৪. বাক্যতত্ত্ব
![]() |
বাক্যতত্ত্ব |
৪. বাক্যতত্ত্ব
ধ্বনি দিয়ে আমরা যে-আলোচনা শুরু করেছিলাম, শব্দে এসে তা নির্দিষ্ট কাঠামো লাভ করেছে। শব্দ থেকে বৃহৎ একক হলো বাক্য। আমরা যে-শব্দই শিখি না কেন, লক্ষ্য থাকে তাকে বাক্যে প্রয়োগ করার।যেমন-পড়া একটি শব্দ। শব্দটি বাক্যে প্রয়োগ করতে হলে আমাদের তা এভাবে প্রয়োগ করতে পারি:
আমি পড়ালেখায় আনন্দ পাই। এক জাতীয় বই সবসময় পড়তে ভালো লাগে না। ছেলেমেয়েদের পড়ার সঙ্গে লেখার অভ্যাস করা দরকার।
বাক্য এবং বাক্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর সম্পর্কই বাক্যতত্ত্বে আলোচনা করা হয়।
৪.১ বাক্যের পরিচয়
আমরা বাক্য তৈরি করি এক বা একাধিক শব্দ একত্রে সাজিয়ে। যেমন- ‘আমি বাড়ি গিয়ে ভাত খাব।’ মনে রাখতে হবে, শব্দ যখন বাক্যে স্থান পায়, তখন তার পরিচয় হয় ভিন্ন। বাক্যের শব্দকে বলে পদ। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যোগ করলেই পদ তৈরি হয়। সে-হিসেবে পদ তৈরির সূত্র হলো শব্দ বিভক্তি = পদ। যেমন- ‘আমি বই পড়ি’, এ-বাক্যে তিনটি পদ আছে। ‘আমি’, ‘বই’ ও ‘পড়ি’। এখানে ‘পড়ি’ পদটি তৈরি হয়েছে পড়-এর সঙ্গে ই বিভক্তি দিয়ে। কিন্তু ‘আমি’ ও ‘বই’ শব্দে কোনো বিভক্তি দেখা যাচ্ছে না। যেখানে বিভক্তি দেখা যায় না, সেখানে একটি শূন্য বিভক্তি কল্পনা করতে হবে। ‘আমি’ ও ‘বই’ পদ তৈরি হয়েছে আমি + শূন্য এবং বই শূন্য বিভক্তি দিয়ে।৪.২ বাক্যগঠন
বিভিন্ন পদের সাহায্যে বাক্য গঠিত হয়। কিন্তু পদগুলো পরপর সাজালেই বাক্য হবে না। যেমন-বসেছিলাম সকালে পাশে রাস্তার আমি। এ-বাক্যে পাঁচটি পদ আছে, কিন্তু বাক্য হয়নি। কারণ পদগুলোর সাহায্যে কোনো অর্থ বোঝাচ্ছে না। বাক্যের পদগুলো ঠিকমতো পরপর বসালেই চেহারা বদলে যাবে, বাক্যটি অর্থপূর্ণ হবে। যেমন- আমি সকালে রাস্তার পাশে বসেছিলাম। পদগুলোকে এই যে সাজানো হলো তার একটি নিয়ম আছে। সব ভাষায় তা এক রকম হয় না। ইংরেজরা বলে আমি খাই ভাত (I eat rice); কিন্তু বাংলায় আগে ‘ভাত’ আসে, তারপর আমরা ‘খাই’, বলি: আমি ভাত খাই। এ-বাক্যেই পদ সাজানোর নিয়মটি লুকিয়ে আছে। কে খাবে- আমি; কী খাবে- ভাত, খাওয়া হলো মূল কাজ। যে কাজ করে তাকে বলে কর্তা, কাজটি হলো কর্ম আর ক্রিয়া তো আছেই ‘খাওয়া’। এখন সূত্রের আকারে বলা যায়: বাংলা বাক্যের গঠন হলো কর্তা কর্ম + ক্রিয়া (Subject + Object + Verb), সংক্ষেপে SOV। কখনো-কখনো বাক্যের এই গঠনসূত্র মানা হয় না। কিন্তু সাধারণভাবে তা অনুসরণ করতে হবে।৪.৩ বাক্যের ভাবগত শ্রেণিবিভাগ
ভাবগত দিক থেকে বাক্যকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়-(১) বিবৃতিমূলক,
(২) জিজ্ঞাসাবোধক,
(৩) বিস্ময়বোধক ও
(৪) অনুজ্ঞাবাচক।
১) বিবৃতিমূলক বাক্য:
যে-বাক্যে কোনো কিছু বিবৃত করা হয়, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। যেমন-রাস্তা বড়ো বিপদসংকুল।
সকালে আমরা শহর দেখতে বের হলাম।
আকাশ বর্ণহীন গ্যাসে ভরা।
বিবৃতিমূলক বাক্য আবার দু-প্রকার- (ক) হাঁ-বোধক বাক্য ও (খ) না-বোধক বাক্য।
ক) হাঁ-বোধক বাক্য:
যে-বাক্য দ্বারা হাঁ-সূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে হাঁ-বোধক বাক্য বলে। যেমন-সোমা বই পড়ে।
রাহাত ফুটবল খেলে।
সানজিদা গান গায়।
খ) না-বোধক বাক্য:
যে-বাক্য দ্বারা না-সূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে না-বোধক বাক্য বলে। যেমন-টুম্পা সিনেমা দেখবে না।
আমরা আজ মাঠে যাইনি।
এ-গ্রামে একজন ডাক্তারও নেই।
২. জিজ্ঞাসাবোধক বাক্য:
সংবাদ পাওয়ার জন্য শ্রোতাকে লক্ষ্য করে যে-বাক্য বলা হয়, তাকে জিজ্ঞাসাবোধক বাক্য বা প্রশ্নবাক্য বলে। যেমন-আজ কি তোমার স্কুল খোলা?
আপনি চা খাবেন কি?
তুমি কী ভাবছ?
৩. বিস্ময়বোধক বাক্য:
এ-ধরনের বাক্যে বিস্ময়, উচ্ছ্বাস ইত্যাদি আকস্মিক ও প্রবল আবেগ প্রকাশ পায়। যেমন-বাপ রে! কী প্রচণ্ড গরম!
লোকটার কী সাহস!
৪. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য:
যে-ধরনের বাক্যে অনুরোধ, আদেশ, প্রার্থনা, আশীর্বাদ, মিনতি ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বা অনুজ্ঞা বাক্য বলে। যেমন-বইটি আমাকে পড়তে দাও না!
তুমি ক্লাসে কথা বলবে না।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
আল্লাহ্ তোমার মঙ্গল করুন।
কাল আসতে ভুল করবে না কিন্তু!
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন : |
---|
প্রশ্ন থেকে
অভিনন্দন!
|
তথ্যসূত্র : |
---|
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড, ঢাকা, ২০২৫। ২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮। ৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫। |