‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মূলপাঠ, শব্দার্থ, মূলভাব, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
মোতাহের হোসেন চৌধুরী

মানুষের জীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জীবসত্তা সেই ঘরের নিচের তলা, আর মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব ওপরের তলা। জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাই আমাদের মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্য জীবসত্তার ঘরেও সে কাজ করে; ক্ষুৎপিপাসার ব্যাপারটি মানবিক করে তোলা, তার অন্যতম কাজ। কিন্তু তার আসল কাজ হচ্ছে মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অন্য কথায়, শিক্ষার যেমন প্রয়োজনের দিক আছে, তেমনি অপ্রয়োজনীয় দিকও আছে। আর অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক। সে শেখায় কী করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়, কী করে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করা যায়। শিক্ষার এ দিকটা যে বড়ো হয়ে ওঠে না, তার কারণ ভুল শিক্ষা ও নিচের তলায় বিশৃঙ্খলা জীবসত্তার ঘরটি এমন বিশৃঙ্খল হয়ে আছে যে, হতভাগ্য মানুষকে সব সময়ই সে সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হয়। ওপরের তলার কথা সে মনেই আনতে পারে না। অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি। ধনী-দরিদ্র সকলেরই অন্তরে সেই একই ধ্বনি উত্থিত হচ্ছে চাই, চাই, আরও চাই। তাই অন্নচিন্তা তথা অর্থচিন্তা থেকে মানুষ মুক্তি না পেলে, অর্থসাধনাই জীবনসাধনা নয়- একথা মানুষকে ভালো করে বোঝাতে না পারলে মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে পারবে না। ফলে শিক্ষার সুফল হবে ব্যক্তিগত, এখানে সেখানে দুএকটি মানুষ শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যটি উপলব্ধি করতে পারবে, কিন্তু বেশির ভাগ লোকই যে তিমিরে সে তিমিরেই থেকে যাবে।

তাই অন্নচিন্তার নিগড় থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার যে চেষ্টা চলেছে তা অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু লক্ষ্য সম্বন্ধে সচেতন না থাকলে সে চেষ্টাও মানুষকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মূল্য কতটুকু? প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলে আলো হাওয়ার স্বাদবঞ্চিত মানুষ কারাগারকেই স্বর্গতুল্য মনে করে। কিন্তু তাই বলে যে তা সত্য সত্যই স্বর্গ হয়ে যাবে, তা নয়। বাইরের আলো হাওয়ার স্বাদ পাওয়া মানুষ প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলেও কারাগারকে কারাগারই মনে করবে, এবং কী করে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাই হবে তার একমাত্র চিন্তা। আকাশ-বাতাসের ডাকে যে পক্ষী আকুল, সে কি খাঁচায় বন্দি হবে সহজে দানাপানি পাওয়ার লোভে? অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও মুক্তি বড়, এই বোধটি মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।

চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে মুক্তি নেই। মানুষের অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে এই মুক্তির দিকে লক্ষ রেখে। ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না বলেই ক্ষুৎপিপাসার তৃপ্তির প্রয়োজন। একটা বড়ো লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখেই অন্নবস্ত্রের সমাধান করা ভালো, নইলে আমাদের বেশি দূর নিয়ে যাবে না।

তাই মুক্তির জন্য দুটি উপায় অবলম্বন করতে হবে। একটি অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা, আরেকটি শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা মানুষকে মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ানোর সাধনা। এ উভয়বিধ চেষ্টার ফলেই মানবজীবনের উন্নয়ন সম্ভব। শুধু অন্নবস্ত্রের সমস্যাকে বড়ো করে তুললে সুফল পাওয়া যাবে না। আবার শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করলে সুদীর্ঘ সময়ের দরকার। মনুষ্যত্বের স্বাদ না পেলে অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েও মানুষ যেখানে আছে সেখানেই পড়ে থাকতে পারে; আবার শিক্ষাদীক্ষার মারফতে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলেও অন্নবস্ত্রের দুশ্চিন্তায় মনুষ্যত্বের সাধনা ব্যর্থ হওয়া অসম্ভব নয়।

কোনো ভারী জিনিসকে ওপরে তুলতে হলে তাকে নিচের থেকে ঠেলতে হয়, আবার ওপর থেকে টানতেও হয়; শুধু নিচের থেকে ঠেললে তাকে আশানুরূপ ওপরে ওঠানো যায় না। মানব উন্নয়নের ব্যাপারে শিক্ষা সেই ওপর থেকে টানা, আর সুশৃঙ্খল সমাজ-ব্যবস্থা নিচের থেকে ঠেলা। অনেকে মিলে খুব জোরে ওপরের থেকে টানলে নিচের ঠেলা ছাড়াও কোনো জিনিস ওপরে ওঠানো যায়- কিন্তু শুধু নিচের ঠেলায় বেশিদূর ওঠানো যায় না। তেমনি আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে শিক্ষার দ্বারাই জীবনের উন্নয়ন সম্ভব, কিন্তু শুধু সমাজব্যবস্থার সুশৃঙ্খলতার দ্বারা তা সম্ভব নয়। শিক্ষাদীক্ষার ফলে সত্যিকার মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলে অন্ন-বস্ত্রের সমাধান সহজেই হতে পারে। কেননা অন্ন-বস্ত্রের অব্যবস্থার মূলে লোভ, আর শিক্ষাদীক্ষার ফলে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, 'লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু' কথাটা বুলিমাত্র নয়, সত্য। লোভের ফলে যে মানুষের আত্মিক মৃত্যু ঘটে, অনুভূতির জগতে সে ফতুর হয়ে পড়ে, শিক্ষা মানুষকে সে-কথা জানিয়ে দেয় বলে মানুষ লোভের ফাঁদে ধরা দিতে ভয় পায়। ছোটো জিনিসের মোহে বড়ো জিনিস হারাতে যে দুঃখ বোধ করে না, সে আর যাই হোক, শিক্ষিত নয়। শিক্ষা তার বাইরের ব্যাপার, অন্তরের ব্যাপার হয়ে ওঠে নি। লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়। শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি; জ্ঞান পরিবেশন মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় হিসেবেই আসে। তাই যেখানে মূল্যবোধের মূল্য পাওয়া হয় না, সেখানে শিক্ষা নেই।

শিক্ষার মারফতে মূল্যবোধ তথা মনুষ্যত্ব লাভ করা যায়; তথাপি অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থাও প্রয়োজনীয়। তা না হলে জীবনের উন্নয়নে অনেক বিলম্ব ঘটবে। মনুষ্যত্বের তাগিদে মানুষকে উন্নত করে তোলার চেষ্টা ভালো; কিন্তু প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি না পেলে মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে গিয়ে পৌঁছতে দেরি হয় বলে অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান একান্ত প্রয়োজন। পায়ের কাঁটার দিকে বারবার নজর দিতে হলে হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায় না, তেমনি অন্নবস্ত্রের চিন্তায় হামেশা বিব্রত হতে হলে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই দু দিক থেকেই কাজ চলা দরকার। একদিকে অন্নবস্ত্রের চিন্তার বেড়ি উন্মোচন, অপরদিকে মনুষ্যত্বের আহ্বান, উভয়ই প্রয়োজনীয়। নইলে বেড়িমুক্ত হয়েও মানুষ ওপরে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করবে না, অথবা মনুষ্যত্বের আহ্বান সত্ত্বেও ওপরে যাওয়ার স্বাধীনতার অভাব বোধ করবে, পিঞ্জরাবদ্ধ পাখির মতো উড়বার আকাঙ্ক্ষায় পাখা ঝাপটাবে, কিন্তু উড়তে পারবে না।

উৎস নির্দেশ :
'শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব' প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সংস্কৃতি-কথা গ্রন্থের 'মনুষ্যত্ব' শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ।

শব্দার্থ ও টীকা :
➠ নিগড়- শিকল, বেড়ি।
➠ তিমির- অন্ধকার।
➠ ক্ষুৎপিপাসা- ক্ষুধা ও তৃষ্ণা।
➠ ফতুর- নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত।
➠ লেফাফাদুরস্তি- বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীনতা কিন্তু ভিতরে ফাঁপা।
➠ বেড়ি- শিকল, শৃঙ্খল।
➠ হামেশা- সবসময়, সর্বক্ষণ।
➠ উন্মোচন- উন্মুক্ত করা।
➠ পিঞ্জরবন্ধ- খাঁচায় বন্দি।
➠ জীবসত্তা- জীবের অস্তিত্ব।
মানবসত্তা- মানুষের অস্তিত্ব। মানবসত্তা বলতে লেখক মনুষ্যত্বকে বুঝিয়েছেন। শিক্ষার মাধ্যমে এই মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায়।
অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি- লেখকের মতে আমরা জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে অধিক মনোযোগী। ফলে অর্থচিন্তা আমাদের সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখে। অর্থচিন্তায় ব্যস্ত মানুষ প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জনে সক্ষম নয়।
কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মূল্য কতটুকু?- খাওয়া-পরার সমস্যা মিটে গেলেই জীবনের উন্নয়ন সম্ভব হয় না। এ জন্য প্রয়োজন চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা। শিক্ষার মাধ্যমেই এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

কর্ম-অনুশীলন :
মানব মুক্তির জন্য সমাজের উপরের অংশ ও নিচের অংশের কর্তব্যগুলো নির্দেশ করো।

পাঠ-পরিচিতি :
মানুষের দুটি সত্তা- একটি তার জীবসত্তা, অপরটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। জীবসত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি এবং শিক্ষা লাভের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। শিক্ষার ফলে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলে অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে ওঠে। শিক্ষার আসল কাজ মূল্যবোধ সৃষ্টি, জ্ঞান দান নয়; জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায়মাত্র। লেখক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের সম্পর্ক চিহ্নিত করেছেন। জ্ঞান ও অন্তরের মুক্তি ব্যক্তিকে মনুষ্যত্ববোধে উন্নীত হওয়ার শিক্ষা দেয়।

লেখক পরিচিতি :
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১৯০৩ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম. এ. পাশ করেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। একজন সংস্কৃতিবান ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে তিনি খ্যাত ছিলেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'শিখা' পত্রিকার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তাঁর লেখায় মননশীলতা ও চিন্তার স্বচ্ছন্দ প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর গদ্যে প্রমথ চৌধুরীর প্রভাব লক্ষণীয়। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ সংস্কৃতি কথা বাংলা সাহিত্যের মননশীল প্রবন্ধ-ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। তাঁর মৃত্যুর পর গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সভ্যতা ও সুখ তাঁর দুটি অনুবাদগ্রন্থ।
১৯৫৬ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


জ্ঞানমূলক প্রশ্ন :
১. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনকে কয়তলা বাড়ির সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর : ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনকে দোতলা বড়ির সাথে তুলনা করেছেন।
২. মানবজীবনকে দোতলা বাড়ির সাথে তুলনা করা হলে নিচের তলার নাম কী?
উত্তর : মানবজীবনকে দোতলা বাড়ির সাথে তুলনা করা হলে নিচের তলার নাম জীবসত্তা।
৩. মানবজীবনকে দোতলা বাড়ির সাথে তুলনা করা হলে ওপরের তলার নাম কী?
উত্তর : মানবজীবনকে দোতলা বাড়ির সাথে তুলনা করা হলে ওপরের তলার নাম মানবসত্তা।
৪. জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে পৌঁছানোর মই কী?
উত্তর : জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে পৌঁছানোর মই হলো শিক্ষা।
৫. শিক্ষার কোন দিকটি এর শ্রেষ্ঠ দিক?
উত্তর : শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটি এর শ্রেষ্ঠ দিক।
৬. সকলে কিসের নিগড়ে বন্দি?
উত্তর : সকলে অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি।
৭. কী পেলে আলো-হাওয়ার স্বাদবঞ্চিত মানুষ কারাগারকেই স্বর্গতুল্য মনে করে?
উত্তর : প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলে আলো-হাওয়ার স্বাদবঞ্চিত মানুষ কারাগারকেই স্বর্গতুল্য মনে করে।
৮. অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও মুক্তি বড়-এই বোধটি মানুষের কিসের পরিচায়ক?
উত্তর : অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও মুক্তি বড়-এই বোধটি মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
৯. চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে কী নেই?
উত্তর : চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে মুক্তি নেই।
১০. ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে কী উপলব্ধি করা যায় না?
উত্তর : ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না।
১১. শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা কিসের স্বাদ পাওয়া যায় না?
উত্তর : শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়া যায় না।
১২. শিক্ষাদীক্ষার মারফতে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলেও কিসের দুশ্চিন্তায় মনুষ্যত্বের সাধনা ব্যর্থ হতে পারে?
উত্তর : শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলেও অন্নবস্ত্রের দুশ্চিন্তায় মনুষ্যত্বের সাধনা ব্যর্থ হতে পারে।
১৩. মানব উন্নয়নের ব্যাপারে ওপর থেকে টানার কাজটি করে কে?
উত্তর : মানব উন্নয়নের ব্যাপারে ওপর থেকে টানার কাজটি করে শিক্ষা।
১৪. মানব উন্নয়নের ব্যাপারে নিচ থেকে ঠেলার কাজটি করে কে?
উত্তর : মানব উন্নয়নের ব্যাপারে নিচ থেকে ঠেলার কাজটি করে সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা।
১৫. লোভের কারণে যার আত্মিক মৃত্যু হয় কিসের জগতে সে ফতুর হয়ে পড়ে?
উত্তর : লোভের কারণে যার আত্মিক মৃত্যু হয় অনুভূতির জগতে সে ফতুর হয়ে পড়ে।
১৬. কী সৃষ্টি করা শিক্ষার আসল কাজ?
উত্তর : মূল্যবোধ সৃষ্টি করা শিক্ষার আসল কাজ।
১৭. কিসের বাঁধন থেকে মুক্তি না পেলে মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে গিয়ে পৌঁছাতে দেরি হয়?
উত্তর : প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি না পেলে মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে গিয়ে পৌঁছাতে দেরি হয়।
১৮. ‘নিগড়’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘নিগড়’ শব্দের অর্থ বেড়ি।
১৯. ‘ক্ষুৎপিপাসা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ক্ষুৎপিপাসা শব্দের অর্থ ক্ষুধা ও তৃষ্ণা।
২০. ‘লেফাফাদুরস্তি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘লেফাফাদুরস্তি’ শব্দের অর্থ বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীনতা কিন্তু ভেতরে প্রতারণা।
২১. জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে কী চাই?
উত্তর : জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে অন্নবস্ত্র চাই।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন :

১. অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়ে মুক্তি বড়।- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্য মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিলেও মানুষের মনকে মুক্তি দেয় না- এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে কথাটি দ্বারা।
➠ মানুষের রয়েছে দুটি সত্তা। একটি হলো তার জীবসত্তা আর অপরটি মানবসত্তা। অন্নবস্ত্রের সহায়তায় মানুষ তার জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্য মানুষের মনকে পূর্ণাঙ্গভাবে সন্তুষ্ট করতে পারে না। মানবসত্তা অর্থাৎ মনুষ্যত্বলোকের মুক্তির মাধ্যমেই মানুষ আত্মার অমৃতকে উপলব্ধি করতে পারে। যাঁদের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ রয়েছে তাঁরা অন্নবস্ত্রের সহজলভ্যতার চেয়ে মানসিক মুক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

২. শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করে মানবজীবনে উন্নতি করার ভাবনা অযৌক্তিক কেন?
উত্তর : শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করলে জীবনে উন্নতি করতে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন বলে এ ভাবনা ভাবা অযৌক্তিক।
➠ মানবজীবনে উন্নতির জন্য একই সাথে দুটি উপায় অবলম্বন করতে হবে। অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা করতে হবে। কেবল শিক্ষাকে অবলম্বন করে প্রাণপণে চেষ্টা করলেও জীবনে সফল হওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন। কেননা অন্নবস্ত্রের দুশ্চিন্তায় মনুষ্যত্বের সাধনা পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণেই শুধু শিক্ষার ওপর নির্ভর করে মানবজীবনে উন্নতি করার ভাবনাটি খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না।

৩. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে শিক্ষাকে মইয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তর : শিক্ষা জীবসত্তা ও মানবসত্তার মাঝে সেতুবন্ধ রচনা করে বলে শিক্ষাকে মইয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনকে একটি দোতলা বাড়ির সাথে তুলনা করেছেন। সেই বাড়ির নিচতলা হলো জীবসত্তা আর ওপরের তলা হলো মানবসত্তা। মানবসত্তার ঘরে উঠে মানুষ সত্যিকার অর্থে উন্নত মানুষে পরিণত হয়। আর মানবসত্তা তথা মনুষ্যত্বলোকের সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয় শিক্ষা। শিক্ষার সিঁড়ি বেয়েই মানুষের মনুষ্যত্বের সাধনা চলমান থাকে। শিক্ষার এই সহায়ক ভূমিকার কারণেই প্রাবন্ধিক শিক্ষাকে মইয়ের সাথে তুলনা করেছেন।

৪. লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়-কেন?
উত্তর : লেফাফাদুরস্তি মানুষের বাইরের দিক হলেও শিক্ষা মানুষের ভেতরের দিক। অর্থাৎ উভয়ের অবস্থান পরস্পরের বিপরীতে।
➠ লেফাফাদুরস্তি বলতে বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীনতা কিন্তু ভেতরে প্রতারণা বোঝায়। লেফাফাদুরস্ত ব্যক্তিরা বাইরে থেকে আকর্ষণীয় হলেও তাদের ভেতরটা শূন্য। অন্যদিকে যথার্থ শিক্ষিত ব্যক্তি বাইরে থেকে দেখতে যেমনই হন না কেন, অন্তরের শক্তিতে তিনি বলীয়ান। শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য মানুষের আত্মিক উন্নয়ন। এ কারণেই ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক লেফাফাদুরস্তি ও শিক্ষাকে ভিন্ন বলে উল্লেখ করেছেন।

৫. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনকে দোতলা ঘরের সাথে তুলনা করেছেন কেন?
উত্তর : মানবজীবনের দুটি সত্তা সম্পর্কে সহজ ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনকে একটি দোতলা ঘরের সাথে তুলনা করেছেন।
➠ মানুষের দুটি সত্তা রয়েছে। একটি তার জীবসত্তা আর অন্যটি মানবসত্তা। জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে হয় জীবনধারণের জন্য। অন্যদিকে মানবসত্তার পরিচর্যা করা প্রয়োজন জীবনকে উন্নত করার জন্য। জীবসত্তার তুলনায় লেখকের বিবেচনায় তার মানবসত্তা তথা মনুষ্যত্ববোধের তাৎপর্য অনেক বেশি। জীবসত্তার চাহিদাকে তিনি মানবজীবনে প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর এই অবস্থা থেকে ওপরে ওঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বলেছেন মনুষ্যত্বের সাধনাকে। মানবজীবনকে তাই তিনি দোতলা একটি ঘরের সাথে তুলনা করে জীবসত্তা ও মানবসত্তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁর বিবেচনায় দোতলা ঘরের নিচতলা হলো জীবসত্তা এবং ওপরের তলা হলো মানবসত্তা।

৬. প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি কেন?
উত্তর : মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে পৌঁছানোর জন্য প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি।
➠ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী হয়। কিন্তু অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থা না থাকলে জীবনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। পায়ের কাঁটার দিকে বারবার নজর দিতে গেলে হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায় না। তেমনি অন্নবস্ত্রের সমস্যায় সর্বদা জর্জরিত থাকতে হলে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয় না। তাই মনুষ্যত্বের আহ্বানে দ্বিধাহীনভাবে সাড়া দিতে প্রাণিত্বের বাঁধন থেকে মুক্তি অর্থাৎ অন্নবস্ত্রের সমস্যার সমাধান অত্যন্ত জরুরি।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ১

সুমন ও কবির বাল্যবন্ধু। দুজনই উচ্চ-শিক্ষায় শিক্ষিত। পেশাগত জীবনে সুমন বড় ব্যবসায়ী। গাড়ি, বাড়ি, টাকা-কড়ি কোনো কিছুরই অভাব নেই তার। সবাই তাকে এক নামে চেনে। আর কবির শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। গত সিডরে তাদের গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এ সময় কবির তার ছাত্রদের নিয়ে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছে দেয়। তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। অথচ সুমন ছুটে এসে সাহায্যের বদলে অসহায় মানুষদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে বিঘার পর বিঘা জমি কিনে নেয়।

ক. মানব জীবনে মুক্তির জন্য মোতাহের হোসেন চৌধুরী কয়টি উপায়ের কথা বলেছেন?
খ. আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকের সুমনের মাঝে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রকাশিত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “কবিরের কাজে শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকটি উপস্থিত”- ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো

ক. মানবজীবনে মুক্তির জন্য মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে দুইটি উপায়ের কথা বলেছেন।
খ. প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ জীবসত্তা থেকে মুক্তি পায় না বলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না।
➠ লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত’ প্রবন্ধে মানুষের মাঝে দুটি সত্তার কথা বলেছেন। একটি জীবসত্তা আরেকটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই জীবসত্তা থেকে একজন মানুষ মানবসত্তায় উপনীত হয়। মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি প্রয়োজন। তাই জীবসত্তা থেকে মুক্তি ছাড়া আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না।

গ. উদ্দীপকের সুমনের মাঝে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের জীবসত্তা অর্জনের দিকটি প্রতিফলিত।
➠ শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধ অনুযায়ী জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তরণের মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাই মানুষকে শেখায় কী করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। জীবনে অন্নচিন্তা বা অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হবে এ কথা সত্য। কিন্তু অর্থসাধনাই জীবনসাধনা নয়। জীবনের প্রকৃত মর্মার্থ বুঝতে না পারলে মানবজীবনে শিক্ষা কোনো বৃহত্তর কল্যাণ সাধন করতে পারে না। জীবনের প্রকৃত সাধনা হচ্ছে মনুষ্যত্ব অর্জন। জীবনে মুক্তি অর্জনের জন্য দুটি উপায় অবলম্বন করতে হয়। একটি অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি আরেকটি হচ্ছে শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা।
➠ উদ্দীপকের সুমন উচ্চ শিক্ষিত। সে পেশায় ব্যবসায়ী ও প্রচুর বিত্ত-বৈভবের মালিক। কিন্তু সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত নিজ এলাকার মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সুমন তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নামমাত্র মূল্যে বিঘার পর বিঘা জমি ক্রয় করে। এখানে সুমনের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই শিক্ষা তার মাঝে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে পারেনি। সে তার অর্থ সাধনাকেই জীবন সাধনা জ্ঞান করেছে। সে লোভী অর্থের মোহে অন্ধ। লোভের ফলে তার আত্মিক মৃত্যু ঘটেছে। তার দ্বারা কোনো মানবিক কাজ করা সম্ভব নয়। মানুষের দুঃখ কষ্ট আর আহাজারিতেও তার হৃদয় বিগলিত হয়নি। তাই আমরা লক্ষ করি সুমন শিক্ষিত হলেও তার মাঝে শুধু জীবসত্তার বিকাশ ঘটেছে। মনুষ্যত্ব সে অর্জন করতে পারেনি।

ঘ. শ্যামলের কাজে শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকটি উপস্থিত। আর এই অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, অর্থচিন্তার নিগড়ে মানুষ বন্দি। ধনী-দরিদ্র সকলের মাঝে কাজ করে তার অর্থলিপ্সা। শুধু চাই, আর চাই। মানুষের মধ্যে বিদ্যমান জীবসত্তা মানুষকে অন্নচিন্তা ও অর্থচিন্তার মধ্যেই ব্যাপৃত রাখে। যাকে লেখক শিক্ষার প্রয়োজনীয় দিক বলে উল্লেখ করেছেন। আর শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্ব অর্জনের দিকটিকে বলা হয়েছে শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিক। যাকে লেখক জীবনের শ্রেষ্ঠ দিক বিবেচনা করেছেন। শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকটি অর্জনই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য। কারণ অন্ন-বস্ত্রের সমস্যাকে বড় করে দেখলে সুফল পাওয়া যাবে না।
➠ উদ্দীপকের শ্যামল উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষাজীবন শেষে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে শিক্ষকতাকে। সিডরে তার গ্রামটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলে শ্যামল তার ছাত্রদের নিয়ে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে দুর্গত ও অসহায় মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেয়। তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। শ্যামলের শিক্ষা-দীক্ষা তার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করেছিল। ফলে শ্যামল এই মানবিক উদ্যোগটি গ্রহণ করে। কিন্তু একই গ্রামের শিক্ষিত ও বাল্যবন্ধু সুমন সহায়তার হাত না বাড়িয়ে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে শিক্ষার প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকটি হচ্ছে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা। সত্যিকার মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। আলোচ্য উদ্দীপকের শিক্ষক শ্যামল নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলেছে। সে শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকটি গুরুত্বসহকারে নিজের মধ্যে চর্চা করেছে। তাই তার দ্বারা মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে। পরের জন্য সে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মনোভাব পোষণ করে। তাই বলা হয়েছে, ‘শ্যামলের কাজে শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকটি উপস্থিত’।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ২

মৃতপ্রায় দশ বছরের ফেলানীকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পরে ফেলানীর কাছ থেকে জানা যায় সে গুলশানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমিনা বেগমের বাসায় কাজ করত। পান থেকে চুন খসলে তার উপর অত্যাচার চলত। সেদিন ইস্ত্রি করতে গিয়ে কাপড় পুড়িয়ে ফেলায় তাকে গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাকা দেওয়া হয়। ঘটনার সত্যতা জেনে পুলিশ আমিনা বেগমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।

ক. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
খ. ‘অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিকটি উপস্থিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “আমিনা বেগমের ক্ষেত্রে শিক্ষা তার বাইরের ব্যাপার, অন্তরের ব্যাপার হয়ে ওঠেনি”- ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

ক ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
খ. আমাদের জগৎ সংসারে সকলেই জীবনটাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পার করার চিন্তায় ব্যস্ত, এটি বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত মন্ত্যবটি করেছেন।
➠ পৃথিবীতে সকলেরই চাহিদা অসীম। তাই সহজেই কেউ তৃপ্ত হতে পারে না। এজন্য সকলেই অর্থের পেছনে ছোটে। জীবসত্তার প্রয়োজন মেটাতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু শুধু অর্থের পেছনে না ছুটে আমাদের মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য মানবসত্তার চর্চাও করা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী হতে হবে। কিন্তু জীবসত্তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মানুষ অর্থচিন্তার শিকল থেকে মুক্ত হতে পারে না। এটি বোঝানোর জন্যই লেখক প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের অবতারণা করেছেন।

গ.উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মানবসত্তা বা মনুষ্যত্বের দিকটি উপস্থিত।
➠ শিক্ষালাভের মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। এর মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের ফলে মানুষের মাঝে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। এতে ঐ ব্যক্তি ভালো-মন্দের সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারে। মনুষ্যত্ববোধ থাকলে ব্যক্তি ভালোকে ভালো এবং মন্দকে মন্দ বলার যোগ্যতা অর্জন করে।
➠ উদ্দীপকের শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডে মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে। তারা হাসপাতালে ফেলানীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে শিক্ষালাভের প্রকৃত উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মানুষের মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে যে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি হয়।

ঘ. ছোট জিনিসের মোহে বড় জিনিস হারাতে দুঃখবোধ না করায় উদ্দীপকের আমেনা বেগমের ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ।
➠ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি। তাই যেখানে মূল্যবোধের মূল্য পাওয়া হয় না সেখানে শিক্ষা নেই। একজন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি কখনো মনুষ্যত্ববোধ বিসর্জন দিতে পারে না। কেননা শিক্ষার আসল কাজই হলো মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা। তার পরও যদি নামসর্বস্ব শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো ব্যক্তি মনুষ্যত্ব-বিবর্জিত কোনো কাজ করে তাহলে বোঝা উচিত সে শিক্ষার প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে।
➠ উদ্দীপকে আমেনা বেগম বিবেকবোধহীন কাজ করেছে। সে সামান্য একটি কাপড়ের জন্য ফেলানীকে ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে মনুষ্যত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্বের আহ্বান মানুষের মর্মে গিয়ে পৌঁছলে সে কখনোই এমন বিবেকহীন কাজ করতে পারে না। শিক্ষা যদি শুধুই বাইরের ব্যাপার হয় তাহলে তা বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীন মনে হলেও ভেতরে কেবল প্রতারণাই লুক্কায়িত থাকে। উদ্দীপকের আমেনা বেগমের শিক্ষাও তাই এই লেফাফাদুরস্তিই বটে।
➠ শিক্ষা যদি মানুষের অন্তরের ব্যাপার হয়ে ওঠে তাহলে মানুষ সেই শিক্ষা থেকে মূল্যবোধ অর্জন করে। আর মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক উন্নতি ঘটলে মানুষ বুঝতে পারে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। ছোট জিনিসের মোহে পড়ে যে বড় জিনিস হারাতে দুঃখবোধ করে না, সে আর যাই হোক শিক্ষিত নয়। উদ্দীপকের আমেনা বেগমের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি ঘটেছে। তাই আমিনা বেগমের ক্ষেত্রে শিক্ষা তার বাইরের ব্যাপার, অন্তরের ব্যাপার হয়ে ওঠেনি।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩

শেফালী ও মারুফা দুজনেই হাসপাতালের সেবিকা। শেফালী ছোটবেলার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য তার অর্জিত বেতনের টাকা দিয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র স্থাপন করেন। আর মারুফা অনেক বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং হাসপাতালের রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত চিকিৎসার ওষুধ বাইরে বিক্রি করে অর্থ আয় করে।

ক. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?
খ. “কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মূল্য কতটুকু?” এখানে “কারারুদ্ধ” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের শেফালী চরিত্রে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে মারুফার মানসিক পরিবর্তনে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক কী পরামর্শ দিয়েছেন? আলোচনা করো।

ক. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত।
খ. প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিতে কারারুদ্ধ বলতে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত থাকাকে বোঝানো হয়েছে।
➠ শিক্ষা মানুষকে মুক্তি দেয়। কারাগারে বসে প্রচুর অন্নবস্ত্র পেলেও মানুষ মুক্তির স্বাদ পেতে চায়। শিক্ষা তেমনি অন্নচিন্তার মধ্যে থেকেও মনের মুক্তি দেয়। শিক্ষার মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা পাওয়া যায়। কিন্তু যারা ধন-সম্পদের মাঝে থেকেও এই শিক্ষা থেকে দূরে থাকে তাদের অবস্থা কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের মতোই। প্রশ্নে কারারুদ্ধ বলতে এ দিকটিই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের শেফালীর চরিত্রে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের বর্ণিত মনুষ্যত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানুষের মাঝে মানবিকতাবোধের উন্মেষের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্বলোকের সন্ধান পায়। তখন সে ভালো-মন্দের মাঝে তফাৎ করতে শেখে। মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ তার কাজের মাধ্যমে নিজের আত্মিক উন্নয়ন ঘটায়।
➠ উদ্দীপকের শেফালী একজন হাসপাতালের সেবিকা। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মহৎ কিছু করার ইচ্ছা তার ছোটবেলা থেকেই ছিল। নিজের বেতনের টাকা থেকে সে প্রতিবন্ধী শিশুদের সেবা দেওয়ার জন্য একটি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র চালু করে। এর মাধ্যমে আমরা শেফালীর মানবিকবোধসম্পন্ন উদার মনের পরিচয় পাই। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, প্রকৃত শিক্ষার দ্বারা মনুষ্যত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণেই শেফালী এমন মহৎ একটি উদ্যোগ নিতে অনুপ্রাণিত হয়েছে।

ঘ. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে প্রকাশিত লেখকের মতামত অনুসারে বলা যায়, উদ্দীপকের মারুফার মানসিকতা পরিবর্তনে প্রকৃত শিক্ষার প্রয়োগে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ প্রয়োজন ।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী জীবন গঠনে শিক্ষার ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। শিক্ষা লাভের মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জন করে। বিভিন্ন অন্যায়ের পথ এড়িয়ে চলার মানসিক শক্তি অর্জন করে। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণের পরও কেউ যদি অন্যায়ের পথে নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে তৎপর থাকে তবে বুঝতে হবে যে তার মাঝে প্রকৃত শিক্ষার উপস্থিতি নেই।
➠ উদ্দীপকের মারুফা অসৎ উপায়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত ওষুধ গোপনে বিক্রি করে নিজে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তার এ কাজটি ঘোরতর অন্যায়। মনুষ্যত্ববোধের ঘাটতি থাকায় সে এমন গর্হিত কাজে জড়াতে দ্বিধা করে না।
➠ শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।’ কিন্তু স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দেয় তাকে কোনোভাবেই শিক্ষিত বলা যায় না। উদ্দীপকের মারুফার ক্ষেত্রেও এই কথাটি সত্য। তার মাঝে মূল্যবোধের অভাব রয়েছে। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে তার মাঝে বিবেকবোধ ও মানবিক চেতনার স্ফুরণ ঘটানো সম্ভব। তাহলেই সে উদ্দীপকে উল্লিখিত অন্যায়মূলক কাজের সাথে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবে।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪

শিহাব সাহেব সুরমা সিমেন্ট কোম্পানির হিসাবরক্ষণ অফিসার। ভালো বেতন পান বলে সংসারে অভাব নেই। কোম্পানির প্রয়োজনে মালিক প্রায়ই বিদেশে থাকেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিহাবের স্ত্রী রেবা একটু এদিক-ওদিক করে রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু শিহাব তার স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বলে- ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’।

ক. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি কোন প্রবন্ধের অংশবিশেষ?
খ. মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকের শিহাব কেন স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হননি?- ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিক রেবার মানসিকতা পরিবর্তনে সহায়ক?- বিশ্লেষণ করো।

ক. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব, প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ গ্রন্থের ‘মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের অংশবিশেষ।
খ. অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি না পেলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাতে পারে না।
➠ শিক্ষা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটায়। কিন্তু জীবনসত্তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মানুষ শিক্ষার প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। জীবসত্তার প্রয়োজনে মানুষ সবসময় অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি থাকে। এই অর্থ সাধনাই যে জীবন সাধনা নয়, এ কথাটি অনুধাবনে ব্যর্থ হলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাতে পারে না।

গ. উদ্দীপকের শিহাবের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ ছিল বলেই তিনি তার স্ত্রীর অন্যায় প্রস্তাবে রাজি হননি।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের রচয়িতা মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতে, শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্ববোধ লাভ করে। তখন অন্যায় কাজ করতে তার বিবেক তাকে বাধা দেয়। লোভের কুফল সে বুঝতে পারে। তাই সে লোভের ফাঁদে ধরা দেয় না।
➠ উদ্দীপকের শিহাব সাহেব একজন সৎ মানুষ। কোম্পানির মালিক বিদেশে অবস্থান করলেও তিনি মালিকের বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। স্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী অসৎ উপায়ে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা নেননি। কেননা তিনি জানেন লোভের ফলে তাঁর আত্মার মৃত্যু ঘটবে। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, শিক্ষার আলোয় শিহাব সাহেবের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত ছিল বলেই তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হননি।

ঘ. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ অনুসারে বলা যায়, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে রেবার মাঝে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটাতে পারলে রেবার মানসিকতা পরিবর্তন করা সম্ভব।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনের উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে, মানবজীবনের উন্নতির জন্য জীবসত্তা থেকে মানবসত্তার ঘরে পৌঁছবার মই হলো শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
➠ উদ্দীপকের শিহাব সাহেব একটি সিমেন্ট কোম্পানির হিসাবরক্ষণ অফিসার হিসেবে কর্মরত। ভালো বেতনের বদৌলতে তাঁর সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিরাজমান। কিন্তু তাঁর স্ত্রী রেবার চাহিদা এতে পূরণ হয় না। তাই মালিক বিদেশে থাকাকালীন তিনি শিহাবকে পরামর্শ দেন অসৎ উপায়ে উপার্জন করে রাতারাতি বাড়ি গাড়ির মালিক বনে যাওয়ার জন্য। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, রেবার মাঝে প্রকৃত শিক্ষার ছোঁয়া নেই বলেই তিনি তাঁর স্বামীকে অন্যায়ের পথে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
➠ ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’-এ কথাটি মানুষ ভুলে যায় যখন তার মাঝে প্রকৃত শিক্ষার প্রভাব থাকে না। তখন সে অন্যায়ের পথে পা বাড়াতে দ্বিধা করে না। আলোচ্য প্রবন্ধের রচয়িতার মতে, শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দেয়। কিন্তু জীবসত্তার ঘর বিশৃঙ্খল থাকলে মনুষ্যত্বের সাধনা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। উদ্দীপকের রেবার জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়ার ব্যাপারে সমস্যা নেই। তবুও তিনি লোভী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন প্রকৃত শিক্ষার অভাবে। তিনি হয়তো বা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। অথবা শিক্ষিত হলেও শিক্ষা তার অন্তরের ব্যাপার হয়ে ওঠে নি। তাই লোভের বৃত্ত থেকে তাকে বের করে আনতে হলে তাকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলে তার মাঝে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটবে। ফলে স্বামীর মতো তিনিও অন্যায় কাজ করা থেকে দূরে থাকবেন।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫

বাদশাহ আলমগীরের ছেলেকে দিল্লির এক মৌলভী পড়াতেন। বাদশাহ একদিন দেখলেন তার ছেলে ওস্তাদের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর ওস্তাদ নিজ হাতে পা পরিষ্কার করছেন। বাদশাহ মৌলভীকে তার দরবারে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন তার ছেলে কেন নিজ হাতে ওস্তাদের পা ধুইয়ে দিল না।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কোন পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন?
খ. শিক্ষার আসল কাজ কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিকটির মিল রয়েছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাদশাহ আলমগীরের ছেলের মাঝে মানবসত্তার বিকাশে কোন জিনিসটি ভূমিকা রাখতে পারে? ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে তোমার মতামত দাও।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘শিখা’ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন।
খ. শিক্ষার আসল কাজ হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি।
➠ জ্ঞান পরিবেশন করা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষার মূল কাজ হলো মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধান হলেই মানবজীবনের প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। এ জন্য প্রয়োজন চিন্তা, বুদ্ধি ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি। মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে শিক্ষা আমাদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। আর এটিই শিক্ষার আসল কাজ।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ববোধের মিল রয়েছে।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক বলতে চেয়েছেন, মানুষের মাঝে দুটি সত্তা বিরাজমান থাকে। একটি জীবসত্তা, অপরটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। জীবসত্তার প্রয়োজনেই মানুষ অন্ন-বস্ত্র লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। আর যদি মানুষ শুধু অন্নচিন্তা ও অর্থচিন্তার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখে তাহলে মানবজীবনের মূল যে লক্ষ্য মনুষ্যত্ব অর্জন, তা থেকে সে বঞ্চিত হয়। তাই শুধু অর্থ উপার্জন নয় জীবনের প্রকৃত সাধনা হচ্ছে নিজের মধ্যে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটানো।
➠ আলোচ্য উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি, ছাত্র তার শিক্ষকের পায়ে বিনয়ের সাথে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর শিক্ষক নিজ হাতে পা ধুয়ে নিচ্ছেন। বাদশাহ তা দেখে ওই শিক্ষককে ডেকে পাঠান এবং তার ছেলে কেন নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুইয়ে দিল না তার কারণ জানতে চান। বাদশাহ শিক্ষকের সম্মানকে ক্ষুণœ না করে তার মর্যাদাকে আরো উচ্চে তুলে ধরেছেন। উদ্দীপকে জীবসত্তার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি, কিন্তু মনুষ্যত্ববোধটি যথার্থভাবে ফুটে উঠেছে।

ঘ. শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনই বাদশাহ আলমগীরের ছেলের মাঝে মানবসত্তার বিকাশ ঘটাতে পারে।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, মানবজীবন হচ্ছে একটি দোতলা ঘরের মতো। জীবসত্তা হচ্ছে নিচের তলা আর মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব হচ্ছে ওপরের তলা। শিক্ষাই কেবল মই হিসেবে জীবসত্তা থেকে মানবসত্তার ঘরে মানুষকে নিয়ে যেতে পারে। জীবসত্তার প্রয়োজনে মানুষকে অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করতে হয়। আবার শিক্ষালাভের মধ্য দিয়ে মানবসত্তার উন্নয়ন বা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।
➠ উদ্দীপকে আমরা দেখি, ছাত্র শ্রদ্ধাবশত শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে। আর শিক্ষক নিজ হাতে পা পরিষ্কার করছেন। কিন্তু বাদশাহ শিক্ষকের প্রতি এইটুকু সম্মান প্রদর্শনে খুশি হতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে শিক্ষকের পদযুগল নিজ হাতে ধুয়ে দিক। বাদশাহ তাঁর দরবারে মৌলভীকে ডেকে নেওয়ার মূল কারণ ছিল তাঁর ছেলে যেন যথার্থ শিক্ষা লাভ করে। যাতে শিক্ষককে উপযুক্ত সম্মান করতে পারে। বাদশাহ তাঁর আচরণের মধ্য দিয়ে আভিজাত্যের অহংকার নয় বরং তাঁর ভেতরের মানবসত্তার উৎকর্ষই তুলে ধরেছেন।
➠ শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল সার্টিফিকেট কিংবা ডিগ্রি অর্জন নয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষের ভেতরের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা। তার মূল্যবোধকে ধারণ করা। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের মাঝে ভদ্রতা, নম্রতা ও বিনয়ের মতো গুণাবলি সৃষ্টি করে। বাদশাহ তার প্রিয়তম সন্তানের মাঝে সেই মহৎ গুণাবলির সমাবেশ দেখতে চেয়েছেন। তাই বাদশাহ আলমগীরের ছেলের মাঝে মানবসত্তা বা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হলে তাকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এই শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়েই তার জীবনে মনুষ্যত্বের সোনা ফলবে। তার জীবন মহিমান্বিত হবে।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬

শহীদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর চলে গেলেন নিজ গ্রামে। সেখানে তিনি একটি হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার অদম্য ইচ্ছা গ্রামটিকে তিনি শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবেন। সকল শিশুর জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করবেন। তার প্রভাবে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাও স্কুলে যেতে শুরু করল। শিক্ষার ব্যাপারে মানুষের মনে একটা আগ্রহ তৈরি হলো।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরী কোন পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন?
খ. ‘অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শহীদুল্লাহর মধ্যে কিসের জাগরণ ঘটিয়েছে? ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিফলন মাত্র’- মূল্যায়ন করো।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘শিখা’ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন।
খ. শিক্ষার মাহাত্ম্যের কথা বোঝানো হয়েছে উক্তিটির মাধ্যমে।
➠ মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মানবজীবনের উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। অন্নবস্ত্রের সমস্যা সমাধানে শিক্ষার যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি মানবিক মূল্যবোধ গঠনেও শিক্ষার ভূমিকা আবশ্যকীয়। প্রাবন্ধিক শিক্ষার প্রথম ভূমিকাটিকে বলেছেন প্রয়োজনের আর দ্বিতীয়টিকে অপ্রয়োজনের। শিক্ষার অপ্রয়োজনের এই দিকটি মানুষকে জীবন উপভোগ করতে শেখায়, মনুষ্যত্বলোকের সাথে মানুষের মিলন ঘটিয়ে দেয়। এটি ছাড়া প্রকৃত মানুষ হওয়ার কোনো উপায় নেই। লেখক তাই শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটিকেই শ্রেষ্ঠ দিক বলেছেন।

গ. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শহীদুল্লাহর মধ্যে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটিয়েছে।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলতে চেয়েছেন শিক্ষার আসল কাজ মূল্যবোধ সৃষ্টি, জ্ঞান দান নয়। জ্ঞান অর্জন মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় মাত্র। অর্থচিন্তায় ব্যস্ত মানুষ বস্তুবাদী চিন্তার মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখে। এই অর্থচিন্তা মানুষকে লোভী করে তোলে। আর লোভের ফলে মানুষের আত্মিক মৃত্যু ঘটে। পক্ষান্তরে শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে। শিক্ষা লাভের মধ্য দিয়েই প্রকৃত মূল্যবোধ বা মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটে।
➠ শিক্ষা অর্জনের ফলে উদ্দীপকে শহীদুল্লাহর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা। তাই সে গতানুগতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে নিজের অনগ্রসর গ্রামের কথা ভেবেছে। গ্রামের শিশু-কিশোরদের শিক্ষার কথা ভেবেছে। তারা যেন প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে সে চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছে। তার লেখাপড়া তাকে স্বার্থপরের মতো জীবন-যাপন করতে শেখায়নি। বরং পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার শিক্ষা দিয়েছে। তাই উদ্দীপক ও ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ বিচার করলে দেখা যায়, শহীদুল্লাহর মাঝে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটেছে ।

ঘ. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে জীবসত্তা ও মানবসত্তার বিষয় আলোচিত হলেও উদ্দীপকে কেবল মানবসত্তার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। সেদিক থেকে উদ্দীপকটি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিফলন মাত্র।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ অনুযায়ী মানুষের মাঝে দুটি সত্তা কাজ করে। একটি জীবসত্তা অন্যটি মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে শিক্ষা। আবার শিক্ষার মাধ্যমে জীবসত্তার প্রয়োজন পূরণ বা খাদ্যবস্ত্রের চাহিদা মেটানো সহজ হয়। মনুষ্যত্বের স্বাদ পেতে হলে অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি পেতে হবে। কারারুদ্ধ আহারতৃপ্ত মানুষের কোনো মূল্য নেই। কারণ সেখানে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা বা আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। মানবজীবনের জন্য অন্নবস্ত্রের সুব্যবস্থা ও শিক্ষা দুটোই প্রয়োজন।
➠ উদ্দীপকে শিক্ষিত ও প্রাণবন্ত যুবক শহীদুল্লাহ নিজের গ্রামকে আলোকিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে ফিরে যান। অভিভাবকদের সংগঠিত করে শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। উদ্দীপকে শহীদুল্লাহর এই কর্মকাণ্ড মানবসত্তার দিকটি তুলে ধরে। জীবসত্তার বিষয়টি এখানে অনুপস্থিত।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে জীবসত্তা ও মানবসত্তা উভয় বিষয় বিস্তারিত ও উপমাসহকারে আলোচিত হয়েছে। এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ আলোচনা। মানবসত্তার বিষয় মানবজীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও জীবসত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই উদ্দীপক এবং ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ বিচার করলে আমরা পাই, উদ্দীপকে শুধু মানবসত্তার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। তাই এটি শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের আংশিক প্রতিফলন মাত্র।


সৃজনশীল প্রশ্ন- ৭

হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান সুমন। অনেক ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করে বড় মানুষ হবে। কিন্তু প্রতিদিন দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করাই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে পড়াশোনা আর কী করে করবে সে। বাধ্য হয়ে একটা দোকানে কাজ নেয় সে। তাতেও মেটে না পরিবারের চাহিদা। একসময় স্থানীয় ছিনতাইকারী চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে অন্ধকার জীবনে পা বাড়ায় সুমন।

ক. জীবসত্তার ঘর হতে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই কী?
খ. শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের রচয়িতার মতে অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি কেন?
গ. উদ্দীপকের সুমনের অন্ধকার জীবনে পা বাড়ানোর কারণটি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “সুমনের মতো মানুষদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা ও অন্ন-বস্ত্র উভয় বিষয়ের সুব্যবস্থা প্রয়োজন”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো

ক. জীবসত্তার ঘর হতে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হলো শিক্ষা।
খ. মানবজীবনে শিক্ষার সুফল লাভের জন্য অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করা জরুরি।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনের উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, অধিকাংশ মানুষই অর্থচিন্তা অর্থাৎ অন্নচিন্তায় নিমগ্ন। এর ফলে তাদের জীবনের ওপরের তলা অর্থাৎ মনুষ্যত্বের ঘরটির দশা নিতান্তই শোচনীয়। কিন্তু অর্থ সাধনা জীবন সাধনা নয়, এটি মানুষকে বুঝতে হবে। তা না হলে শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান কোনো কাজেই আসবে না। মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর জন্য অর্থচিন্তা থেকে মানুষের মুক্তি অত্যন্ত জরুরি।

গ. উদ্দীপকের সুমনের অন্ধকার জীবনে পা বাড়ানোর কারণ হলো অন্ন-বস্ত্রের সুব্যবস্থা না হওয়া।
➠ ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতে, মানুষ অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি। অর্থচিন্তা মানুষকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখে। এ কারণে প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জনে তারা বাধাগ্রস্ত হয়। অর্থচিন্তার নিগড় থেকে বের হতে না পারলে মানুষের জীবনের উন্নয়নে অনেক বিলম্ব ঘটবে। জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে অনেকেই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। ফলে প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জনে সে ব্যর্থ হয়।
➠ উদ্দীপকে সুমন অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি। সে অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করতেই সদা ব্যাকুল। ফলে শিক্ষা তার কাছে পৌঁছতে পারে না। এজন্য সে যেকোনো উপায়ে নিজের অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করতে চায়। কিন্তু জীবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে উপায় না পেয়ে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়। তার অন্ন-বস্ত্রের সুব্যবস্থা হলে সে শিক্ষা অর্জন করতে পারত। এতে তার মনুষ্যত্ব অর্জন হতো। ফলে অন্ধকার জগতে পা বাড়াত না। তাই বলা যায়, অন্ন-বস্ত্রের সুব্যবস্থা না হওয়ায় সুমন অন্ধকার জীবনে পা বাড়ায়।

ঘ. শিক্ষা ও অন্নবস্ত্র উভয়ের সুব্যবস্থাই পারে উদ্দীপকের সুমনের মতো মানুষগুলোর জীবসত্তা ও মানবসত্তার উন্নয়ন ঘটাতে।
➠ মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হলে তাকে জীবসত্তার পাশাপাশি মানবসত্তারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে এই জীবসত্তা ও মানবসত্তার উন্নযনের কথা বলা হয়েছে। মানুষের জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে অর্থাৎ মনুষ্যত্বের ঘরে যেতে প্রয়োজন শিক্ষা। এই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মানবসত্তা জাগ্রত হয়। ফলে ব্যক্তি মূল্যবোধের অধিকারী হয়। তাই প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে জীবসত্তা ও মানবসত্তা দুটোই প্রয়োজন।
➠ উদ্দীপকের সুমনের মাঝে জীবসত্তা থাকলেও মানবসত্তা নেই। কেননা মানবসত্তার ঘরের যাওয়ার মই অর্থাৎ শিক্ষা তার মাঝে নেই। ফলে জীবসত্তার প্রয়োজন মেটাতেই সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এগুলো জীবসত্তার প্রয়োজন মেটায়। কিন্তু মানবসত্তার প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজন শিক্ষা। আর এ কারণে সুমনের মাঝে শুধু জীবসত্তার দিকটিই ফুটে উঠেছে।
➠ অন্নচিন্তার নিগড় থেকে মুক্তি পেলে মানুষ চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন করে। এতে তারা প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। কিন্তু উদ্দীপকের সুমন অন্নচিন্তার নিগড় থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এ কারণে সে অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুমনের মতো মানুষেরা প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা ও অন্ন-বস্ত্র উভয় বিষয়েরই সুব্যবস্থা প্রয়োজন।


তথ্যসূত্র :
১. বাংলা সাহিত্য: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url