পরিচ্ছেদ- ৩৮: যতিচিহ্ন
![]() |
পরিচ্ছেদ ৩২: বাক্যের বর্গ |
যতিচিহ্ন
মুখের কথাকে লিখিত রূপ দেওয়ার সময়ে কম-বেশি থামা বোঝাতে যেসব চিহ্ন ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে যতিচিহ্ন বলে। বক্তব্যকে স্পষ্ট করতেও কিছু চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যতিচিহ্নকে বিরামচিহ্ন বা বিরতিচিহ্নও বলা হয়।
বাংলা ভাষায় প্রচলিত যতিচিহ্নগুলো হলো :
দাঁড়ি (।), কমা (,), সেমিকোলন (:), প্রশ্নচিহ্ন (?), বিস্ময়চিহ্ন (!), হাইফেন (-), ড্যাশ (-), কোলন (:), বিন্দু (.), ত্রিবিন্দু (...), উদ্ধারচিহ্ন (‘-’ , “-”), বন্ধনীচিহ্ন ((-)), ({-}), ([-]), বিকল্পচিহ্ন (/)।
১. দাঁড়ি (।)
দাঁড়ি সাধারণত বাক্যের সমাপ্তি নির্দেশ করে। যেমন:
প্রান্ত ফুটবল খেলা পছন্দ করে।
যথাযথ অনুসন্ধানের পর বলা যাবে কী ঘটেছিল।
২. কমা (,)
কমা সামান্য বিরতি নির্দেশ করে। শব্দ, বর্গ ও অধীন বাক্যকে আলাদা করতে কমার
ব্যবহার হয়। যেমন:
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত বাংলাদেশ এই ছয়টি ঋতুর দেশ।
নিবিড় অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও সময়নিষ্ঠ থাকলে সাফল্য আসবে।
সুজন, দেখ তো কে এসেছে। কাল তুমি যাকে দেখেছ, তিনি আমার বাবা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “পাপকে ঠেকাবার জন্যে কিছু না করাই তো পাপ।”
৩. সেমিকোলন (;)
স্বাধীন অথচ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত একাধিক বাক্যকে এক বাক্যে পরিণত করার কাজে অথবা
একই ধরনের বর্গকে পাশাপাশি সাজাতে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
সোহাগ ক্রিকেট পছন্দ করে; আমি ফুটবল পছন্দ করি।
কোনো বইয়ের সমালোচনা করা সহজ; কিন্তু বই লেখা অত সহজ নয়।
তিনি পড়েছেন বিজ্ঞান; পেশা ব্যাংকার; আর নেশা সাহিত্যচর্চা।
৪. প্রশ্নচিহ্ন (?)
সাধারণত কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রে প্রশ্নচিহ্ন বসে। যেমন:
তারা কখন এসেছে?
বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী?
৫. বিস্ময়চিহ্ন (!)
সাধারণত বিস্ময়, দুঃখ, আনন্দ ইত্যাদি প্রকাশের জন্য বিস্ময়চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
যেমন:
মানে কী! সে আর চাকরি করবে না!
তার গানের কণ্ঠ দারুণ!
৬. হাইফেন (-)
বাক্যের মধ্যকার একাধিক পদকে সংযুক্ত করতে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
মা-বাবার কাছে সন্তানের গৌরব সবচেয়ে বড়ো গৌরব।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
৭. ড্যাশ (-)
সাধারণত দুটি বাক্যকে এক বাক্যে পরিণত করার কাজে এবং ব্যাখ্যাযোগ্য বাক্যাংশের
আগে-পরে ড্যাশ ব্যবহৃত হয়। যেমন:
বাংলাদেশ দল জয়লাভ করেছে বিজয়ের আনন্দে দেশের জনগণ উচ্ছ্বসিত।
ঐ লোকটি যিনি গতকাল এসেছিলেন তিনি আমার মামা।
৮. কোলন (:)
বাক্যের প্রথম অংশের কোনো উক্তিকে দ্বিতীয় অংশে ব্যাখ্যা করা এবং উদাহরণ
উপস্থাপনের কাজে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন:
ভাষার দুটি রূপ: কথ্য ও লেখ্য।
সভার সিদ্ধান্ত হলো: প্রতি মাসে সব সদস্যকে দশ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে।
৯. উদ্ধারচিহ্ন ('-'), ("-")
কোনো কিছু উদ্ধৃত করার কাজে উদ্ধারচিহ্নের ব্যবহার হয়। উদ্ধারচিহ্ন দুই রকম: একক
ও দ্বৈত। যেমন:
'সিরাজউদ্দৌলা' একটি ঐতিহাসিক নাটক।
আমাদের কন্ঠ শুনে প্রিয়ন্তি ঘর থেকে বেরিয়ে এল, “ও আপনারা এসে গেছেন। বাসা চিনতে
কোনো কষ্ট হয়নি তো?”
১০. বন্ধনী (), {}, []
অতিরিক্ত তথ্য উপস্থাপন ও কালনির্দেশের ক্ষেত্রে বন্ধনীর ব্যবহার হয়। বন্ধনী তিন
প্রকার: প্রথম বন্ধনী (), দ্বিতীয় বন্ধনী {} ও তৃতীয় বন্ধনী []। যেমন:
তিনি বাংলা ভাষার বিবর্তন (চর্যাপদের সময় থেকে পরবর্তী) নিয়ে আলোচনা করবেন।
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত।
১১. বিন্দু (.)
শব্দসংক্ষেপ, ক্রমনির্দেশ ইত্যাদি কাজে বিন্দু ব্যবহৃত হয়। যেমন:
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
ভাষার প্রধান উপাদান চারটি: ১. ধ্বনি, ২. শব্দ, ৩. বাক্য ও ৪. বাগর্থ।
১২. ত্রিবিন্দু (...)
কোনো অংশ বাদ দিতে চাইলে ত্রিবিন্দুর ব্যবহার হয়। যেমন:
তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “তার মানে তুমি একটা ...।”
আমাদের ঐক্য বাইরের।... এ ঐক্য জড় অকর্মক, সজীব সকর্মক নয়।
১৩. বিকল্পচিহ্ন (/)
একটির বদলে অন্যটির সম্ভাবনা বোঝাতে বিকল্পচিহ্নের ব্যবহার হয়। যেমন:
শুদ্ধ/অশুদ্ধ চিহ্নিত করো।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, প্রথম খণ্ড, ঢাকা, ২০১২। ৩. প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৬। ৪. ভাষা শিক্ষা: দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, অক্টোবর ২০২১-২২। ৫. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, এপ্রিল, ২০১৮। ৬. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৮তম, ২০১৫। |