পদ্মা : ফররুখ আহমদ
![]() |
পদ্মা : ফররুখ আহমদ |
মূলপাঠ:
অনেক ঘূর্ণিতে ঘুরে, পেয়ে ঢের সমুদ্রের স্বাদ, -কজীবনের পথে পথে অভিজ্ঞতা কুড়ায়ে প্রচুর -খ
কেঁপেছে তোমাকে দেখে জলদস্যু- দুরন্ত হার্মাদ, -ক
তোমার তরঙ্গভঙ্গে বর্ণ তার হয়েছে পাণ্ডুর! -খ
সংগ্রামী মানুষ তবু দুই তীরে চালায়ে লাঙল -গ
কঠিন শ্রমের ফল- শস্য দানা পেয়েছে প্রচুর; -খ
উর্বর তোমার চরে ফলায়েছে পর্যাপ্ত ফসল! -গ
জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে নিঃসংশয়, নির্ভীক জওয়ান -ঘ
সবুজের সমারোহে জীবনের পেয়েছে সম্বল। -গ
বর্ষায় তোমার স্রোতে গেছে ভেসে সাজানো বাগান, -ঘ
অসংখ্য জীবন, আর জীবনের অজস্র সম্ভার, -ঙ
হে নদী! জেগেছে তবু পরিপূর্ণ আহ্বান, -ঘ
মৃত জড়তার বুকে খুলেছে মুক্তির স্বর্ণদ্বার -ঙ
তোমার সুতীব্র গতি; তোমার প্রদীপ্ত স্রোতধারা। -ঙ
শব্দার্থ ও টীকা:
ঘূর্ণি- জল বা বায়ুর প্রচণ্ড আবর্তন।
সমুদ্রের স্বাদ- সমুদ্র-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বোঝানো হয়েছে।
জলদস্যু- যে দস্যু নদী বা সমুদ্রপথে ডাকাতি করে।
হার্মাদ- পর্তুগিজ জলদস্যু। স্প্যানিশ শব্দ Armada.
তরঙ্গভঙ্গে- ঢেউয়ের আবর্তনে।
পান্ডুর- ফ্যাকাশে, সাদাটে হলুদ বর্ণবিশিষ্ট।
উর্বর- উৎপাদন শক্তিবিশিষ্ট।
ফলায়েছে- উৎপাদন করেছে।
নিঃসংশয়- সন্দেহহীন।
জওয়ান- শক্তিশালী ও বলবান ব্যক্তি। ফারসি শব্দ।
সমারোহে- আড়ম্বর, জাঁকজমক।
সম্বল- পাথেয়, অবলম্বন। জীবিকা অর্জনের উপায়।
মৃত জড়তার ... মুক্তির- পদ্মার তীব্র গতি মানুষের জীবনপ্রবাহের গতির গতিহীন স্তব্ধতার বুকে এনে দেয় মুক্তির স্পন্দন।
প্রদীপ্ত- উজ্জ্বল, ভাস্বর।
স্রোতধারা- স্রোতের ধারা।
পাঠ-পরিচিতি:
ফরুখ আহমদের ‘পদ্মা’ কবিতাটি ‘কাফেলা’ (১৯৮০) নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। ‘কাফেলা’ কাব্য সাতটি সনেটের সমন্বয়ে রচিত। সংকলনভুক্ত কবিতাটি পাঁচ সংখ্যক সনেট। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী। এসবের মধ্যে পদ্মা সর্ববৃহৎ। ‘পদ্মা’ কবিতায় এ নদীর দুই রূপ প্রকাশিত হয়েছে। একদিকে এর ভয়ংকর, প্রমত্ত রূপ- যা দেখে বহু সমুদ্র ঘোরার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, দুরন্ত জলদস্যুদের মনেও ভয়ের সঞ্চার হয়। অন্যদিকে, পদ্মার পলিতে প্লাবিত এর দুই পাড়ের উর্বর ভূমি মানুষকে দিয়েছে পর্যাপ্ত ফসল, জীবনদায়িনী সবুজের সমারোহ। আবার, এই পদ্মাই বর্ষাকালে জলস্রোতে স্ফীত হয়ে ভাসিয়ে নেয় মানুষের সাজানো বাগান, ঘর, এমনকি জীবন পর্যন্ত। সেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আবারও প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে পদ্মাকে ঘিরেই। অর্থাৎ একই পদ্মা খনও ধ্বংসাত্মক রূপে, কখনও কল্যাণময়ী হয়ে এদেশের জনজীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে।
‘পদ্মা’ চতুর্দশপদী (sonnet) কবিতা। তিন পঙ্ক্তিযুক্ত চারটি স্তবক এবং শেষে দুই পঙ্ক্তিযুক্ত একটি স্তবকে কবিতাটি বিন্যস্ত। প্রতি পঙ্কতিতে রয়েছে ১৮ মাত্রা। কবিতাটির মিলবিন্যাস- কখক খগখ গঘগ ঘঙঘ ঙঙ।
কবি-পরিচিতি:
ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জুন মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ হাতেম আলী। কর্মজীবনে বহুবিচিত্র পেশা অবলম্বন করেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘকাল ধরে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন ঢাকা বেতারে ‘স্টাফ রাইটার’ হিসেবে। চল্লিশের দশকে আবির্ভূত শক্তিমান কবিদের অন্যতম ফররুখ আহমদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'সাত সাগরের মাঝি' প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। এরপর একে একে তাঁর অনেক কাব্যগ্রন্থ, কাব্যনাট্য ও কাহিনিকাব্য প্রকশিত হয়েছে। ইসলামি ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাসী এ কবির কবিতায় প্রধানত প্রকাশ ঘটেছে ইসলামি আদর্শ ও জীবনবোধের। তাঁর অন্য গ্রন্থগুলোর নাম- কাব্যগ্রন্থ: ‘সিরাজাম মুনীরা’; কাব্যনাট্য ‘নৌফেল ও হাতেম’; সনেট সংকলন: ‘মুহূর্তের কবিতা’ এবং কাহিনিকাব্য: ‘হাতেম তায়ী’। এছাড়া তিনি ছোটদের জন্য বেশ কিছু ছড়া ও কবিতা লিখে গেছেন। সাহিত্যকৃতির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেছেন এবং মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে অক্টোবর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১. "ঋতু বর্ণন” কবিতায় প্রথমে কোন ঋতুর বর্ণনা আছে?
ক. গ্রীষ্ম
খ. বর্ষা
গ. শরৎ
ঘ. বসন্ত
২. 'নিদাঘ সমএ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক. প্রচণ্ড গরমকাল
খ. আবহাওয়া ঠাণ্ডা
গ. পীড়নের সময়
ঘ. বর্ষার আগমন
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
আসে বসন্ত ফুলবনে
জাগে বনভূমি সুন্দরী।
৩. কবিতাংশে "ঋতু বর্ণন" কবিতার বসন্ত ঋতুর কোন দিকটি উন্মোচিত হয়েছে?
ক. সুন্দর শোভা
খ. পুষ্পমাল্য
গ. মল্লার রাগ
ঘ. মলয় সমীর
৪. উক্ত দিকটি নিচের কোন পঙ্ক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে-
ক. চন্দন চম্পক মাল্য মলয়া পবন
খ. কুসুমিত কিংসুক সঘন বন লাল
গ. পাবন সময় ঘন ঘন গরজিত
ঘ. নবীন খঞ্জন দেখি বড়হি কৌতুক
সৃজনশীল প্রশ্ন: ১
আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।
ক. মল্লার কী?
খ. "রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণ" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে "ঋতু বর্ণন" কবিতার বসন্ত ঋতুর সাদৃশ্য আছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উদ্দীপকটি “ঋতু বর্ণন" কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি'- মূল্যায়ন কর।