকে সকলের কাছে আপন করে তুলেছে।
➠ উদ্দীপকের জর্জ অন্য দেশ থেকে এলেও তিনি এদেশের সাথে বাঁধা পড়েছেন গভীরভাবে। এদেশের মানুষের সাথে মিশে তাদের সাথে জর্জের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। জর্জ আপন অনুভূতি দিয়ে গভীরভাবে এদেশকে অনুভব করেছেন। ফলে এদেশে স্থায়ী বসতি গড়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। বসতি গড়ার ফলে জর্জ এদেশের সবকিছুকে আপন করে নিয়েছেন। সকলে তার পরিচিতজন হয়ে উঠেছে।
➠ উদ্দীপকের জর্জের অনুভূতি ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির অনুভূতিতেও প্রকাশ পেয়েছে। জর্জ যেমন এদেশের সাথে গভীরভাবে বাঁধা পড়েছেন, কবিও তাই। এদেশের প্রকৃতি ও জনজীবন উভয়ের মনে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়েছে। দুজনেই এদেশকে ভালোবেসেছেন অন্তর দিয়ে। এজন্যই এদেশের সবকিছু তাঁদের কাছে আপন বলে মনে হয়েছে। তারা উভয়ই এদেশকে গভীরভাবে আপন সত্তায় অনুভব করেছেন। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪
শাকিল সাহেবের জন্ম হয়েছিল বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। গ্রামের এক স্কুলেই তাঁর পড়ালেখা শুরু। তারপর শহরের কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশেষে বর্তমানে আমেরিকায় আছেন। মাঝে মাঝে দেশে এলেও গ্রামে কখনো যান না। তাঁর নাকি গ্রাম ভালো লাগে না। তাছাড়া এদেশের কোনো সাধারণ মানুষের সাথে তিনি মিশতে চান না। ব্যবসার কাজে দেশে এলে কয়েক দিন শহরের দামি হোটেলে থেকে আবার আমেরিকা চলে যান।
ক. কবি আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
খ. ‘আমি কোনো অভ্যাগত নই’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের শাকিলের দেশের প্রতি যে বিরূপ ধারণা তার সাথে তোমার পঠিত ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির তুলনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের শাকিল সাহেব এবং তোমার পঠিত আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির জন্ম একইসূত্রে গাঁথা, কিন্তু মানসিকতায় ভিন্ন।”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
ক. কবি আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘রাত্রিশেষ’।
খ. ‘আমি কোনো অভ্যাগত নই’- বাক্যটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে কবি এদেশের কোনো আমন্ত্রিত অতিথি নন।
➠ জন্মভূমি মায়ের মতো। জন্মভূমির সাথে মানুষের তাই গভীর সম্পর্ক। কবিরও রয়েছে মাতৃভূমির প্রতি প্রবল অনুরাগ। নিজভূমির সবকিছুই তিন চেনেন। তিনিও সবার পরিচিত, অতি আপনজন। তাই তিনি বলেছেন “আমি কোনো অভ্যাগত নই।” অর্থাৎ জন্মস্থানের সথে তাঁর সম্পর্ক বহু পুরনো।

গ. দেশের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করার কারণে উদ্দীপকের শাকিলের মনোভাব আমি কোনো আগন্তুক নই। কবিতার কবির মনোভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত।
➠ ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে। কবি তাঁর আপন সত্তায় এদেশের চারপাশকে উপলব্ধি করেছেন। জন্মভূমির ‘মানুষকেই শুধু নয়, ফুলফল, গাছপালা, নদী, পাখি, জোনাকি সব কিছুকেই অনুভব করেছেন গভীরভাবে। তিনি বলতে চেয়েছেন সবকিছু তাঁর পরিচিত এবং তিনিও সবার পরিচিত।
➠ উদ্দীপকে শাকিল সাহেবের জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামে হলেও গ্রাম তাকে টানে না। গ্রামের মানুষ ও প্রকৃতিকে তিনি ভালোবাসতে পারেননি। তাই এসবের প্রতি তিনি কোনো আকর্ষণ অনুভব করেন না। তিনি শিক্ষিত হয়েছেন বটে কিন্তু তার ভেতর দেশপ্রেম জাগ্রত হয়নি। অন্যদিকে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি দেশের ধুলাবালিকেও ভালোবাসেন। দেশের প্রতি এই মমত্ববোধের জাগরণ আমরা উদ্দীপকের শাকিল সাহেবের ক্ষেত্রে লক্ষ করি না।

ঘ. উদ্দীপকে শাকিল সাহেব ও ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির জন্মস্থান বঙ্গভূমি হলেও দেশকে ভালোবাসার মানসিকতার মাঝে ভিন্নতা রয়েছে।
➠ ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি তাঁর জন্মভূমির একান্ত স্বজনদের বলতে চেয়েছেন, আমি তোমাদের লোক। তিনি তাঁর জন্মভূমির অপত্য স্নেহে বেড়ে উঠেছেন। গ্রামীণ চিরচেনা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি প্রকৃতির সবকিছুকে সাক্ষী রেখে বলেছেন, তিনি এ মাটির সন্তান।
➠ উদ্দীপকের শাকিল সাহেব জন্মভূমিতে দীর্ঘসময় পার করে বর্তমানে আমেরিকাপ্রবাসী। তার অতীত জীবন এবং গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ সৌন্দর্য তাকে কাছে টানে না। কারণ তিনি সেই অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছেন অথবা তিনি তাঁর জন্মভূমিকে কোনো দিন সেভাবে ভালোই বাসেননি। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির মাঝে এই মনোভাবের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়।
➠ উদ্দীপকে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতা বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই, শাকিল সাহেব প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নিলেও তিনি দেশের সন্তান হয়ে উঠতে পারেননি। ব্যক্তিগত কাজে দেশে এসেও দেশের প্রকৃতি ও জনজীবনের মূলকেন্দ্র অর্থাৎ গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। অর্থাৎ দেশের সাথে তাঁর সম্পর্কটি খুব গভীর নয়। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি জন্মভূমির মায়ায় বাঁধা পড়েছেন। জন্মভূমির প্রতি তার আকর্ষণ প্রবল। তাই জন্মভূমির বিভিন্ন উপকরণকে স্মরণ করেছেন। জন্মভূমির মায়ামন্ত্র বলে তিনি সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ। দেশপ্রেমের চেতনা উদ্দীপ্ত হয়ে তাই তিনি ঘোষণা করেছেন ‘আমি কোনো আগন্তুক নই।’ আলোচনাটি থেকে এটি স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের শাকিল সাহেব ও ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামে হলেও দুজনের মানসিকতায় ভিন্নতা রয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
i. তোমার ধূলিতে গড়া এ দেহ আমার
তোমার ধূলিতে কালে মিশিবে আবার।
ii. সার্থক জনম আমার জন্মেছি এ দেশে।
সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালোবেসে।
ক. কবি আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
খ. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’- কবি এ কথা বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপক (i) -এর যে ভাব ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় ফুটে উঠেছে- তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকদ্বয় ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করেছে”- বিশ্লেষণ করো।
ক. কবি আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম ‘রাত্রি শেষ’।
খ. ১ নং প্রশ্নের (খ) উত্তর দেখো।

গ. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় উল্লিখিত জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসাই উদ্দীপক (i) -এ প্রকাশিত হয়েছে।
➠ কবি আহসান হাবীব তাঁর ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় নানাভাবে নানা উপমায় বলতে চেয়েছেন, তিনি এ মাটির সন্তান। তিনি ভিন্ন দেশ থেকে আসেননি। কারণ এ দেশের গাছপালা, নদী-নালা, ফুল, পাখি সবই তাঁর অতি পরিচিত, চির আপন। তাঁর শরীরে লেগে আছে জন্মভূমির স্নিগ্ধ মাটির সুবাস। তাই কবি এ মাটিতে কোনো আগন্তুক নন।
➠ উদ্দীপক (i) -এ প্রকাশিত হয়েছে দেশের প্রতি গভীর টান ও মমত্ববোধ। উদ্দীপকের মাটির প্রতিটি ধূলিকণার সাথে কবির যেন নিবিড় সম্পর্ক। তিনি মনে করেন তাঁর দেহ জন্মভূমির ধূলিকণায় গড়া এবং একসময় এই মাটিতেই তিনি মিশে যাবেন। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় অনুরূপ ভাব প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের দুটি অংশেই জন্মভূমির প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা ও মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে, যা ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।
➠ জন্মভূমির সাথে মানুষের সম্পর্ক চিরন্তন। কারণ এই চিরচেনা পরিবেশে সে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠে। জন্মভূমির প্রতি মানুষের তাই থাকে নাড়ির টান। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবি অত্যন্ত আস্থার সাথে উচ্চারণ করেছেন তিনি কোনো আগন্তুক নন। কারণ এই দেশের আসমান, জমিন, ফুল, ফল, জোনাকি, মাছরাঙা সকলকেই তিনি চেনেন, তারাও তাঁকে ভালোভাবে চেনে । তিনি অনুভব করেন জন্মভূমির মাটির সুঘ্রাণ মেখে আছে তাঁর শরীরে। কাজেই তিনি এই মাটি ও মানুষের অতি আপনজন।
➠ আলোচ্য দুটি উদ্দীপকেই জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপক (i) -এ বলা হয়েছে, জন্মভূমির ধুলোবালিতে কবির দেহ গড়া। আপন জন্মভূমির মাটিতেই তিনি একদিন মিশে যেতে চান। উদ্দীপক (ii) -এ এই মাটিতে জন্মে কবি নিজের জীবনকে সার্থক মনে করেন। জন্মভূমিকে ভালোবাসতে পেরে তিনি গর্ব অনুভব করেন। আর ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায়ও জন্মভূমি তথা দেশমাতৃকাকে গভীরভাবে ভালোবাসার কথা ব্যক্ত হয়েছে।
➠ দেশপ্রেমিকের মন মাতৃভূমির স্পর্শ পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকে। জন্মভূমির আলো-হাওয়া, স্বদেশের মানুষের সংস্পর্শ তার প্রাণ জুড়ায়। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার কবির ক্ষেত্রে এ বিষয়টি স্পষ্টরূপে ধরা পড়ে। জন্মভূমির প্রতি কবিতায় তাঁর সীমাহীন আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকের উল্লিখিত উভয় কবিতাংশ মিলে জন্মভূমির শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছে। জন্মভূমির কোলে জন্ম নিয়ে ধন্য হওয়ার অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে (ii) নং অংশে। (i) নং অংশের কবি জন্মভূমির মাটিতেই শেষ আশ্রয় খুঁজে নিতে চান। দেশপ্রেমের গভীরতা প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপকের উভয় অংশেই। তারা মিলিতভাবে ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতার মূলসুরকে ধারণ করেছে সম্পূর্ণরূপে।

তথ্যসূত্র :
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম , ২০১৫।

Next Post Previous Post