৬. বানান
![]() |
বানান |
৬. বানান
বানান বলতে বোঝায় 'বর্ণন' বা বর্ণনা করা। অন্যভাবে বলা যায়, বানান হলো বুঝিয়ে বলা। লিখিত ভাষায় এই বলা দ্বারা স্বরবর্ণের পর স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণের পর ব্যঞ্জনবর্ণ অথবা স্বরবর্ণের পর ব্যঞ্জনবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের পর স্বরবর্ণ যোগ করাকে বোঝায়। যেমন- স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ আম; ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরবর্ণ: মা (ম্ + আ); ব্যঞ্জনবর্ণ + স্বরবর্ণ + ব্যঞ্জনবর্ণ + ব্যঞ্জনবর্ণ: কষ্ট (ক্+অ+ষ্+ট্)।বানান শিখতে বা লিখতে গেলে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পরিপূর্ণভাবে ধ্বনি অনুযায়ী বানান লেখার নিয়ম বিশ্বের কোনো ভাষায় নেই। ধ্বনিতত্ত্ব অংশে আমরা দেখেছি যে, আমাদের ভাষায় সব বর্ণ সব ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু সব বর্ণই আমাদের লিখনপদ্ধতির আশ্রয়। আমাদের জানতে হবে কোথায় দীর্ঘস্বর (ঈ, ঊ), চন্দ্রবিন্দু (ঁ), কোথায় ন্, কোথায় ণ্, কোথায় শ্, স্, ষ্, কোথায় বিসর্গ (ঃ), কোথায় ঙ, ঞ, ং, ক্ষ, ঙ্খ, ঙ্গ, ঙ্ক্ষ, ত, ৎ, হ্ম ইত্যাদি বসবে। এসবের ব্যবহার না জানলে বানান ভুল হবে।
৬.১ বানানের ধারণা
এমন এক সময় ছিল যখন বাংলা বানানের নিয়মের প্রতি কারো আগ্রহ ছিল না। এ-অবস্থায় ব্যক্তি নিজের মতো করে বানান ব্যবহার করত। এতে বানানের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, শুরু হয় বাংলা বানানে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন উৎস থেকে শব্দ এসেছে, যেমন- সংস্কৃত, আরবি-ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি। বাংলায় আগত শব্দগুলোর মূল উচ্চারণ এবং বাংলা ভাষার ধ্বনিব্যবস্থা অনুসারে সেগুলো লেখার প্রেরণা থেকেই উদ্ভাবিত হয় বাংলা বানানের নিয়ম। এক্ষেত্রে প্রথম প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘বাংলা বানানের নিয়ম’। পরবর্তীকালে বাংলা বানানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগী হয়েছে। আমাদের দেশে বাংলাদেশ টেকস্ট বুক বোর্ড, বাংলা একাডেমি বানানরীতি তৈরি করেছে। পরবর্তীতে টেকস্ট বুক বোর্ড ও বাংলা একাডেমির বানানরীতি এক হয়েছে। বাংলা একাডেমির বানানরীতি এখন সর্বত্র মানা হচ্ছে।প্রতিষ্ঠানের নাম | বইয়ের নাম | সন |
---|---|---|
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় | বাংলা বানানের নিয়ম | ১৯৩৬ |
বাংলা একাডেমি | প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম | ১৯৯২ |
৬.২ বানানের নিয়ম
নিচে বাংলা বানানের কিছু নিয়ম উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হলো:১. বিদেশি শব্দের (ইংরেজি, আরবি-ফারসি ও অন্যান্য ভাষার শব্দ) বানানে সব সময় হ্রস্ব ই বা ই-কার (ি) হবে। যেমন-
ভাষা | শব্দ |
---|---|
ইংরেজি | মিশনারি; |
আরবি | |
ফারসি | ফিরিস্তি; বনেদি |
তুর্কি | উর্দি; খাতুন; খাঁ; বিবি; বেগম; বাবা; ঠাকুর। |
আরবি+বাংলা | জাফরানি (জাফরন+আনি); |
৩. ভাষা ও জাতিবাচক শব্দের শেষে হ্রস্ব ই-কার হবে। যেমন- বাঙালি, ইংরেজি, ইরানি, পাঞ্জাবি, ইরাকি, পাকিস্তানি, জাপানি প্রভৃতি।
৪. ইংরেজি শব্দে a-উচ্চারণ যেখানে অ্যা সেখানে-এর জন্য অ্যা, s-এর উচ্চারণ যেখানে দন্তমূলীয় স্ সেখানে s-এর জন্য স, যেখানে শ এর জন্য sh এবং st-এর জন্য স্ট হবে। যেমন-
a | অ্যা |
Advocate (অ্যাডভোকেট); Attorney (অ্যাটোর্নি); Artist (আর্টিস্ট); And (অ্যান্ড) |
s | স | Bus-(বাস); Suger (সুগার) |
sh | শ | |
st | স্ট | Station (স্টেশন); Store (স্টোর) |
৬. বাংলা শব্দে র-এর পর ন হবে। যেমন- ধরন।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন থেকে
Good Try!
|
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |