মীর মশাররফ হোসেন
মীর মশাররফ হোসেন:
মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ার
এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক।
ছদ্মনাম- গাজী মিয়া। পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার। তার পূর্বপুরুষ সৈয়দ
সা'দুল্লাহ ইরাকের বাগদাদ থেকে দিল্লিতে এসে মোগল সেনাবাহিনীতে চাকুরী নেন। মোগল
সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে বাংলাদেশের ফরিদপুরে চলে আসেন।
=> স্কুল জীবন কাটে
প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে পদমদী এবং শেষে কৃষ্ণনগরে। পিতৃবন্ধু নাদির হোসেনের বাসায়
থেকে কলকাতা কালীঘাট স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করেন।
=> কলকাতায় থাকাকালে
নাদির হোসেনের সুন্দরী কন্যা লতিফননেসার সাথে প্রথমে প্রেম এবং পরে বিয়ে ঠিক হয়।
কিন্তু বিবাহ অনুষ্ঠানে কন্যা বদল করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আজিজুননেসার সাথে তার
বিয়ে (১৮৬৫) দেওয়া হয়। পরিণামে লতিফননেসা আত্মহত্যা করলে তিনি আজিজুননেসাকে ক্ষমা
করতে পারেন নি। দাম্পত্য জীবন সুখী হয় নি।
=> বিয়ের আট বছর পর ১৮৭৩ সালে
সাওতাঁ গ্রামের এক বিধবা কালী ওরফে বিবি কুলসুমকে বিয়ে করেন। টাঙ্গাইলের
'শান্তিকুঞ্জে' বিবি কুলসুমকে নিয়ে বসবাস করতেন।
=> কাঙাল হরিনাথ
ছিলেন তার সাহিত্যগুরু।
=> ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ী জেলার
বালিয়াকান্দির পদমদীতে মৃত্যুবরণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
=> মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার মোট ৩৭টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
উপন্যাস
=> রত্নবতী (১৮৬৯, প্রথম গ্রন্থ)। মুসলিম রচিত প্রথম বাংলা উপন্যাস। গুজরাট নগরের রাজপুত্র পুত্র ও মন্ত্রীপুত্রের কল্পিত কাহিনি অবলম্বনে উপন্যাসটি রচিত। এটি রূপকথার মাধ্যমে শিক্ষামূলক একটি দীর্ঘ গল্প। রাজপুত্র সুকুমার ও মন্ত্রীপুত্র সুমন্তের মধ্যে 'ধন বড় না বিদ্যা বড়' এ বিতর্ক ও বিতর্কের সমাধানই এ গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়।
=> বিষাদ সিন্ধু (১৮৮৫-৯১)। তার শ্রেষ্ঠ রচনা। কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনাই এর
মূল উপজীব্য। এর প্রধান চরিত্র এজিদ। তার কামনা বাসনাকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের
সূচনা এবং শোচনীয় বিপর্যয়ের মাধ্যমে কাহিনির সমাপ্তি।
=>উদাসীন পথিকের মনের কথা (১৮৯০)। আত্মজীবনীমূলক রচনা। উদাসীন পথিক ছদ্মনামে লিখেছেন। এতে নীলকর কেনির অত্যাচার ও কৃষক ভূস্বামীদের প্রতিরোধের মুখে মি. কেনির শোচনীয় পরাজয় এ গ্রন্থের প্রধান বিষয়। এর উল্লেখযোগ্য চরিত্র- নীলকর টমাস আইভান (টিআই) কেনি, মহিলা জমিদার প্যারীসুন্দরী, মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, সা গোলাম প্রমুখ।
=>তহমিনা (১৮৯৭)।
=>গাজী মিয়াঁর বস্তানী (১৮৯৯)। আত্মজীবনীমূলক রচনা।
নাটক
=> বসন্তকুমারী (১৮৭৩) বাংলা সাহিত্যে মুসলিম রচিত প্রথম নাটক।
=> জমিদার দর্পণ (১৮৭৩)।
বেহুলা গীতাভিনয় (১৮৯৮)। এতে ইংরেজ শাসকদের বাসিকদের প্রকৃত স্বরূপ উম্মোচন করে তাদের প্রতিরোধ করার আহবান জানিয়েছেন।
=> নিয়তি কি অবনতি (১৮৯৮)।
প্রবন্ধ
=> গো-জীবন (১৮৮৯)। এ গ্রন্থে তিনি হিন্দু মুসলিম ঐক্য দৃঢ় করতে গরু কোরবানীর বিপক্ষে মত দেন। ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ দেয় প্রবন্ধটি পুনর্মুদ্রণ না করার জন্য।
এসলামের জয় (১৯০৮)
প্রহসন
=> এর উপায় কি? (১৮৭৫)। এতে উনিশ শতকে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উচ্ছৃংখলতা ব্যঙ্গাকারে তুলে ধরা হয়েছে।
=> টালা অভিনয় (১৮৯৭)
=> ভাই ভাই এইতো চাই (১৮৯৯)
=> ফাঁস কাগজ (১৮৯৯)
=> বাঁধা খাতা (১৮৯৯)
কাব্য
=> গড়াই ব্রিজ বা গৌরী সেতু (১৮৭৩)
=> পঞ্চনারী (১৮৯৯)
=> মদীনার গৌরব (১৯০৬)
=> মোসলেম বীরত্ব (১৯০৭)
=> বাজীমাত (১৯০৮, নকশা জাতীয় কাব্য)
আত্মজীবনী
=> আমার জীবনী (১৯০৮-১০)। এ গ্রন্থটি বার খণ্ডে সমাপ্ত হয়। এতে লেখকের ১৮ বছরের জীবনী তুলে ধরা হয়েছে।
=> আমার জীবনীর জীবনী বা কুলসুম জীবনী (১৯১০, সর্বশেষ গ্রন্থ)।
গানের সংকলন:
সঙ্গীত লহরী (১৮৮৭)।বিখ্যাত উক্তি -
=> মাতৃভাষায় যাহার ভক্তি নাই সে মানুষ নহে।
সম্পাদিত পত্রিকা:
=> ছাত্রাবস্থায়ই সংবাদ প্রভাকর (১৮৩১) ও গ্রামবার্তা প্রকাশিকা (১৮৬৩) পত্রিকায় মফঃস্বল সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেন।
=> আজিজননেহার (১৮৭৪) ও হিতকরী (১৮৯০) পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
আরো তথ্য:
=> মীর মশাররফ হোসেনের প্রথম জীবনী লিখেছেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মীর মশাররফ হোসেনকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাথে তুলনা করেছেন।