পরিচ্ছেদ ৩৬: বাচ্য

পরিচ্ছেদ ৩৬: বাচ্য
পরিচ্ছেদ ৩৬: বাচ্য

বাচ্য

বাক্যের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে। বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার ভূমিকা বদলে গিয়ে একই বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গি আলাদা হয়ে যায়। ক্রিয়া কখনো কর্তাকে অনুসরণ করে, ক্রিয়া কখনো কর্মকে অনুসরণ করে, আবার ক্রিয়াই কখনো বাক্যের মধ্যে মুখ্য হয়ে ওঠে। যেমন:
সে বাজারে যায়।
সাহসী ছেলেটিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

উপরের প্রথম বাক্যে ‘যায়’ ক্রিয়াটি ‘সে’ কর্তার অনুসারী। দ্বিতীয় বাক্যে ‘করা হয়েছে’ ক্রিয়াটি ‘সাহসী ছেলেটিকে’ কর্মের অনুসারী। তৃতীয় বাক্যে ‘যাওয়া হচ্ছে’ ক্রিয়াই মুখ্য।
প্রকাশভঙ্গির এই ভিন্নতা অনুযায়ী বাচ্য তিন প্রকার: কর্তাবাচ্য, কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্য।

১. কর্তাবাচ্য

যে বাক্যের ক্রিয়া কর্তাকে অনুসরণ করে, তাকে কর্তাবাচ্য বলে। এক্ষেত্রে ক্রিয়ার রূপটি কর্তার পক্ষ অনুযায়ী হয়। যেমন:
ঝরনা ছবি আঁকে।
আমি আগামীকাল বাড়ি ফিরব।

অজীব বিশেষ্যও অনেক সময়ে কর্তার ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন:
ফ্যানটা অনেক জোরে ঘুরছে।
শরতে শিউলি ফোটে।

২. কর্মবাচ্য

যে বাক্যের ক্রিয়া কর্মকে অনুসরণ করে, তাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন:
পুলিশ কর্তৃক ডাকাত ধৃত হয়েছে।
চিঠিটা পড়া হয়েছে।

৩. ভাববাচ্য

যে বাক্যের ক্রিয়া-বিশেষ্য বাক্যের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে ভাববাচ্য বলে। যেমন:
আমার যাওয়া হলো না।
কোথা থেকে আসা হলো।
এখানে ‘যাওয়া’, ‘আসা’ এগুলো হলো ক্রিয়া-বিশেষ্য।

বাচ্য পরিবর্তন

বাচ্য পরিবর্তনের কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:

১. কর্তাবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য

কর্তাবাচ্যের বাক্যকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে কর্তার সঙ্গে দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক ইত্যাদি অনুসর্গ যোগ করতে হয় এবং ক্রিয়ারূপকে কর্মের অনুসারী করতে হয়। যেমন:

কর্তাবাচ্য জাহানারা ইমাম একাত্তরের দিনগুলি রচনা করেছেন।
কর্মবাচ্য জাহানারা ইমাম কর্তৃক একাত্তরের দিনগুলি রচিত হয়েছে।
কর্তাবাচ্য তারা বাড়িটি তৈরি করেছে।
কর্মবাচ্য তাদের দ্বারা বাড়িটি তৈরি হয়েছে।

২. কর্মবাচ্য থেকে কর্তাবাচ্য

কর্মবাচ্যের বাক্যকে কর্তাবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে কর্তার সঙ্গে যুক্ত দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক প্রভৃতি অনুসর্গ বাদ দিতে হয় এবং ক্রিয়াকে কর্তার অনুসারী করতে হয়। যেমন:

কর্মবাচ্য প্রধান শিক্ষক কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছে।
কর্তাবাচ্য প্রধান শিক্ষক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন।
কর্মবাচ্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
কর্তাবাচ্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করি।

৩. কর্তাবাচ্য থেকে ভাববাচ্য

কর্তাবাচ্যের বাক্যকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে একটি ক্রিয়াবিশেষ্যকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নিয়ে আসতে হয়। যেমন:

কর্তাবাচ্য তুমি কখন এলে?
ভাববাচ্য কখন আসা হলো?
কর্তাবাচ্য ওখানে কেন গেলে?
ভাববাচ্য ওখানে কেন যাওয়া হলো?

৪. ভাববাচ্য থেকে কর্তাবাচ্য

ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তাবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে ক্রিয়াকে কর্তার অনুসারী করতে হয়। যেমন:

ভাববাচ্য একটু বাইরে বেড়িয়ে আসা যাক।
কর্তাবাচ্য একটু বাইরে বেড়িয়ে আসি।
ভাববাচ্য এবার বাঁশিটি বাজানো হোক।
কর্তাবাচ্য এবার বাঁশিটি বাজাও।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
আপনি পেয়েছেন -এর মধ্যে!
যা


তথ্যসূত্র :
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url