২. ধ্বনিতত্ত্ব

২.১ বাগযন্ত্র:

ধ্বনির উচ্চারণে মানবশরীরের যেসব প্রত্যঙ্গ জড়িত সেগুলোকে একত্রে বাগযন্ত্র (Speech Organ/Vocal Organ) বা বাকপ্রত্যঙ্গ বলে। আমাদের শরীরের উপরের প্রত্যঙ্গগুলো বাগ্‌যন্ত্র হিসেবে পরিচিত। এগুলোর প্রধান কাজ দুটি- (ক) শ্বাসকার্য পরিচালনা করা এবং (খ) খাদ্য গ্রহণ করা। কিন্তু এসব প্রয়োজন সিদ্ধ করেও বাগ্‌যন্ত্র মানুষের ভাষিক কাজ করে থাকে। বাগ্‌যন্ত্রের সাহায্যে আমরা ধ্বনি উৎপাদন করি। বাগ্‌যন্ত্রের এলাকা বিস্তৃত। এর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস (Lungs), শ্বাসনালি (Trachea), স্বরযন্ত্র (Larynx), স্বরতন্ত্র (Vocal Fold), জিভ (Tongue), ঠোঁট (Lips), নিচের চোয়াল (Lower Jaw), দাঁত (Teeth), তালু (Palate) ও গলনালি (Pharynx)। এ ছাড়াও রয়েছে মধ্যচ্ছদা (Diaphragm) ও চিবুক (Cheek)। 

বাগ্‌যন্ত্র
চিত্র-২.১ : বাগ্‌যন্ত্র

২.২ স্বরধ্বনি:

যে-বাগধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-আগত বাতাস মুখের মধ্যে কোনোভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় না, সেগুলোই হলো স্বরধ্বনি। যেমন- অ, আ, ই, উ।
কিছু স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস বাধাহীনভাবে একই সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে বের হয়। যেমন- আঁ, ইঁ, এঁ, ওঁ ইত্যাদি। 

২.২ স্বরধ্বনির উচ্চারণ:

স্বরধ্বনির উচ্চারণে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো জিভের উচ্চতা (Tongue Height), জিভের অবস্থান (Tongue Position) ও ঠোঁটের আকৃতি (Lip-rounding)। এ ছাড়া আরও একটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয়, তা হলো কোমল তালুর অবস্থা। কোমল তালুর অবস্থা অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলোকে মৌখিক (Oral) ও অনুনাসিক (Nasalized) স্বরধ্বনি হিসেবে উচ্চারণ করতে হয়। স্বরধ্বনি-বিচারে উচ্চারণ-কাল (Duration)-কে গুরুত্ব দিতে হবে। সে-অনুয়ায়ী স্বরধ্বনি হয় হ্রস্ব (Short) ও দীর্ঘ (Long)। নিচে এসব তুলে ধরে বাংলা স্বরধ্বনিগুলোর উচ্চারণপ্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো। 

২.২.১ জিভের অবস্থা:

জিভের যে-অংশের সাহায্যে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেই অংশকে গুরুত্ব দিয়ে স্বরধ্বনিগুলোকে যথাক্রমে (ক) সম্মুখ (Front), (খ) মধ্য (Central) ও (গ) পশ্চাৎ (Back) ধ্বনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ক) সম্মুখ স্বরধ্বনি: জিভের সামনের অংশের সাহায্যে উচ্চারিত স্বরধ্বনিগুলো হলো সম্মুখ স্বরধ্বনি। ই, এ, অ্যা স্বর এজাতীয়।

খ) মধ্য-স্বরধ্বনি: জিভ স্বাভাবিক অবস্থায় থেকে অর্থাৎ, সামনে কিংবা পেছনে না-সরে যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেগুলো হলো মধ্য-স্বরধ্বনি। আ স্বরধ্বনি এ-শ্রেণির।

গ) পশ্চাৎ স্বরধ্বনি: এজাতীয় স্বরধ্বনিগুলো জিভের পেছনের অংশের সাহায্যে উচ্চারণ করতে হয়। যেমন- অ, ও, উ।

২.২.২ জিভের উচ্চতা:

জিভের উচ্চতা অনুসারে স্বরধ্বনিগুলোকে (ক) উচ্চ (High), (খ) নিম্ন (Low), (গ) উচ্চ-মধ্য (High-mid) ও (ঘ) নিম্ন-মধ্য (Low-mid) স্বরধ্বনি হিসেবে নির্দেশ করা হয়।

ক) উচ্চ-স্বরধ্বনি: এগুলোর উচ্চারণের সময় জিভ সবচেয়ে উপরে ওঠে। যেমন- ই, উ।
খ) নিম্ন-স্বরধ্বনি: জিভ সবচেয়ে নিচে অবস্থান করে এসব স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। আ, এ এ-শ্রেণির ধ্বনির দৃষ্টান্ত।
গ) উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি: এজাতীয় স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ নিম্ন-স্বরধ্বনির তুলনায় উপরে এবং উচ্চ-স্বরধ্বনির তুলনায় নিচে থাকে। যেমন- এ, ও।
ঘ) নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি: এসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনির তুলনায় নিচে এবং নিম্ন-স্বরধ্বনি থেকে উপরে ওঠে। যেমন- অ্যা, ও।

চিত্র- ২.২ : জিভের উচ্চতা অনুসারে স্বরধ্বনির উচ্চারণ
চিত্র- ২.২ : জিভের উচ্চতা অনুসারে স্বরধ্বনির উচ্চারণ

২.২.৩ ঠোঁটের অবস্থা

ঠোঁটের অবস্থা অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলোর উচ্চারণে দু-ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়- ঠোঁট গোলাকৃত (round) অথবা অগোলাকৃত অবস্থায় থাকতে পারে এবং ঠোঁট খোলা (open) অবস্থায় থাকতে পারে। ঠোঁটের এইসব অবস্থাভেদে স্বরধ্বনিগুলোকে গোলাকৃত (round) ও অগোলাকৃত (Unround) স্বরধ্বনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট গোলাকৃত হয় সেই স্বরধ্বনিগুলোই হলো গোলাকৃত স্বরধ্বনি। যেমন- অ, ও, উ।
অন্যদিকে যেসব স্বরধ্বনির উচ্চারণে ঠোঁট গোল না-হয়ে বিস্তৃত অবস্থায় থাকে সেগুলোই হলো অগোলাকৃত স্বরধ্বনি। যেমন- ই, এ, অ্যা।

চিত্র- ২.২ : ঠোঁটের অবস্থা ভেদে স্বরধ্বনি
চিত্র- ২.২ : ঠোঁটের অবস্থা ভেদে স্বরধ্বনি

২.২.৪ হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বর

বিশ্বের বহু ভাষায় একই স্বরধ্বনির দুটি উপলব্ধি আছে। উচ্চারণকালে কিছু স্বরধ্বনি স্বল্পকাল স্থায়ী হয়, সে-তুলনায় অন্যগুলো অধিক সময় স্থায়ী হয়। দীর্ঘস্বর উচ্চারণের সময় আরও দুটি দিক খেয়াল করতে হবে- (ক) নিচের চোয়ালের মাংসপেশিতে বেশি চাপ পড়বে এবং (খ) মুখ দিয়ে হ্রস্ব স্বরের তুলনায় অধিক বাতাস বের হবে। স্বরের হ্রস্ব-দীর্ঘ উচ্চারণভেদে দুটি ভিন্ন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয়। যেমন- ইংরেজি bit ও beat শব্দের উচ্চারণ। প্রথম শব্দের ই-ধ্বনি হ্রস্ব (i) আর দ্বিতীয় শব্দের ই দীর্ঘ (i) এবং এই দুই স্বর উচ্চারণের কারণে ইংরেজিতে দুটি ভিন্ন অর্থবাহী শব্দ তৈরি হয়েছে।

বাংলা ভাষার সব স্বরই হ্রস্ব; কিন্তু আমাদের লিখিত ভাষায় কিছু দীর্ঘ বর্ণ রয়েছে। আমরা লিখি ‘নদী’, ‘তরী’ ইত্যাদি। এসব শব্দের স্বরের দীর্ঘ উচ্চারণ হয়তো করা যায় কিন্তু তাতে দুটি ভিন্ন অর্থবাহী শব্দ তৈরি হয় না। অর্থাৎ লিখিত ভাষায় যা- ই থাকুক, আমাদের সব স্বরই হ্রস্ব।

২.২.৫ কোমল তালুর অবস্থা

মৌখিক স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস কেবল মুখ দিয়ে আর অনুনাসিক স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস একই সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে বের হয়। জানা দরকার, কীভাবে বাতাস কখনো মুখ, এবং কখনো নাক ও মুখ দিয়ে একসঙ্গে বের হয়। আমাদের মুখের উপরে রয়েছে তালু। এটি দেখতে অনেকটা গম্বুজ-আকৃতির। এই তালুর সামনের অংশ শক্ত কিন্তু পেছনের অংশ নরম। বোঝাই যাচ্ছে যে, শক্ত প্রত্যঙ্গ স্থির, তা নড়াচড়া করতে পারে না। সে-ক্ষমতা আছে কেবল নরম অংশের। নরম বলেই তালুর পেছনের অংশকে বলে কোমল তালু। এ-তালুকে আমরা উপরে ওঠাতে পারি আবার নিচে নামাতে পারি। মৌখিক স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় তা উপরে উঠে গিয়ে নাক দিয়ে বাতাস বেরোনোর পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়।

চিত্র- ২.৪ : মৌখিক স্বরধ্বনি ও অনুনাসিক স্বরধ্বনি উচ্চারণ
চিত্র- ২.৪: মৌখিক স্বরধ্বনি ও অনুনাসিক স্বরধ্বনি উচ্চারণ

অনুনাসিক স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় কোমল তালু নিচে নেমে যায়। এটি তখন এমন অবস্থায় থাকে যে, বাতাস একই সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে বের হতে পারে। এভাবে উচ্চারিত স্বরধ্বনিগুলোই হলো অনুনাসিক স্বরধ্বনি। বাতাস বের হওয়ার এই দুই ধরন অনুসারে স্বরধ্বনিগুলোকে ভাগ করা হয়েছে মৌখিক ও অনুনাসিক স্বরধ্বনি হিসেবে। মৌখিক স্বরের অনুনাসিক উচ্চারণ হলে শব্দের অর্থ বদলে যাবে। বাংলা মৌখিক স্বরধ্বনি সাতটি, অনুনাসিক স্বরধ্বনিও সাতটি। নিচের সারণিতে মৌখিক ও অনুনাসিক স্বরধ্বনিগুলো উল্লেখ করা হলো:

নং মৌখিক
স্বর
উদাহরণ অনুনাসিক
স্বরধ্বনি
উদাহরণ অর্থ
বিধি ইঁ বিধি ‘বিদ্ধ করা’
এরা (সাধারণ) এঁ এঁরা ‘তাঁরা’ (সম্মানীয়)
অ্যা ট্যাক অ্যাঁ ট্যাঁক ‘থলে’
বাধা (বিপত্তি) আঁ বাঁধা ‘বন্ধন, আবদ্ধ করা’
গদ (কবিতা) অঁ গঁদ ‘আঠা’
ওরা (সাধারণ) ওঁ ওঁরা ‘তাঁরা’ (সম্মানীয়)
কুড়ি (সংখ্যা বিশেষ) উঁ কুঁড়ি (ফুলের) ‘কলি’

২.৩ ব্যঞ্জনধ্বনি

যেসব বাগধ্বনি উচ্চারণে ফুসফুস আগত বাতাস মুখের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্ধ বা রুদ্ধ হয় অথবা আংশিকভাবে বন্ধ হয় কিংবা সংকীর্ণ পথে বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘর্ষণের সৃষ্টি করে সেগুলোই হলো ব্যঞ্জনধ্বনি। কিছু ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস প্রথমে মুখের মধ্যে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়, তারপর কেবল নাক দিয়ে বেরিয়ে যায়।
যেমন- প্, ক্, ল্, শ্, ম্, ন্।

২.৩. ১ ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে দুটি বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল করতে হয়। এগুলো হলো ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোর উচ্চারণস্থান (Place of Articulation) ও উচ্চারণদীক্তি (Manners of Articulation)। যে বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তা-ই উচ্চারণস্থান। উচ্চারণরীতি বলতে কীভাবে ধ্বনিটি উচ্চারণ করা হয় তাকে বোঝার। অর্থাৎ ফুসফুস থেকে আগত বাতাস মুখের মধ্যে বিভিন্ন প্রভ্যলে কীভাবে বাধা পার সে-সম্পর্কিত ধারণা স্পষ্ট না হলে ধ্বনির প্রকৃত উচ্চারণ সম্ভব নয়। উচ্চারণরীতি আমাদের সে-ধারণা দান করে।

২.৩.২ উচ্চারণস্থান

উচ্চারণস্থান অনুসারে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে (১) দ্বি-ওষ্ঠ্য (Bilabials), (২) দন্ত্য (Dentals), (৩) দন্তমূলীয় (Alveolar), (৪) প্রতিবেষ্টিত (Retroflex), (৫) তালব্য-দন্তমূলীয় (Palato-alveolar), (৬) তালব্য (palatal), (৭) জিহ্বামূলীর (Velaric) ও (৮) কণ্ঠনালীয় (Glottal) ধ্বনি হিসেবে দেখানো হয়।

উচ্চারণস্থান
চিত্র:২.৫: উচ্চারণস্থান

১. দ্বি-ওষ্ঠ্য: দুই ঠোঁট অর্থাৎ উপরের ও নিচের ঠোঁটের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিগুলো হলো দ্বি-ওষ্ঠ্য। তাপ, লা, না শব্দের প্, ফ্, ম্ এ-শ্রেণি ধ্বনি।

২. দন্ত্য: জিভের সামনের অংশ দ্বারা উপরের পাটি দাঁতের নিচের অংশকে স্পর্শ করে দন্ত্য ধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয়। বাংলা ম, প, প, সা শব্দের ত্, থ্, দ্, ধ্ ধ্বনিগুলো এ জাতীয়।

দ্বি-ওষ্ঠ্য ও দন্ত্য উচ্চারণ
দ্বি-ওষ্ঠ্য ও দন্ত্য উচ্চারণ

৩. দন্তমূলীয়: জিভের সামনের অংশ ও উপরের পাটি দাঁতের মূল বা নিচের অংশের সাহায্যে দন্তমূলীয় ধ্বনি উচ্চারিত হয়। কাতে, দা, ঘ, দ শব্দের স্, ন্, ব্, ল্ ব্যঞ্জন এ-শ্রেণির। ন্ ধ্বনিকে দন্ত্য-ন এবং স্ ধ্বনিকে দন্ত্য-স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এ দুটি ধ্বনির উচ্চারণে কোনোক্রমেই দাঁতের স্পর্শ নেই। আমরা ‘কান’ শব্দ উচ্চারণ করলেই তা বুঝতে পারি। শব্দটি উচ্চারণের সময় জিভের সামনের অংশ উপরের পাটি দাঁতের মূলকে স্পর্শ করে। একইভাবে ‘বস্তা’ কিংবা ‘রাস্তা’ শব্দের স্ উচ্চারণের সময় জিভের সামনের অংশ উপরের পাটি দাঁতের মূলের খুব কাছাকাছি আসে। সে-হিসেবে ন্ এবং স্ ব্যঞ্জনকে দন্ত্যমূলীয়-ন, দন্তমূলীয়-স বলাই বিজ্ঞানসম্মত।

৪. প্রতিবেষ্টিত: জিভের সামনের অংশ পেছনে কুঞ্চিত বা বাঁকা হয়ে এজাতীয় ধ্বনি উৎপাদিত হয়। নড়ি, আষাঢ়, শব্দের ড়্, ঢ়্ ধ্বনি এ জাতীয়। 

দন্তমূলীয় ও প্রতিবেষ্টিত ধ্বনির উচ্চারণ
দন্তমূলীয় ও প্রতিবেষ্টিত ধ্বনির উচ্চারণ

৫. তালব্য-দন্তমূলীয়: জিভের সামনের অংশ উপরের শক্ত তালু স্পর্শ করে তালব্য-দন্তমূলীয় ধ্বনি উচ্চারিত হয়। যেমন- ট্রাক, কাঠ, ডাল, ঢাকা শব্দের ট্, ঠ্, ড্, ঢ্ ধ্বনি।

৬. তালব্য: জিভ প্রসারিত হয়ে সামনের অংশ শক্ত তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত ধ্বনিগুলো হলো তালব্য। পন, লনা, জাগরণ, ঝংকার, বাঁশ শব্দের চ্, ছ্, জ্, ঝ্, শ্ ধ্বনি তালব্য।

৭. জিহ্বামূলীয়: জিভের পেছনের অংশ উঁচু হয়ে আলজিভের মূলের কাছাকাছি নরম তালু স্পর্শ করে জিহ্বামূলীয় ব্যঞ্জন উচ্চারিত হয়। কা, লা, দা, গন, বা, র শব্দের ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্ ধ্বনি এ-জাতীয়। এ ধ্বনিগুলোকে কণ্ঠ্য ধ্বনিও বলে।

তালব্য ধ্বনি ও জিহ্বামূলীয় ধ্বনি  উচ্চারণ
 তালব্য ধ্বনি ও জিহ্বামূলীয় ধ্বনি  উচ্চারণ

৮. কণ্ঠনালীয়: কণ্ঠনালির মধ্যে ধ্বনিবাহী বাতাস বাধা পেয়ে উচ্চারিত ধ্বনিগুলোই কণ্ঠনালীয়। এ জাতীয় বাংলা ব্যঞ্জন মাত্র একটি হ্।

কণ্ঠনালীয় ধ্বনি হ্ এর উচ্চারণ
কণ্ঠনালীয় ধ্বনি হ্ এর উচ্চারণ

সারণী-০২: উচ্চারণস্থান অনুযায়ী বাংলা ব্যঞ্জনধ্বানর তালিকা

নং উচ্চারণস্থান ব্যঞ্জনধ্বনি
দ্বি-ওষ্ঠ্য প, ফ, ব্, ভ্, ম্
দন্ত্য ত্, থ্, দ্, ধ্
দন্ত্যমূলীয় ন্, র্, ল্, স্
প্রতিবেষ্টিত ড়্, ঢ়্
তালব্য-দন্ত্যমূলীয় ট্, ঠ্, ড্, ঢ্,
তালব্য চ্, ছ্, জ্, ঝ্, শ্
জিহ্বামূলীয় ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্
কণ্ঠনালীয় হ্

২.৩.৩ সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় প্রত্যঙ্গ

প্রতিটি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সঙ্গে দুটি বাগযন্ত্র জড়িত থাকে। একটি সক্রিয় এবং অন্যটি নিষ্ক্রিয়।
যে বাগযন্ত্র সচল, অর্থাৎ যাকে আমরা ইচ্ছে মতো উপরে ওঠাতে বা নিচে নামাতে পারি, তাকে বলি সচল বাকপ্রত্যঙ্গ বা সক্রিয় উচ্চারক(Active Articulator);
আর যে-বাকপ্রত্যঙ্গ স্থির, অর্থাৎ নড়াচড়া করে না, তাকে বলি নিষ্ক্রিয় বাকপ্রত্যঙ্গ বা নিষ্ক্রিয় উচ্চারক (Passive Articulator)।
নিচে সারণিতে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোর উচ্চারণস্থান অনুযায়ী সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় উচ্চারকের পরিচয় দেওয়া হলো।

উচ্চারণস্থান সক্রিয় উচ্চারক নিষ্ক্রিয় উচ্চারক
দ্বি-ওষ্ঠ্য নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট
দন্ত্য জিভের ডগা উপরের পাটির দাঁত
দন্ত্যমূলীয় জিভের ডগা দন্তমূল
প্রতিবেষ্টিত কুঞ্চিত জিভের ডগা দন্তমূলের পেছনের অংশ
তালব্য-দন্ত্যমূলীয় জিভের পাতা দন্তমূলের পেছনের অংশ
তালব্য জিভের সামনের অংশ শক্ত তালু
জিহ্বামূলীয় জিভের পেছনের অংশ কোমল তালু
জিভের পেছনের অংশ যা
আলজিভের নিচে রয়েছে।
কণ্ঠনালীয় স্বরতন্ত্র --

২.৩.৪ উচ্চারণরীতি

বিভিন্ন রকম বাধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট, জিভ, জিহ্বামূল বিভিন্ন অবস্থান ও আকৃতি গ্রহণ করে। এসব বাক-প্রত্যঙ্গের আলোকে ধ্বনিবিচারের প্রক্রিয়াই উচ্চারণরীতি হিসেবে পরিচিত।
অন্যভাবে বলা যায়, বায়ুপ্রবাহ কীভাবে বিভিন্ন বাকপ্রত্যঙ্গে বাধাপ্রাপ্ত হয় তা-ই হলো উচ্চারণরীতি।
বায়ুপ্রবাহের এই বাধার প্রকৃতি বিচার করে, অর্থাৎ উচ্চারণরীতি অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে (১) স্পৃষ্ট/স্পর্শ (plosive), (২) ঘর্ষণজাত (fricatives), (৩) কম্পিত (rolling/trill), (৪) তাড়িত (flap/tap), (৫) পার্শ্বিক (lateral) ও নৈকট্যমুলক (Approximant) ধ্বনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো।

১. স্পৃষ্ট/স্পর্শ: মুখের মধ্যে ফুসফুস-আগত বাতাস প্রথমে কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ রুদ্ধ বা বন্ধ হয় এবং এরপর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে উচ্চারিত ধ্বনিগুলোই হলো স্পৃষ্ট।
যেমন- বক্ শব্দের ক্, পাট শব্দের ট্।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্পৃষ্ট ধ্বনিগুলো এভাবে দেখানো যায়:

ওষ্ঠ্য: প, ফ, ম্, ব্, ভ্
দন্ত্য: ত্, থ্, দ্, ধ্
তালব্য-দন্ত্যমূলীয়: ট্, ঠ্, ড্, ঢ্
তালব্য: চ্, ছ্, জ্, ঝ্
জিহ্বামূলীয়: ক্, খ্, গ্, ঘ্

২. নাসিক্য: যেসব ব্যঞ্জন উচ্চারণের সময় বাতাস কেবল নাক দিয়ে বের হয়, সেগুলো হলো নাসিক্য ব্যঞ্জন। যেমন- আমু, ধান, ব্যাঙ (ব্যাং) শব্দের ম্, ন, ঙ্ ।
উচ্চারণস্থান অনুসারে নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো হলো:
দ্বি-ওষ্ঠ্য: ম্
ন্ত্যমূলীয়: ন্
জিহ্বামূলীয়: ঙ্

ম্, ন্, ঙ্  ধ্বনির উচ্চারণ
ম্, ন্, ঙ্  ধ্বনির উচ্চারণ

৩. ঘর্ষণজাত: এ জাতীয় বাগধ্বনি উচ্চারণে বাগযন্ত্র দুটি খুব কাছাকাছি আসে; কিন্তু একসঙ্গে যুক্ত না-হওয়ায় একটি প্রায়-বদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে ফুসফুস-আগত বাতাস বাধা পায় ও সংকীর্ণ পথে বের হওয়ার সময় ঘর্ষণের সৃষ্টি করে।
বাতাসের ঘর্ষণের ফলে উচ্চারিত হয় বলে এগুলোকে ঘর্ষণজাত ধ্বনি বলে। এ জাতীয় ধ্বনিগুলোর এই ঘর্ষণকে শিস দেওয়ার আওয়াজের সঙ্গে সদৃশ ভেবে এগুলোকে শিসধ্বনি (Sibilant)-ও বলে।
বাংলা ঘর্ষণজাত ব্যঞ্জন তিনটি স্, শ্ এবং হ্। আসমান, দাশ, হাট শব্দের উচ্চারণে আমরা এই ধ্বনিগুলো পাই। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী এই তিনটি ঘর্ষণজাত ধ্বনিকে এভাবে দেখানো যায় :
দন্ত্যমূলীয়: স্
তালব্য: শ্
কণ্ঠনালীয় : হ্

৪. কম্পিত: জিভ কম্পিত হয়ে উচ্চারিত হয় বলে এজাতীয় ধ্বনিগুলোকে এ-পরিচয়ে চিহ্নিত করা হয়। বাংলা ভাষায় এ-শ্রেণির ধ্বনি মাত্র একটি র্।

র্ ধ্বনির উচ্চারণ
র্ ধ্বনির উচ্চারণ

৫. তাড়িত: এ জাতীয় ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিভের সামনের অংশ উলটে গিয়ে উপরের পাটি দাঁতের মূলে একটিমাত্র টোকা দেয়। সে-হিসেবে এগুলোকে টোকাজাত ধ্বনিও বলে। বাংলা ব, গা শব্দের ড়্, ঢ়্ ধ্বনি তাড়িত।

৬. পার্শ্বিক: এ জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস জিভের পেছনের এক পাশ বা দু-পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং জিভ দাঁত অথবা দন্তমূলে অবস্থান করে।
তা, শা, দ প্রভৃতি শব্দে আমরা যে ল্ ধ্বনি শুনি তা পার্শ্বিক।

ল্ ধ্বনির উচ্চারণ
ল্ ধ্বনির উচ্চারণ

৭. নৈকট্যমূলক ধ্বনি: বাংলা বর্ণমালায় দুটি ব্যঞ্জন রয়েছে, যথাক্রমে অন্তস্থ ব্ ও অন্তস্থ য়্ । স্পৃষ্ট বা স্পর্শ বর্ণের শেষে থাকে বলে এগুলোকে বলে অন্তস্থ বর্ণ। কিন্তু এ-দুই ধ্বনিকে পুরোপুরি ব্যঞ্জনধ্বনি বলে গণ্য করা যায় না। অন্তস্থ ব-এর উচ্চারণ (উঅ] অর্থাৎ, ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় দুই ঠোঁট গোলাকৃত হয়ে সংকুচিত হয় ও বাতাস বেরিয়ে যায়; কিন্তু কোথাও কোনো স্পর্শ ঘটে না। বাংলা ‘ধোওয়া’, ‘হাওয়া’ শব্দের উচ্চারণে ধ্বনিটি পাওয়া যায় অন্য দিকে অন্তস্থ য়-এর উচ্চারণ [ইঅ]। এখানেও জিভ শক্ত তালুর খুব কাছাকাছি আসে; কিন্তু তালুকে স্পর্শ করে না। ফলে শ্বাসবায়ু অতি সংকীর্ণ পথে বের হয়। অর্থাৎ এসব ধ্বনি উচ্চারণে ফুসফুস-আগত বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাধা পায় ঠিকই, কিন্তু সেই বাধা সৃষ্ট ধ্বনির মতো পর্যাপ্ত নয়। বাতাসের বাধার এই বৈচিত্র্যের কারণেই এগুলো স্বর ও ব্যঞ্জন উভয় ধ্বনির নিকটবর্তী। এসব ধ্বনিকে তরল ধ্বনি (lateral)-ও বলা হয়।

২.৩.৫ ঘোষ ও অঘোষ ব্যঞ্জন

আমাদের গলার মধ্যে একটি বাকপ্রত্যঙ্গ আছে। একে বলে স্বরযন্ত্র। স্বরযন্ত্রের ভেতরে আরও দুটি প্রত্যঙ্গ রয়েছে- স্বররদ্ধ ও স্বরতন্ত্র। কিছু বাধ্বনি উচ্চারণের সময় শেষের বাকপ্রত্যঙ্গটি, অর্থাৎ স্বরতন্ত্র কম্পিত হয়। স্বরতন্ত্রের কম্পনের ফলে উচ্চারিত ধ্বনিই হলো ঘোষ। স্বরধ্বনি সাধারণত ঘোষ হয়। কিন্তু ব্যঞ্জনধ্বনির ক্ষেত্রে কখনো-কখনো ব্যতিক্রম ঘটে। কিছু ব্যঞ্জন উচ্চারণে স্বরতন্ত্র কম্পিত হয়। এগুলো হলো ঘোষ ব্যঞ্জন আর যেগুলোর উচ্চারণে স্বরতন্ত্র কম্পিত হয় না, সেগুলো হলো অঘোষ ব্যঞ্জন।
স্বরতন্ত্রের কম্পন অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে এভাবে উল্লেখ করা যায়-

অঘোষ ধ্বনি ঘোষ ধ্বনি
ক, খ গ, ঘ
চ, ছ জ, ঝ
ট, ঠ ড, ঢ
ত, থ দ, ধ
প, ফ ব, ভ

স্বরযন্ত্র ও স্বরতন্ত্র
চিত্র: ২.১৯: স্বরযন্ত্র ও স্বরতন্ত্র

২.৩.৬ মহাপ্রাণ ও অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি

যে-ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে মুখ দিয়ে অধিক বাতাস বের হয় ও নিচের চোয়ালের মাংসপেশিতে বেশি চাপ পড়ে সেগুলোই হলো মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন। এজাতীয় ধ্বনিগুলোকে অনেকে ‘হ-কার জাতীয় ধ্বনি’ বলেছেন। মহাপ্রাণ ধ্বনির বিপরীত ধ্বনিগুলোই হলো অল্পপ্রাণ। অর্থাৎ এসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে কম বাতাস বের হয় এবং নিচের চোয়ালের মাংসপেশিতে কম পড়ে। পৃ এবং ফ ধ্বনি পরপর উচ্চারণ করলেই বোঝা যায় যে, পৃ উচ্চারণকালে মুখ দিয়ে কম বাতাস বের হয় ও নিচের মাংসপেশিতে কম চাপ পড়ে। এখন মুখগহ্বরের সামনে হাত রেখে ফ্ উচ্চারণ করলে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বাতাসের পরিমাণ আগের তুলনায় বেশি এবং নিচের চোয়ালের মাংসপেশিতে অধিক চাপ প্রয়োগ করতে হচ্ছে।

অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ
ক, গ খ,ঘ
চ, জ ছ,ঝ
ট, ড ঠ, ঢ
ত, দ থ, ধ
প, ব ফ, ভ

২.৪ বাংলা স্বরধ্বনির সংখ্যা

বাংলা ভাষায় মৌখিক স্বরধ্বনি সাতটি। এগুলো হলো: অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা। এই সাতটি স্বরেরই সাতটি অনুনাসিক উপলব্ধি বা রূপ আছে। এগুলো হলো অঁ, আঁ, ইঁ, উঁ, এঁ, ওঁ, অ্যাঁ। মনে রাখতে হবে যে, মৌখিক স্বরের অনুনাসিক উচ্চারণ করলে দুটি ভিন্ন অর্থবাহী শব্দ তৈরি হবে। যেমন- ‘বাধা’ ও ‘বাঁধা’।
বাংলা মৌখিক ও অনুনাসিক স্বরধ্বনি মিলে স্বরধ্বনি ১৪টি।

২.৪.১ স্বরবর্ণ

বাংলা স্বরবর্ণ ১১টি। এগুলো হলো:
অ আ 
ই ঈ 
উ উ 
ঋ 
এ ঐ 
ও ঔ 

এগুলোর কয়েকটি ধ্বনি নয়। আমরা আগেই বলেছি যে, বাংলায় কোনো দীর্ঘস্বর নেই। সে-হিসেবে ঈ, উ ধ্বনি নয়। একই কথা খাটে ঋ, ঐ, ঔ-এর বেলায়। ঋ বললে দুটি ধ্বনির উচ্চারণ আসে: র্ + ই (রি); অনুরূপভাবে ঐ-তে আসে ওই এবং ঔ-তে আসে ওউ। এগুলোকে বলা যায় দ্বৈতবর্ণ (degraph)। ঋ-তে একটি ব্যঞ্জন ও একটি স্বর এবং ঐ, ঔ-তে দুটি করে স্বর আছে। এসব বর্ণ ধ্বনির প্রতিনিধিত্ব না-করার কারণ কী? উত্তর খুব সহজ। ভাষা যেমন মানুষ একদিনে অর্জন করতে পারেনি, ভাষাকে লিখিত আকারে ধরে রাখার কৌশল আয়ত্ত করতেও মানুষের অনেক সময় লেগেছে। লেখার প্রয়োজনে একটি ধ্বনি বোঝানোর জন্য একাধিক বর্ণ উদ্ভাবন ও ব্যবহার করতে হয়েছে। তারপর দীর্ঘকাল ব্যবহারের মাধ্যমে লিখনব্যবস্থার সংস্কার করতে হয়েছে। বিশ্বে কোনো ভাষাতে ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে এক-এক বা সুষম সম্পর্ক নেই। আমরা যা বলি, লিখিত ভাষায় তা সেভাবে লেখা হয় না। আমাদের ভাষার অনেক শব্দ ও ভাষিক উপাদান সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এগুলোর পরিচয় যেমন ভিন্ন, তেমনি লেখার ব্যবস্থাও পৃথক। লেখার এ-বিধি এখনো পরিবর্তন করা যায়নি। তা সম্ভবও নয়। ইংরেজি, লাতিন গ্রিক, জার্মান ইত্যাদি ভাষার শব্দ ও ভাষিক উপাদান রয়েছে। ইংরেজিভাষীরা লিখনপদ্ধতি শেখার সময় সেগুলো মূল ভাষার বানানসহই শেখে এবং সেভাবে লেখে। আমাদেরও এগুলো জানতে হবে, শিখতে হবে সংস্কৃত শব্দগুলো এবং সেসব শব্দ লেখার নিয়মনীতি।

২.৫ কার ও ফলা

বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণের দুটি রূপ আছে- একটি পূর্ণরূপ, অন্যটি হলো সংক্ষিপ্তরূপ বা কার।

স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ
স্বরবর্ণ যখন স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন এর পূর্ণরূপ লেখা হয়। যেমন- অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ। স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ শব্দের শুরুতে, মাঝে, শেষে তিন অবস্থানেই থাকতে পারে। যেমন-
শব্দের শুরুতে : অলংকার, আকাশ, ইলিশ, উপকার, এলাচ, ঐক্য, ওল, ঔপন্যাসিক।
শব্দের মাঝে : কুরআন, বইচি, আউশ।
শব্দের শেষে : সেমাই, জামাই, বউ।

স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্তরূপ
স্বরধ্বনি যখন ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হয়, তখন স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা কার ব্যবহৃত হয়।
নিচে উদাহরণ দেওয়া হলো:


বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

প্রশ্ন থেকে

অভিনন্দন!
You Got out of answers correct!
That's


তথ্যসূত্র :
১. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি: ষষ্ঠ শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, ২০২৫।
২. আধুনিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, এপ্রিল, ২০১৮।
৩. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান: বাংলা একাডেমি, ১৮তম, ২০১৫।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url